Jayprakash Majumdar Exclusive Interview: কোথায় ‘অসুখ’? বঙ্গ বিজেপির গোপন তথ্য ফাঁস করলেন জয়প্রকাশ!

Jayprakash Majumdar Exclusive Interview: জয়প্রকাশের কথায়, এ রাজ্যে আক্রমণাত্মক হিন্দুত্ববাদকে পাথেয় করতে চেয়েছিল বিজেপি।

Jayprakash Majumdar Exclusive Interview: কোথায় 'অসুখ'? বঙ্গ বিজেপির গোপন তথ্য ফাঁস করলেন জয়প্রকাশ!
অকপট জয়প্রকাশ মজুমদার। নিজস্ব চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 13, 2022 | 9:21 AM

কলকাতা: একুশের বিধানসভা ভোটের পর থেকে নানা অভিযোগ উঠেছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে। স্বজনপোষণ থেকে সাংগঠনিক দুর্বলতা, অভিযোগের তালিকা থেকে বাদ যায়নি কিছুই। রাজ্যের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিজেপি ১০৮ পুরসভার একটিতেও জিততে না পারার কারণ হিসাবেও সংগঠনের দুর্বলতাকেই তুলে ধরেন দলীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ। সদ্য বিজেপি ছেড়ে বেরিয়ে আসা নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার টিভিনাইন বাংলার ‘কথাবার্তা’ অনুষ্ঠানে আলোকপাত করলেন সেইদিকেই। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরই জয়প্রকাশ বলেছিলেন, ‘দলটা (বিজেপি) অসুস্থ’। কোথায় সে অসুখ, এবার জানালেন তিনি।

কী কী বললেন জয়প্রকাশ মজুমদার-

  1. জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “বিজেপির অন্দরে ঘাত প্রতিঘাত বহুদিন ধরেই চলেছে। এটা শুরু হয়েছিল ২০১৯-এ লোকসভা ভোটের কিছুদিন পর থেকেই। বিজেপির মধ্যে নানা ঘটনাপ্রবাহ চলতে শুরু করে। আমি যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, আমার যে কোনও সিদ্ধান্ত আসে নানা পর্যালোচনার মধ্যে দিয়ে। সেই মতোই এগিয়েছি। বিজেপির অনেক কর্মী জানেনও না তাদের পঞ্চনিষ্ঠায় স্পষ্ট লেখা আছে গান্ধিয়ান ফিলোজফি মেনে চলবে। কিন্তু বাংলায় দেখলাম তা একেবারেই আলাদা। ২০১৯-এর পর ভাল করে বুঝতে পারলাম।”
  2. জয়প্রকাশ মজুমদার জানান, “বিজেপির পলিটিকাল এনালিসিস অ্যান্ড ফিডব্যাক বলে একটা বিভাগ আছে। কেন্দ্রেও আছে, সমস্ত রাজ্যেও আছে। এই রাজ্যে আমি একমাত্র সদস্য ছিলাম। ইনচার্জ অব পলিটিকাল ফিডব্যাক। আমি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ জানাতাম। যেভাবে আমরা বাংলাকে বুঝি সেটা যখন বলতাম দেখতাম সেটা বোঝার মতো লোক বা বুঝতে চাওয়ার মতো লোকের অভাব আছে। অনেক সময় যেদিকে যাওয়ার কথা উল্টোদিকে স্রোত বইছে তাও দেখেছি। তার ফলও পেয়েছে। পরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ মুখের কেউ কেউ স্বীকারও করেছে ‘তোমার কথাটাই ঠিক ছিল’। কিন্তু পরবর্তীকালে ভুল সংশোধনের কোনও জায়গা ছিল না। ২০২১ এর ভোটের আগে এটা চরমে ওঠে। যা যা আমি বলেছিলাম।”
  3. জয়প্রকাশের কথায়, এ রাজ্যে আক্রমণাত্মক হিন্দুত্ববাদকে পাথেয় করতে চেয়েছিল বিজেপি। তাঁর কথায়, “এখানে হঠাৎ জয় শ্রীরাম বলে কিছু মানুষের অভ্যর্থনা বা কিছু একটা হইচই হতে পারে। তবে মানুষের হৃদয় স্পর্শ করা যাবে না। হিন্দুত্ব তত্ত্বতে আমি এটাও বোঝাবার চেষ্টা করেছিলাম এখানকার বেশ কিছু মুসলমানের কাছেও, সংখ্যালঘুদের কাছেও এবং ৭০ শতাংশ হিন্দুদের মধ্যে বাড়ি বাড়ি রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, সারদা মায়ের ছবি থাকে। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। হিন্দু আমি, সেই অর্থে আমি আমার রাজনৈতিক অবস্থান বিচার করব, এরকম পশ্চিমবঙ্গে হয় না অন্তত। তাই অ্যাগ্রেসিভ হিন্দুজম চলে না। তা মানা হয়নি। ওরা মুসলমান আমরা হিন্দু এই রকম একটা বিভাজন। ওরা যদি ৩০ শতাংশ ভোট নেয়, আমরা কেন ৭০ শতাংশ পাব না। অঙ্কে তো তাই হওয়ার কথা। আমি বলেছিলাম, এভাবে অঙ্ক মিলবে না। সেটা মেলেওনি।”
  4. বাঙালি অস্মিতায় আঘাত দিয়েছে বিজেপি, জানালেন জয়প্রকাশ মজুমদার। তিনি বলেন, “২০২০ সাল থেকে আমি দেখলাম বিজেপি এখানে এসে বলছে বাংলার লোকেরা রাজনীতি বোঝে না, যা বুঝি আমরা বুঝি। এই যে একটা অদ্ভূত ধারণা হল, এটা অনেকটা কর্পোরেট কোম্পানির মালিকের কথা ভুল হলেও জি হুজুর করার মতো। যেহেতু কেন্দ্রীয় বিজেপির অফুরন্ত অর্থ এবং প্রতিপত্তি, তাই কেউ কিছু বলল না। আমি বলেছিলাম ফল খুব খারাপ হবে। ২০২১ -এর নির্বাচনে দেখেছেন কী হল!”
  5. জয়প্রকাশ মজুমদারের মত, তাঁকে নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিজেপি। তাই সাময়িক বরখাস্ত করে। জয়প্রকাশের কথায়, “একটা অস্বস্তি আমাকে নিয়ে ছিল। আমি দলের ভিতর যে কথাগুলো তুলেছি তার উত্তর এরা দিতে পারছিল না গত এক বছর বা তারও বেশি সময় ধরে। ২০২১ এর ভোটের মাস পাঁচ ছয় আগে হঠাৎ জেনারেল সেক্রেটারি সংগঠন সুব্রত চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়ে দেওয়া হল। আমি বলেছিলাম, এটা হঠকারী সিদ্ধান্ত হল। কারণ আমার মাথায় তখন দলের চিন্তা ছিল। সামনে ভোট। আমাকে একজন বলেছিলেন, সে সময় তিনি আরএসএসের পশ্চিমবঙ্গ অঞ্চলের কর্তা, ‘কুছ নেহি হোগা, মুকুল সামাল দেগা’। পরের ছবি তো সকলে দেখেছে।”
  6. একুশের ফল প্রকাশের দিন কী ছিল হেস্টিংসে বিজেপির কার্যালয়ের ছবিটা, সেটাও তুলে ধরেন জয়প্রকাশ মজুমদার। বলেন, “২ মে ২০২১। পার্টি ৭৭-এ আটকে গেল। সেদিন বেলা সাড়ে ১২টা ১টা বাজে তখন। হেস্টিংস অফিস খালি হয়ে গেল। সেদিন ১২টা নাগাদ হেস্টিংসের অফিস থেকে কৈলাসজীর গাড়ি বেরোচ্ছিল। যাওয়ার আগে সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘মমতাজী কো ম্যায় বাধাই দেতা হু জিত কে লিয়ে’। ভোটে কোনও কেন্দ্রে ২২ রাউন্ড, কোথাও ২৩ রাউন্ড গণনা হয়েছে। অথচ ৪-৫ রাউন্ড গণনার পর, যেখানে গণনাকেন্দ্রে দলের কর্মীরা বসে, তাঁদের নেতা হার স্বীকার করে চলে গেলেন দিল্লির দিকে। তারা কী ভাবে ওখানে থাকবে!”
  7. এখন ক্লাবের মতো বিজেপি চলছে বলে মনে করেন জয়প্রকাশ মজুমদার। তিনি বলেন, “আমার মনে প্রশ্ন এসেছে, সত্যি কি কেন্দ্রীয় বিজেপি বাংলায় কোনওরকম মিনিংফুল পলিটিকাল অ্যাক্টিভিটি করতে চায়? আমি কোনও উত্তর পেলাম না ভেবে। যদি এরা বি টিম হিসাবে কাজ করতে চায়, আমি বি টিমে থাকব কেন, এ টিমে যাব। আমার সে যোগ্যতা আছে। দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছি, চিন্তা করার ক্ষমতা আছে। আমি বিশ্বাস করি রাজনীতিতে অভিজ্ঞতার কোনও বিকল্প নেই।”
  8. ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ নিয়ে এর আগে বহুবার সরব হয়েছেন জয়প্রকাশ মজুমদার। তখন তিনি বিজেপিতে ছিলেন। কিন্তু তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর জয়প্রকাশ মজুমদারের বক্তব্য, “রাজনীতির সঙ্গে হিংসার একটা বিয়ে হয়েছিল, তার ডিভোর্স আর হয়নি। সুখী দম্পতির মতো রাজনীতি আর হিংসা একসঙ্গে বাস করছে। নকশাল পিরিয়ড থেকে চলছে। এটা কোনও একটা দল করে এমন নয়। গ্রামে গেলে দেখবেন, দলমত নির্বিশেষে এটার একটা জায়গা সবসময় আছে।