ঝড়ে আম নয়, বাদুড় কুড়াতে দৌড়! করোনা আবহে টোটকায় ব্যতিব্যস্ত বন দফতর
রও কারও টিপ্পনি, আসলে বিষে বিষক্ষয়। চিনা করোনাভাইরাস তাড়াতে নিপা ভাইরাস ছড়িয়েছিল যার মাংসে, তাকেই বেছে নিচ্ছেন এলাকাবাসী।
জলপাইগুড়ি: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্তদের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। এদিকে অতিমারি আবহে শরীর ভালো রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তেমনি অতিমারির আতঙ্কের জাঁকিয়ে বসেছে নানা রকম কুসংস্কার ও টোটকা। যেমন বাদুড়ের মাংস খেলে নাকি হাঁপানি কমে! এই বিশ্বাসে ঝড়ে মরে যাওয়া বাদুড় কুড়োতে গিয়ে হুলুস্থুল বাঁধালেন জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশন সংলগ্ন অশোক নগর এলাকার বহু মানুষ।
এদিকে এই বাদুড় শিকারের খবর পেয়ে দ্রুত অকূস্থলে পৌঁছলেন বন দফতরের কর্মীরা। জখম হওয়া বাদুড়গুলিকে উদ্ধার করে দ্রুত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হল গরুমারা প্রকৃতি বিক্ষণ কেন্দ্রে। তার পর শুরু হল এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচার।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কালবৈশাখী তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জলপাইগুড়িতে। ঝড়ে ভেঙেছে প্রচুর গাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একাধিক বাড়ি। বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন হয়ে পড়ে জলপাইগুড়ি শহরের বেশ কিছু এলাকা। আর এর মধ্যেই একটি অন্যরকম ঘটনা ঘটল জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশন সংলগ্ন অশোক নগর এলাকায়। ওই এলাকার রেলের জমির উপর একটি ইউক্যালিপটাস বাগান রয়েছে। সেই বাগানের কয়েক হাজার বাদুড়ের বাস। স্থানীয় সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার বেলার দিকে আছড়ে পড়া ঝড়ে গাছ থেকে মাটিতে পড়ে যায় শতাধিক বাদুড়। আর সেই খবর পেয়ে ছুটে আসেন আশেপাশের লোকজন। ঝড়ে আম কুড়ানোর মতো কুড়োতে থাকেন জখম বাদুড়। তাঁদের ধারণা, বাদুড়ের মাংস খেলে নাকি হাঁপানি কমে যায়। আর এই করোনা আবহে এর চেয়ে ভাল খাবার আর কী হতে পারে!
এদিকে স্থানীয়দের মধ্যে কয়েকজন বাধা দিলেও তা কানে তোলেননি তাঁরা। পরিস্থিতি দেখে তাঁদের মধ্যে কেউ খবর দেন বন দফতরে। ছুটে যান গরুমারা ওয়াইল্ড লাইফ ডিভিশনের এডিএফও। বন কর্মীদের দেখে মুহূর্তের মধ্যে উধাও হন বাদুড় শিকারীরা। বন দফতর সূত্রে খবর, ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৩০টি বাদুড়কে উদ্ধার করে গরুমারা প্রকৃতি বিক্ষণ কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনায় গরুমারা ওয়াইল্ড লাইফ ডিভিশনের সহকারী বনাধিকারিক জন্মেজয় পাল জানান, যে বাদুড়গুলিকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে সুস্থ হয়ে ওঠার পর পুনরায় তাদের আগের বাসস্থানেই ফিরিয়ে দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে বাদুড় শিকারের ঘটনার নিন্দা করেছে বন দফতর। এমনিতে বাদুড় শিকার শাস্তি যোগ্য অপরাধ। তাছাড়া বাদুড়ের মাংসে যে কোনও রোগ সারে না সেকথা মনে করিয়ে দিয়ে সহকারী বনাধিকারিক জানান, ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্য এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচার চালাবেন তারা।
আরও পড়ুন: মাস্ক না খুললে ললিপপ খাব কীভাবে? যুবকের যুক্তিতে হতভম্ব মহাকুমা শাসক
এই দেখে কারও কারও টিপ্পনি, আসলে বিষে বিষক্ষয়। চিনা করোনাভাইরাস তাড়াতে নিপা ভাইরাস ছড়িয়েছিল যার মাংসে, তাকেই বেছে নিচ্ছেন এলাকাবাসী।