Garden Reach: বাবার ঘাড়ে খুনের দায়, বিলাসিতায় বুঁদ থেকেও ৯৯ শতাংশ ভোট! ববি ঘনিষ্ঠ গার্ডেনরিচের কাউন্সিলরের আসল পরিচয় জানেন?
Garden Reach: এই কাউন্সিলরের নাম অন্য আরেকটি বিষয়ে আগেও উঠে এসেছে। ২০২২ সালে আমির খান নামে এক যুবককে ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে গ্রেফতার করা হয় বিপুল অর্থ-সহ। ইডি গ্রেফতার করে। গেমিং অ্যাপ প্রতারণায়।
কলকাতা: গার্ডেনরিচের একটা এত বড় অঘটন। নির্মীয়মাণ বিল্ডিং ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। এই সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গার্ডেনরিচের একাধিক অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এলাকার কাউন্সিলর, এমনকি মেয়রের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু ঘটনার পর দুর্ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই এলাকার কাউন্সিলর শামল ইকবালের পক্ষেই সওয়াল তুলেছেন খোদ মেয়র ফিরহাদ হাকিম। এমনকি TV9 বাংলার একান্ত সাক্ষাৎকারেও কাউন্সিলরের পক্ষেই সওয়াল করেছেন মেয়র। সাফ বলেছেন, “অবৈধ নির্মাণ দেখার কাজ কাউন্সিলরের নয়।” সেক্ষেত্রে পুর ইঞ্জিনিয়ারদের ঘাড়েই দোষ ঠেলেছেন তিনি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যাঁর মাথার ওপর হাত রাখছেন ফিরহাদ, কে সেই কাউন্সিলর?
নাম শামস (অনিল) ইকবাল। ২০১৫ সাল থেকে তৃণমূলের ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রয়েছেন তিনি। শামশের বাবা মুন্না বা মহম্মদ ইকবালের নাম জড়িয়েছিল একটি বড় কেসে। পুলিশ সূত্রে খবর, গার্ডেনরিচে পুলিশ কর্মী তাপস চৌধুরী খুনকাণ্ডে অভিযুক্ত হন মুন্না ইকবাল। মুন্না ইকবালও তৃণমূলের কাউন্সিলর ছিলেন। একইসঙ্গে ছিলেন ১৫ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান। গুলি কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ার পর কাউন্সিলর হন শামস ইকবাল।
কাউন্সিলর হওয়ার পর কলকাতা পুরসভায় কোটি টাকা মূল্যের ফেরারি গাড়ি এনে চরম বিতর্কে পড়েছিলেন শামস। কিন্তু তারপরেও কোনওরকম হুঁশ ফেরেনি ওই কাউন্সিলরের। স্থানীয় বাসিন্দাদেরই একাংশের বক্তব্য, বিলাসবহুল জীবনযাপন করাই ওই কাউন্সিলরের জীবনের অন্যতম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।
বিরোধীরাই অভিযোগ করছেন, কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলর হওয়ায় নিজের ওয়ার্ডে যথেচ্ছ মনোভাব নিয়ে চলতে থাকেন শামস। সূত্রের খবর, কলকাতা পুরসভার ‘টক টু মেয়রে’ একাধিক বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত অভিযোগ আসে। যার মধ্যে গার্ডেনরিচ এলাকার এই ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের সব থেকে বেশি। কিন্তু এরপরেও মেয়র কেন কোনও পদক্ষেপ করেননি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। ফিরহাদ হাকিম অবশ্য TV9 বাংলায় স্বীকার করে নিয়েছেন, “আমরা এখনও একশো শতাংশ অবৈধ নির্মাণ বন্ধ করতে পারছি না, এটা ঠিক। এর আগেও এমন ঘটনা কলকাতায় হয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক আমার সময়েও হল।” কিন্তু কেন আটকাতে পারেননি অবৈধ নির্মাণ? ফিরহাদ বললেন, “বেশিরভাগ বেআইনি নির্মাণ বাম আমলেই হয়েছে। তবে এখনও সমস্যা হচ্ছে, ওই এলাকায় গরিব মানুষ ঢুকে গিয়েছেন। অল্প পয়সার ফ্ল্যাট কিনে রয়েছে। এখন উচ্ছেদটাও সমস্যার হয়ে গিয়েছে। গরিবমানুষগুলো অল্প টাকায় ঘর কিনে রয়েছে। আমি তাই আমার বিল্ডিং ডিপার্টমেন্টকে বলি, যখন শুরু হচ্ছে, তখনই অ্যাকশন নিন।”
তবে এই কাউন্সিলরের নাম অন্য আরেকটি বিষয়ে আগেও উঠে এসেছে। ২০২২ সালে আমির খান নামে এক যুবক ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে গ্রেফতার করা হয় বিপুল অর্থ-সহ। ইডি গ্রেফতার করে। গেমিং অ্যাপ প্রতারণায়। সেই আমিরের সঙ্গেও শামসের যোগাযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
গত পুরসভা ভোটে শামস ইকবাল ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৯৮.২৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। যা সমস্ত কাউন্সিলরের মধ্যে সর্বোচ্চ। কলকাতা পুরসভায় লাল রংয়ের অ্যাস্টন মার্টিন গাড়ি চালিয়ে এসে খবরের শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। যদিও গার্ডেনরিচের গোটা ঘটনার প্রেক্ষিতে কাউন্সিলর শামস সম্পর্কে ফিরহাদের বক্তব্য, “”কলকাতা পৌরসভার এক একজন কাউন্সিলরের এরিয়া যত বড় থাকে, তাঁর পক্ষে প্রত্যেক এলাকায় যাওয়া সম্ভব হয় না। কোন বাড়ি বৈধ, কোনটা অবৈধ, সেটা কাউন্সিলর দেখবেন না। আর তাঁর রাইটও নেই প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ করবে।”