Mamata Banerjee on Mukul Roy: তৃণমূলে ‘মুকুলিত’ অস্বস্তি? কুণালকে ‘বিশেষ বার্তা’ সুপ্রিমোর
Kolkata: শনিবারের বৈঠকে এক শীর্ষ নেতা মুকুল রায় প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। মুকুল রায় প্রসঙ্গে দলের ভাবনা কী তাও জানতে চান ওই নেতা।
কলকাতা: মুকুল রায় কে? তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় বর্তমানে কী? রাজনৈতিক মহলে কেবল নয় তৃণমূলের অন্দরেও বোধহয় এটিই একটি বড় প্রশ্ন। সূত্রের খবর, শনিবার কালীঘাটের বাড়িতে খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। এমনকী, দলেরই রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জবাব দিতে হয়েছে বলেই খবর। সম্প্রতি সাংবাদিক বৈঠকে কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, “মুকুল রায় চূড়ান্ত কুৎসা করেছেন দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সোম, বুধ, শুক্র বিজেপি করেছে। ও একটি সেয়ানা পাগল। শৃঙ্খলাবদ্ধ সৈনিকের মতো মুখে সেলোটেপ লাগিয়ে বসেছি। আমি তৃণমূলের বিরুদ্ধে কিছু বলছি না।” সাংবাদিক বৈঠকে এভাবে দলীয় নেতার বক্তব্যে কার্যত শোরগোল পড়ে যায়। কুণাল আরও দাবি করেছেন, তদন্তকারীদের হাত থেকে বাঁচতেই মুকুল বিভিন্ন সময়ে শিবির বদল করেছেন। কুণালের মতো একজন আদি নেতার এ হেন মন্তব্যে বেশ স্পষ্ট, দলের অন্দরেও মুকুল রায়কে নিয়ে এখনও অস্বস্তি কাটেনি।
শোনা যাচ্ছে, শনিবারের বৈঠকে এক শীর্ষ নেতা মুকুল রায় প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। মুকুল রায় প্রসঙ্গে দলের ভাবনা কী তাও জানতে চান ওই নেতা। এরপর, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের এক বরিষ্ঠ নেতাকে নির্দেশ দেন কুণালের মন্তব্য নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে। একই সঙ্গে এটাও বলেন মুকুল ও কুণালের মধ্যের পারস্পরিক বিভেদ যেন মিটে যায়। শুধু তাই নয়, মুকুলের বিরুদ্ধে কুণালের মন্তব্য কোনওভাবেই দলগত নয়, বরং ব্যক্তিগত এমনটাই নাকি জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। ফলে, বেশ স্পষ্ট, কুণালের এ হেন মন্তব্যে অস্বস্তি এড়াতে পারছে না তৃণমূল। নেত্রী বারবার সতর্ক করেছেন দলের বিষয়ে কোনও বিরূপ মন্তব্য প্রকাশ্যে করা যাবে না। কিন্তু, তারপরেও দলের আদি নেতারাই বিভিন্ন সময়েই সে সতর্কবাণী মানতে পারেননি। ব্যক্তিগত ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে বাইরে।
কুণালও তার ব্যতিক্রম নন। স্পষ্টতই তিনিও বলে বসেন, “আমি মনে করি মুকুল রায়কে সারদা-নারদা মামলায় গ্রেফতার করে তদন্ত হোক। আদালত যেতে হয়নি মাঝে৷ এখন যেতে হচ্ছে। আমি আদালতে মামলা মাথা উঁচু করে লড়ছি। আমার রাগ হয়েছে। আমি তাই সিবিআই, ইডিকে বলেছি চিঠি দিয়ে। ও তো বিজেপি৷ উনি বিভ্রান্ত করছেন। উনি বিজেপি বিরোধিতা করেননি।”
বস্তুত, দীর্ঘদিনের রাজনীতিক মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে সারদা ও নারদ মামলায় নাম জড়িয়েছিল। সেই সময় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা তাঁকে ডেকেও পাঠিয়েছিল। তার পরপরই জার্সি বদলে বিজেপিতে নাম লেখান মুকুল। এরপর কেটে যায় অনেকগুলো বছর। তারমধ্যে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর উত্তর থেকে বিজেপির তরফে বিধায়কের আসন জয়লাভ করেন। একুশের নির্বাচনী সময় থেকেই কার্যত মুকুল রায়কে কিছুটা ‘সরে’ থাকতে দেখা যায়।
বিধানসভা নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে তৃণমূল ভবনে দেখা গিয়েছিল মুকুল রায়কে। সেদিন তৃণমূল ভবনের কর্মসূচিতে ছিলেন দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিনের অনুষ্ঠানে ছেলে শুভ্রাংশুকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন মুকুল। মুকুল রায়ের গলায় উত্তরীয় পরিয়ে তাঁকে উষ্ণ অভিবাদন জানিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন থেকেই জল্পনা ছড়িয়েছিল, তিনি হয়ত বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু বিধানসভায় মুকুল মামলার সিদ্ধান্তে জানিয়ে দেওয়া হয় – মুকুল দল বদলাননি, তিনি বিজেপিতেই রয়েছেন।
সাম্প্রতিক অতীতে একাধিকবার মুকুল রায়কে এমন কিছু কথা বলতে শোনা গিয়েছে, যা আপাতভাবে বেশ অসংলগ্ন বলেই মনে হয়। এমনকী মুকুলের ছেলে শুভ্রাংশু রায়ও জানিয়েছিলেন, তাঁর বাবা শারীরিকভাবে অসুস্থ, সেই কারণেই এই ধরনের কথা বলছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বস্তুত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েক ‘একদা গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বস্ত সৈনিক’ মুকুল রায়কে মেনে নিতে রাজি নয় দল। এদিকে, তাঁর তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন করা নিয়ে কোনও বিরুদ্ধাচারণ করেননি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এমনকি, বিধানসভায় পিএসসির চেয়ারম্যান পদেও বিজেপি বিধায়ক হিসেবেই মুকুল রায়কে নিয়োগ করে সরকার। যে পদ আদতে বিরোধী শিবিরের পাওয়ার কথা সেই পদ সদ্য় দলে ফেরা মুকুলকে দেওয়া হয়। তকমা দেওয়া হয় তিনি বিজেপি বিধায়ক।
এদিকে মুকুল রায় যখন প্রথম বিজেপিতে গিয়েছিলেন তখন তাঁর বিরুদ্ধে কার্যত কটাক্ষ হেনেছিলেন তৎকালীন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বলেছিলেন মুকুল রায় ‘চাটনি নেতা’। কৈলাস বিজয়বর্গীয়র হাত ধরে বিজেপির নিজের একটি পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে পারলেও দিলীপ গোষ্ঠীকে অতিক্রম করতে পারেননি মুকুল। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তা বেশ ভালভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সপুত্র তৃণমূলে যোগদানের নেপথ্যে মুকুলের কিছু রাজনৈতিক ‘আশা’ও থাকতে পারে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ। কিন্তু, কার্যত দেখা যায় তাঁর সে আশা পূরণ হয়নি। তৃণমূলেও তিনি এখনও দলে রয়েছেন কিন্তু বিজেপি বিধায়কও। ফলে, সর্বাধিক এই মুহূর্তে মুকুল রায় ভুগছেন ‘রাজনৈতিক অস্তিত্ব সংকটে’ আর সেই সময়েই নিজের ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন কুণাল, অন্তত এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকদের একাংশ।
আরও পড়ুন: তৃণমূলের সোশ্যাল মাধ্যমে ‘ভ্যানিশ’ পুরভোটের ‘বিতর্কিত’ প্রথম প্রার্থী তালিকা!
বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা
বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা