Atmospheric river: ‘উড়ন্ত নদী’-তে হাবুডুবু খাচ্ছে বাংলাদেশ, এবার উড়ে এসে ভাসাবে কলকাতাকে? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

Atmospheric river: ভারী বৃষ্টির পর ভয়াবহ বন্যা। বাড়িঘর হারিয়ে দিশেহারা হাজার হাজার মানুষ। আশ্রয় শিবিরেও মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। এত বৃষ্টি কেন হচ্ছে? কী এই 'উড়ন্ত নদী'? এর রুদ্রমূর্তির মোকাবিলা করার উপায় কী? পড়ুন টিভি৯ বাংলার বিশেষ প্রতিবেদন...

Atmospheric river: 'উড়ন্ত নদী'-তে হাবুডুবু খাচ্ছে বাংলাদেশ, এবার উড়ে এসে ভাসাবে কলকাতাকে? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
বাংলা কতটা প্রভাবিত হবে 'উড়ন্ত নদী'-র রুদ্রমূর্তিতে? গ্রাফিক্স-অভিজিৎ বিশ্বাস
Follow Us:
| Updated on: Sep 01, 2024 | 1:32 PM

কলকাতা: প্রবল বৃষ্টি। বজ্রপাত। বিপর্যস্ত বৃন্দাবন। দ্বাপর যুগে বৃন্দাবনবাসীর সেই বিপর্যস্তের ছবি তুলে ধরা হয়েছে পুরাণে। কিন্তু, এত বৃষ্টির কারণ কী? পুরাণ অনুসারে, বালক শ্রীকৃষ্ণের কথায় দেবরাজ ইন্দ্রের পুজো বন্ধ করায় রেগে গিয়ে তিনি বৃন্দাবনে প্রবল বৃষ্টি শুরু করেন। সে তো পুরাণের কথা। বর্তমান যুগে প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে একাধিক এলাকা। আশ্রয় হারিয়েছেন মানুষ। কিন্তু, এত বৃষ্টি কেন হচ্ছে? উড়ন্ত নদী বা বায়ুমণ্ডলীয় নদী কী? উড়ন্ত নদীর এই রুদ্রমূর্তি আটকানো যাবে কীভাবে? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

বন্যায় বাড়িঘর হারিয়ে দিশেহারা হাজার হাজার মানুষ। আশ্রয় শিবিরেও মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এই ছবি দেখা গিয়েছে। সাম্প্রতিক উদাহরণ বাংলাদেশ, চিন এবং কানাডা। গত বছরের এপ্রিলে ইরাক, ইরান, কুয়েত এবং জর্ডনও ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত হয়েছে। অতি মাত্রায় বৃষ্টির জেরে এই ভয়াবহ বন্যা। চিলিতে মাত্র তিন দিনে ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। তার জেরে ভয়াবহ বন্যায় ভেসে যায় সেখানকার রাস্তাঘাট। অতিমাত্রায় বৃষ্টিতে বন্যা হয়েছে অস্ট্রেলিয়াতেও। আর গত কয়েকদিন অতি মাত্রায় বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত গুজরাট। বৃষ্টির জেরে বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ জনের মতো। ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত ত্রিপুরার একটা বড় অংশ। আর এই অতি মাত্রার বৃষ্টির পিছনে উঠে আসছে ‘উড়ন্ত নদী’ বা ‘বায়ুমণ্ডলীয় নদী’-র কথা।

বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ

‘উড়ন্ত নদী’ কী?

এই খবরটিও পড়ুন

আবহবিদরা বলছেন, দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠছে বায়ুমণ্ডল। আর এই উষ্ণ বায়ুমণ্ডল আগের তুলনায় অনেক বেশি আর্দ্রতা ধারণ করছে। আর এর ফলেই উড়ন্ত নদী বা বায়ুমণ্ডলীয় নদীর রূপ ধারণ করছে। উড়ন্ত নদী হল ভূপৃষ্ঠ থেকে বায়ুমণ্ডল পর্যন্ত লম্বা ও প্রশস্ত জলীয় বাষ্পের স্তম্ভ। যার উদ্ভব হয় সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে। পরে তারা ঠান্ডা মেরু অঞ্চলের দিকে সরে যেতে থাকে।

এই উড়ন্ত নদীগুলো পৃথিবীর মধ্য-অক্ষাংশে থাকা জলীয় বাষ্পের প্রায় ৯০ শতাংশ বহন করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, একটি বায়ুমণ্ডলীয় নদী গড়ে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ। ৫০০ মিটার প্রশস্ত। এবং প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার গভীর হয়ে থাকে। চমকে দেওয়ার মতো তথ্য। মানবজাতিকে সতর্ক করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, অনেক সময় বায়ুমণ্ডলীয় নদী পাঁচ হাজার কিলোমিটারের চেয়েও বেশি দীর্ঘ হয়। আর এই নদীগুলো ক্রমশ দীর্ঘ ও প্রশস্ত হচ্ছে। বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলি পৃথিবীর নতুন নতুন অঞ্চলে পৌঁছে যাচ্ছে।

তবে খালি চোখে এই বায়ুমণ্ডলীয় নদী দেখা যায় না। মানুষ শুধু দেখে কিছু পুঞ্জিভূত মেঘ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই নদীর অস্তিত্ব ইনফ্রারেড এবং মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি দিয়ে দেখা যেতে পারে। এই কারণে বিশ্বজুড়ে জলীয় বাষ্প ও বায়ুমণ্ডলীয় নদী পর্যবেক্ষণে স্যাটেলাইট কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে।

উড়ন্ত নদীর প্রভাব বাড়ছে কেন? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

বায়ুমণ্ডলীয় নদী সবসময়ই ছিল। কিন্তু, বিশ্বের গড় উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি জলীয় বাষ্প তৈরি হচ্ছে। বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলির রুদ্রমূর্তি ধারণের জন্য মানবসমাজকেই কাঠগড়ায় তুললেন ভূগোলের অধ্যাপিকা তথা যাদবপুরের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু। তিনি বলেন, “জলবায়ুর মধ্যে বিরাট পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। যেটার প্রধান কারণ উষ্ণায়ন। কলকারখানা, যান বাহন বৃদ্ধির ফলে উষ্ণায়ন বেড়েছে। আমরা যত উন্নত হচ্ছি, তার প্রভাব পড়ছে পরিবেশে। পৃথিবীর উষ্ণতা বেড়ে চলেছে। সমুদ্রের জল যখন উষ্ণ হয়ে উঠে, তখন বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলিতে জমা হয়।”

বাংলা কতটা প্রভাবিত হতে পারে উড়ন্ত নদীর রুদ্রমূর্তিতে-

সমুদ্রের কাছাকাছি থাকা দেশগুলিতে বেশি প্রভাব ফেলে উড়ন্ত নদী। এই উড়ন্ত নদীর রুদ্রমূর্তিতে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ। পদ্মাপারের দেশ থেকে উড়ে এসে কি বাংলায় তাণ্ডব চালাবে উড়ন্ত নদী? ভাসাবে কলকাতাকে? বঙ্গোপসাগর থেকে কলকাতা বেশি দূরে নয়। ঘূর্ণিঝড় থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, বাংলাদেশের পাশাপাশি অনেক সময় বাংলার উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে প্রভাব ফেলে। সেইরকম উড়ন্ত নদীর প্রভাব কি পড়বে কলকাতায়? আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা।

উড়ন্ত নদীর রুদ্রমূর্তির মোকাবিলা-

১৯৪০ সাল থেকে বায়ুমণ্ডলীয় নদী উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। অধ্যাপিকা স্নেহমঞ্জু বসু বলছেন, বৃষ্টি এভাবে বাড়তে থাকলে অনেক প্রজাতির জীবন বিপন্ন হবে। তিনি বলেন, উষ্ণায়ন রোধে মানুষ সচেতন না হলে জলীয় বাষ্প আরও বেশি করে জমা হতে থাকবে বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলিতে। তখন আরও বৃষ্টি হবে। আর এর প্রকোপ বাড়বে। জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমিয়ে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করলে উষ্ণায়নের মোকাবিলা করা যাবে। মানুষের জীবনযাত্রারও পরিবর্তন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত গুজরাট

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বায়ুমণ্ডলীয় নদী দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করছে। সমুদ্রের কাছাকাছি যেসব দেশ রয়েছে এবং ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থানকারী দেশগুলিতে এই ধরনের বৃষ্টিপাত বেশি হয় বলে অধ্যাপিকা স্নেহমঞ্জু বসু বলেন। ‘উড়ন্ত নদীর’ প্রকোপে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধস হচ্ছে। যদিও সব বন্যা ও ভূমিধস বায়ুমণ্ডলীয় নদীর কারণে হয় না। ঘূর্ণিঝড়, আবহাওয়া নানা কারণে হতে পারে।

সব বায়ুমণ্ডলীয় নদী ক্ষতিকর নয়। বিশেষ করে যেসব উড়ন্ত নদীর তীব্রতা কম হয়। আবার দীর্ঘস্থায়ী খরা রয়েছে এমন এলাকায় বায়ুমণ্ডলীয় নদী উপকারী হতে পারে।

বায়ুমণ্ডলীয় নদীর জন্য বাড়ছে ভারী বৃষ্টির পরিমাণ

পুরাণ বলছে, বৃন্দাবনবাসীকে বাঁচাতে গোবর্ধন পর্বতের আশ্রয় নিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। নিজের বাম হাতের কড়ে আঙুল দিয়ে গোবর্ধন পর্বতকে তুলে ধরেছিলেন। তারই নিচে আশ্রয় নেন বৃন্দাবনবাসী। আর এ যুগে এই উড়ন্ত নদীর রুদ্রমূর্তির হাত থেকে রক্ষা পেতে সচেতন হতে হবে মানুষকেই। উষ্ণায়নের প্রকোপ না কমাতে পারলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো আরও বৃষ্টি ভাসিয়ে নিয়ে যাবে একাধিক এলাকাকে। মানুষের সচেতনতার উপরই নির্ভর করছে উড়ন্ত নদীর ভবিষ্যৎ।

আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)