ধর্মান্তকরণ বিরোধী আইনের একমাস: কেমন সাড়া?
দায়ের করা ১৪টি মামলার মধ্যে ১৩টি মামলাতেই হিন্দু মহিলাকে জোর করে মুসলিম ধর্মগ্রহণ করানো হয়েছে। কেবলমাত্র দুটি মামলার ক্ষেত্রে নির্যাতিতা মহিলারা নিজেই ধর্মান্তকরণের অভিযোগ দায়ের করেছেন। বাকি অভিযোগগুলি তাঁদের পরিবারের তরফ থেকেই এসেছে।
লখনউ: যোগী রাজ্যে এক মাস পূর্ণ হল ‘লভ জিহাদ’ (Love Jihad) বিরোধী আইনের। জোর করে ধর্মান্তকরণ রুখতে গতমাসের ২৮ তারিখ এই আইন জারি করা হয়। একমাস কাটতেই প্রকাশিত পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট হয়ে গেল লভ জিহাদ বা ধর্মান্তকরণের কতটা বিরোধী উত্তর প্রদেশ সরকার (Uttar Pradesh Government)।
সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, মাত্র ৩০ দিনেই ধর্মান্তকরণ বিরোধী আইনে (Anti-Conversion Act) ১৪টি মামলা দায়ের করেছে পুলিস। গ্রেফতারও করা হয়েছে ৫১ জনকে। এদের মধ্যে ছাড়া পেয়েছেন মাত্র দুইজন, বাকি ৪৯ জনই এখনও গারদের পিছনেই রয়েছে।
দায়ের করা ১৪টি মামলার মধ্যে ১৩টি মামলাতেই হিন্দু মহিলাকে জোর করে মুসলিম ধর্মগ্রহণ করানো হয়েছে। কেবলমাত্র দুটি মামলার ক্ষেত্রে নির্যাতিতা মহিলারা নিজেই ধর্মান্তকরণের অভিযোগ দায়ের করেছেন। বাকি অভিযোগগুলি তাঁদের পরিবারের তরফ থেকেই এসেছে।
এখানেই শেষ নয়, দায়ের হওয়া মামলাগুলির মধ্যে আট যুগল ধর্মান্তকরণের অভিযোগ মানতে নারাজ। কেউ নিজেদের বন্ধু হিসাবে, কেউ বা স্বেচ্ছায় সম্পর্কে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এক যুগল নিজেদের বিবাহিত বলেও দাবি করেছেন। তবে চাঞ্চল্যকর তথ্য হল, ধর্মান্তরিত মহিলাদের মধ্যে কেবল একজনই সাবালিকা, বাকি কেউই ১৮ বছরের গণ্ডি পার করেনি এখনও।
আরও পড়ুন: বিজেপি শাসিত বিহারেও আঁচ কৃষক আন্দোলনের, রাজভবন পৌঁছনোর আগেই সংঘর্ষ
কেবল হিন্দু থেকে মুসলিম নয়, খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগও দায়ের হয়েছে এই আইনে। আজমগড়ে তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে জোর করে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। দুটি মামলায় ধর্মান্তরিত মহিলারা সামাজিক চাপের কারণে নিজেদের বয়ান দিতে অস্বীকার করেছেন। অন্যদিকে দুজন মহিলা ধর্ষণের অভিযোগকে অস্বীকার করেছেন। দায়ের হওয়া মামলাগুলির মধ্যে এমনকি তিনজন দলিত মহিলাও রয়েছেন, যাদের জোর করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করানো হয়েছে বলে অভিযোগ। একটি মামলায় ধর্মান্তরিত মহিলাকেই খুঁজতে বিফল হয়েছে পুলিস।
ধর্মান্তকরণ বিরোধী আইনে অধিকাংশ মামলা দায়ের হয়েছে বিজনোর জেলায়। সেখানে জোর করে ধর্মান্তকরণের তিনটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। শাহজাহানপুরে দুটি এবং বরৈলি, মুজাফ্ফরনগর, মউ, সীতাপুর, হারদৌ, ইটাহ, কনৌজ, আজমগড় ও মোরাদাবাদ জেলায় একটি করে অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
২৭ নভেম্বর এই ধর্মান্তকরণ বিরোধী আইন মঞ্জুর করেন উত্তর প্রদেশের রাজ্যপাল আনন্দীবেন পটেল (Anandiben Patel)। ২৮ নভেম্বর থেকে সেই আইন কার্যকর হয়। সেদিনই প্রথম অভিযোগ দায়ের হয় বরৈলিতে (Baraily)। এরপর দ্বিতীয়দিনে মুজাফ্ফরনগরে (Muzaffarnagar) দুই যুবকের বিরুদ্ধে জোর করে ধর্মান্তকরণের অভিযোগ দায়ের হয়। মৌ (Mau) জেলায় ৩০ নভেম্বর এক যুগলের বিয়ের দিনই অপহরণ করে ধর্মান্তকরণের অভিযোগ আনেন কিশোরীর বাবা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই অভিযুক্ত যুবক সহ তাঁর বন্ধুবান্ধব, পরিবারের মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
ধর্ম নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ বিজেপি (BJP)-র বিরুদ্ধে আগেই ছিল। বিজেপি শাসিত যোগী রাজ্যে লভ জিহাদ বিরোধী আইনের সমালোচনায় সরব হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি লকুর থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন (Amartya Sen)। তবে সেই সমালোচনা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি এই আইনে, উত্তর প্রদেশের দেখাদেখি হরিয়ানা (Haryana) ও মধ্যপ্রদেশ (Madhya Pradesh)-ও একই আইন কার্যকর করার পথে এগোচ্ছে।
আরও পড়ুন: রাজনীতিতে ‘না’ রজনীকান্তের, বললেন “আমায় ক্ষমা করুন!”