মোটরসাইকেল ডায়েরিজ: পর্ব ৩২–ছোটনাগপুর মালভূমি অভিযান শুরু, প্রথম দিনের টার্গেট ৩৫০ কিলোমিটার

Chota Nagpur Malbhumi: প্রথম দিনের টার্গেট ছিল প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার। এরই মাঝে বেশ কয়েকটা স্পট কভার করতে হবে। তাই আমরা ঠিক করলাম, ভোর পাঁচটার সময় আমাদের প্রথম দিনের যাত্রা শুরু হবে। কথামতো ২৮ তারিখ ভোর পাঁচটার সময় একটি জায়গায় দলবদ্ধভাবে দেখা করে আমরা যাত্রা শুরু করলাম দুর্গাপুরের উদ্দেশ্যে।

মোটরসাইকেল ডায়েরিজ: পর্ব ৩২–ছোটনাগপুর মালভূমি অভিযান শুরু, প্রথম দিনের টার্গেট ৩৫০ কিলোমিটার
Follow Us:
| Updated on: Dec 24, 2023 | 10:39 AM

সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে তিন-চার দিন ছুটি থাকার ফলে ঠিক হল কাছে-পিঠে কোথাও পাঁচদিনের জন্য ঘুরে আসব। আমার সেই ডাইরির পাতা উল্টে এমন একটা প্ল্যান চোখে পড়ল, যা প্রায় চার রাত এবং পাঁচ দিনের। তা-ও আবার আমাদের পাশের রাজ্য ঝাড়খন্ডে। যেখানে পাহাড়, নদী, ঝর্না, ড্যাম… তার সঙ্গে বিস্তীর্ণ গভীর জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়ার এমন একটি ঠিকানা। ভারতের এই ছোটনাগপুর মালভূমি পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে একটি রাজ্য, যেখানে এই মালভূমির সবচেয়ে বেশিরভাগ অংশ এবং সবথেকে সুন্দর অংশ রয়েছে। যাকে এক কথায় ‘কুইন অফ ছোটনাগপুর মালভূমি’ বলা হয়ে থাকে। এমন একটি অংশে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ কখনও ছাড়া যায় না। তাই জিনিসপত্র গুছিয়ে (লাগেজ কীভাবে প্যাক করবেন, কী-কী নেবেন, কীভাবে নেবেন বাইকের সঙ্গে তার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া আছে মোটরসাইকেল ডায়েরিজ়-এর দ্বাদশ পর্বে)। বাইক নিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর পৌঁছে গেলাম বর্ধমানের। দু’টি বাইকের চারজনের সফরে আমি আর আমার স্যারের পরিবার। পাঁচ দিনের এই পর্বে থাকছে ঝাড়খণ্ডের শহর রাঁচি, পত্রাতু ভ্যালি, নেতারহাট এবং হাজারিবাগের বিস্তারিত প্ল্যান। কোথায় থাকলাম, কী-কী দেখলাম, কীভাবে দেখলাম, এছাড়া বৃষ্টিমুখর দিনের জঙ্গলের মাঝে বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা।

প্রথম দিনের টার্গেট ছিল প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার। এরই মাঝে বেশ কয়েকটা স্পট কভার করতে হবে। তাই আমরা ঠিক করলাম, ভোর পাঁচটার সময় আমাদের প্রথম দিনের যাত্রা শুরু হবে। কথামতো ২৮ তারিখ ভোর পাঁচটার সময় একটি জায়গায় দলবদ্ধভাবে দেখা করে আমরা যাত্রা শুরু করলাম দুর্গাপুরের উদ্দেশ্যে। একটানা বাইক চালিয়ে দুর্গাপুর থেকে বাঁ দিক নিয়ে বাঁকুড়া হয়ে পৌঁছে গেলাম মানবাজার, যার দূরত্ব ১৬৫ কিলোমিটার, মাঝে একবার একটু বিরতি নিয়ে মানবাজার পৌঁছে সকালের খাবার সেরে ফেললাম। এরপর সকাল ১০টা নাগাদ বাইক স্টার্ট দিয়ে সিন্দরি হয়ে বড়বাজার থেকে বাঁ দিক নিয়ে পৌঁছে গেলাম আজকের প্রথম গন্তব্য স্থান: ডিমনা ড্যাম।

সিধু-কানু চক থেকে বাঁ দিক নিয়ে পৌঁছে যাবেন ডিমনা লেকে। এই রাস্তাটি অসম্ভব সুন্দর, প্রকৃতির মাঝে কালো পিচের রাস্তা। রাস্তাটি ডিমনা লেকের পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে বেশ কিছুটা। ডিমনা ড্যাম-এ যাওয়ার এই রাস্তার মাঝে আপনি দেখতে পাবেন চারপাশে পাহাড়ের মাঝে একটি বিশাল ড্যাম এবং এরই শুরুতে পদ্মফুলের রাশি, যা প্রকৃতির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এখানে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে জল এবং ড্রাই ফুড খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম আমাদের পরবর্তী গন্তব্য স্থান চান্ডিল ড্যাম, যার দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার।

অসম্ভব সুন্দর প্রকৃতির মাঝে এই বিশাল ড্যামটি আগেরটির থেকেও বড়। চারপাশে পাহাড় এবং জঙ্গলের মাঝে একটি বিশেষ ড্যাম। এখানে বোটিং-এর অসুবিধা আছে। খরচ মাথাপিছু ১৫০ টাকা করে। বিশাল এই ড্যামটির উপরে বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা আরও অসাধারণ। এরপরের গন্তব্য স্থান পালনা ড্যাম, যার দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার।

এই জামশেদপুর অঞ্চলের পালনা ড্যাম-এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আগের দু’টি থেকে একটু আলাদা। গ্রামের মাটির রাস্তা দিয়ে বেশ কিছুটা যাওয়ার পর এটি একটি অপরিচিত ড্যাম। যেখানে পর্যটকের আগমন প্রায় নেই বললেই চলে। একটি ওয়াচ টাওয়ারের পাশে ছোট্ট এই সুন্দর ড্যামটির সৌন্দর্য অন্যগুলোর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ছবির মতো, তিন দিকে আঁকাবাঁকা উঁচু পাহাড়ের মাঝে একটি ছোট্ট জলাশয়।

এখানে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে বাইক নিয়ে বুন্দু হয়ে পৌঁছে গেলাম আজকের দিনের প্রথম ঝরনা দাসম জলপ্রপাত। যার দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার। এখানে পৌঁছতে প্রায় বিকেল হয়ে যাওয়ায় আমরা তাড়াতাড়ি করে দেশি মুরগির ঝোল আর ভাতের মেন্যু ঠিক করে ঝর্ণা দেখতে চলে গেলাম। দশম জলপ্রপাত তার সৌন্দর্যের জন্য এবং জলবিদ্যুতের একটি মূল্যবান উৎস হিসেবে বিখ্যাত। বাণিজ্যিক ব্যবহারের ভারসাম্য বজায় রাখতে ১৯৩০ সাল থেকে জলপ্রপাতের পুনঃনির্মাণ করা হয়।

দক্ষিণ ছোটনাগপুর মালভূমি বা রাঁচির মালভূমির মধ্যে প্রবাহিত ১৪৪ ফুট উচ্চতা থেকে স্বর্ণেখার নদী থেকে এই দশম জলপ্রপাতটি তৈরি হয়। আপনি যদি ঝাড়খণ্ডের পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে চান, তবে এই জায়গাটি সেরা, যা প্রথম নজরে সত্যিই হিমালয়ের উপত্যকার মতো দেখায়। চারিদিকে বন আর ঝর্ণার জলপ্রপাত বেশ গভীর। বৃষ্টির সময়, এটি খুব ভয়ঙ্কর চেহারা নেয়।

এখানে সন্ধ্যের মধ্যে খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে পড়লাম রাঁচির উদ্দেশ্যে। আজকে রাত কাটানো হল রাঁচি স্টেশনের ঠিক পাশের একটি হোটেলে। আপনি এখানে হাজার টাকার মধ্যে ভাল এসি রুম পেয়ে যাবেন।

‘দ্য কুইন অফ ছোটনাগপুর মালভূমির’ পরবর্তী অংশ রয়েছে আগামী পর্বে……