বাংলায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট’, কতটা ভয়ঙ্কর এই ‘বেঙ্গল স্ট্রেন’?

এই স্ট্রেনর ওপর ভ্যাকসিন কাজ করবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে বাংলাতেই এই ভ্যারিয়ান্ট ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত

বাংলায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে 'ট্রিপল মিউট্যান্ট', কতটা ভয়ঙ্কর এই 'বেঙ্গল স্ট্রেন'?
ভাইরাসের এই রূপ নিয়েও রয়েছে উদ্বেগ
Follow Us:
| Updated on: Apr 23, 2021 | 7:12 AM

কলকাতা: করোনা ভাইরাসে (Corona virus) কার্যত কাবু গোটা দেশ। এই মুহূর্তে বিশ্বের মধ্যে সংক্রমণে রেকর্ড গড়ছে ভারত। প্রত্যেকদিন আক্রান্ত হচ্ছে লক্ষাধিক মানুষ। এই পরিস্থিতিতে নতুন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বাংলায় ছড়িয়ে পড়া করোনার নয়া স্ট্রেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন সেই স্ট্রেন নাকি ট্রিপল মিউট্যান্ট (triple mutant) অর্থাৎ তিনটি মিউটেশন হয়ে জন্ম হয়েছে ভাইরাসের এই নতুন রূপ। আর তাতেই নাকি বাংলা জুড়ে হু হু করে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ।

মূলত পশ্চিমবঙ্গে এই স্ট্রেন দেখা যাচ্ছে। তাই একে ‘বেঙ্গল স্ট্রেন’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও শুধুমাত্র বাংলা নয়, দিল্লি এবং মহারাষ্ট্রেও ভাইরাসের এই ভয়ঙ্কর চেহারার দেখা মিলছে বলে জানা গিয়েছে। ওই স্ট্রেনের ওপর ভ্যাকসিন কতটা কার্যকরী তা এখনও স্পষ্ট নয়, তবে এই ভ্যারিয়ান্টে রয়েছে E484K মিউটেশন, আর সেটাই ভাবাচ্ছে গবেষকদের। জানা যাচ্ছে এই মিউট্যান্ট সহজেই দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেদ করতে পারে, আর তাতেই প্রশ্ন উঠছে ভ্যাকসিন এর কার্যকারিতা নিয়ে।

কি এই ট্রিপল মিউট্যান্ট ভারিয়ান্ট?

নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে যে এতে রয়েছে তিনটি মিউটেশন। এতে দুটি মিউটেশন বাদ গিয়েছে ও দুটি পরিবর্তন হয়েছে। বাদ গিয়েছে H 146, Y 145. আর পরিবর্তন হয়েছে দুটি মিউটেশনে E484K ও D614G। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হচ্ছে B.1.618. মূলত এ রাজ্যে এটি ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে।

এই বিষয়ে দিল্লির ‘কাউন্সিল অফ সাইন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউটে’র বিশেষজ্ঞ বিনোদ স্কারিয়া একটি টুইট করেছেন। সেখানে তিনি জানিয়েছেন গত বছরের ২৫ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের এক রোগীর শরীরে প্রথম এই মিউট্যান্ট ধরা পড়েছিল, আর সম্প্রতি গত ১৬ ই মার্চ সেই স্ট্রেন ধরা পড়ে বাংলায়। আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড ও ফিনল্যান্ডেও পাওয়া গিয়েছে সেই স্ট্রেন।

কতটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এই স্ট্রেন?

বিনোদ স্কারিয়া জানিয়েছেন, এই স্ট্রেন সম্পর্কে এখনো অনেক বেশি গবেষণার দরকার রয়েছে। এখনও এটি অচেনা। তবে বাংলায় যে এটি অনেক বেশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সে কথা জানিয়েছেন তিনি। একটি রিপোর্ট বলছে বাংলায় যত পরিমাণ সংক্রমণের হদিশ মিলেছে তার মধ্যে ১৫ শতাংশেই এই ভ্যারিয়ান্ট রয়েছে।

কেন ভয়ঙ্কর এই ভ্যারিয়ান্ট?

এখন‌ও পর্যন্ত পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি এই বিষয়ে। কিন্তু প্রাথমিক গবেষণা থেকে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এটি অন্যান্য ভ্যারিয়ান্টের থেকে অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাত্কার দিতে গিয়ে ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির এপিডেমোলোজির অধ্যাপক ডক্টর মধুকর পাই জানিয়েছেন, এটি অনেক দ্রুত মানুষকে সংক্রামিত করতে পারে। খুব দ্রুত মানুষ এতে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তবে এই সংক্রমণ একাধিকবার হতে পারে কিনা, ভ্যাকসিন এর ওপর কার্যকর কিনা, তা নিয়ে আরও বেশি গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুন: ঝড়ে আম নয়, বাদুড় কুড়াতে দৌড়! করোনা আবহে টোটকায় ব্যতিব্যস্ত বন দফতর

এর আগে এই ভ্যারিয়ান্ট ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ভাইরাসে পাওয়া গিয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, আগে অন্য কোনও স্ট্রেন দ্বারা সংক্রামিত হলেও ফের নতুন করে এই ট্রেনে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তবে বাংলায় সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই স্ট্রেনের ভূমিকা কতটা তা বলার সময় এখনও আসেনি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বৃহস্পতিবারের রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় বাংলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১২ হাজার।