Kanyam-Shree Antu: কন্যমের পর এবার ট্রি হাউসে ঘেরা শ্রী আন্তু, কেমন নেপালের এই ছোট্ট জনপদ?
Short Trip in Nepal: কন্যমের পরবর্তী ডেস্টিনেশন শ্রী আন্তু। চা বাগান, পাইন ফরেস্ট আর ছোট্ট হ্রদ—এসব নিয়েই শ্রী আন্তু। কিন্তু চমক এখনও বাকি। শ্রী আন্তু কীভাবে যাবেন, সেখানে কী-কী রয়েছে, কীভাবে উপভোগ করবেন এই পাহাড়ি জনপদ, রইল টিপস।
মেঘা মণ্ডল
কন্যমের (Kanyam) পরবর্তী ডেস্টিনেশন শ্রী আন্তু (Shree Antu)। কন্যমের স্বর্গীয় পরিবেশ থেকে বেরোতে একফোঁটাও মন চাইছিল না। কিন্তু বাকেট লিস্টে শ্রী আন্তুও ছিল আমাদের। শ্রী আন্তুকে ঘুরে না দেখলে অনেক কিছুই মিস হয়ে যেত আমাদের। তাই ব্যাগ গুছিয়ে আবার রওনা দিলাম শ্রী আন্তুর উদ্দেশ্যে। শ্রী আন্তু নেপালের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। একটা ছোট্ট ‘পোখরি’কে কেন্দ্র গড়ে উঠেছে এই ছোট্ট পাহাড়ি জনপদ। এতটাই যে ছোট পাহাড়ের এ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থেকে ও প্রান্ত দেখা দেয় স্পষ্ট। চা বাগান, পাইন ফরেস্ট আর ছোট্ট হ্রদ—এসব নিয়েই শ্রী আন্তু। প্রথমে জেনে নেওয়া যাক, এই শ্রী আন্তুতে আমরা পৌঁছলাম কীভাবে।
কন্যমে দু’দিন চা বাগানের মাঝে ঘুরেই কেটে গেল। কন্যম থেকে শ্রী আন্তু প্রায় ১৪ কিলোমিটারের রাস্তা। কিন্তু সরাসরি যাওয়া যায় না। কন্যম থেকে জনপ্রতি ৫০টাকা ভাড়া দিয়ে, অটোয় চেপে পৌঁছে যেতে হয় ফিক্কেল। এই ফিক্কেল গ্রাম থেকে শ্রী আন্তু যাওয়ার সরাসরি শেয়ার গাড়ি পাওয়া যায়। ভাড়া নেয় জনপ্রতি ১০০-২০০ টাকা। টুমলিং বা সান্দাকফু যাওয়ার পথে দূরের যেসব নেপালি গ্রামগুলো চোখে পড়ে, তারই মধ্যে অন্যতম হল এই ফিক্কেল। ফিক্কেলে মানুষজনের ভিড় বেশি। রয়েছে বাজার-দোকান, হোটেল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র সবকিছু। আপনাকে শ্রী আন্তু যেতে গেলে ফিক্কেলে ঢোকার আগে ডান হাতের রাস্তা ধরে নিচে নেমে যেতে হবে। ফিক্কেল থেকে শ্রী আন্তুর দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। পথে পড়বে সিদ্ধিখোলা নদী—খরস্রোতা। জঙ্গলের পথ পেরিয়ে পাথরের উপর আছড়ে পড়ছে সে। নদীর উপর সেতুতে দাঁড়িয়ে করে নেওয়া হল ফটোশুটও। তারপর আবার পাহাড় ভেঙে পথ চলা। কন্যম থেকে প্রায় ১ ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম শ্রী আন্তু।
শ্রী আন্তুর বাজারের রাস্তায় গাড়ি নামিয়ে দেবে। এবার পাহাড়ি রাস্তা ধরে হেঁটে চলা। মিনিট তিনেক হাঁটলেই চোখে পড়বে পাইন ও চা গাছে ঘেরা হ্রদ। চারদিকে তৈরি করা রয়েছে ট্রি হাউস, ক্যাফে (Instagrammable Cafe) আর কটেজ। শ্রী আন্তু নাইট লাইফের জন্য জনপ্রিয়। কন্যমের মতোই উইকএন্ডে নেপালিরা ছুটি কাটাতে আসেন শ্রী আন্তুতে। কেউ আসেন বন্ধুদের সঙ্গে হইহুলোড় করতে, আবার কেউ আসেন প্রিয় মানুষের সঙ্গে নিরিবিলিতে সময় কাটাতে।
ওয়েব সিরিজ়, সিনেমায় ঠিক যে ধরনের ইনস্টাগ্রাম-সুন্দর ট্রি হাউস (Tree House) দেখেছেন, তা উপভোগ করতে পারবেন শ্রী আন্তুতে। শ্রী আন্তু পৌঁছে সেরে ফেললাম হোটেল বুকিংয়ের কাজ। কিছু হোটেলের ছবি দেখেছিলাম ইনস্টা রিলস, গুগলে। তারই মধ্যে বেছে নিলাম একটাকে। ১০ জুলাইয়ের আস্তানা। শ্রী আন্তুরও প্রতিটা হোটেল, ক্যাফেতে ওয়াই-ফাইয়ের সুবিধা রয়েছে। তবে, সীমান্তের খুব কাছেই অবস্থিত হওয়ায় মোবাইল নেটওয়ার্ক অফ-অন করছিল। কিন্তু আমরা তো প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাতে গিয়েছে, সেখানে এই নেট পরিষেবা থেকে সচেতনভাবেই একটু বিরতি নিয়েছিলাম। দিনের আলো যতটুকু ছিল, পায়ে হেঁটে ঘুরে নিলাম শ্রী আন্তু।
পোখরিকে কেন্দ্র করেই ঘুরলাম সারা দুপুর। সঙ্গী ছিল বৃষ্টি। কখনও একটা ক্যাফেতে কফি চুমুক দিচ্ছি, আবার কখনও অন্য ক্যাফেতে বিয়ারে। ঠিক যেই মুহূর্তে চা বাগানের পিছনে সূর্য ডুব দিল, শ্রী আন্তুর কটেজ, ক্যাফেতে আলো জ্বলে উঠল একের পর এক… তার সঙ্গে বাজতে শুরু করল হিন্দি-ইংরেজি গান। গানের সঙ্গে চলছে আড্ডা, মদ্যপান আর বারবিকিউ। আমরাও যোগ দিলাম শ্রী আন্তুর নাইট লাইফে। প্রতিটা কটেজ, ক্যাফের একই দৃশ্য। গান বন্ধ হল রাত ১টায়। এভাবেই আরও একটা দিন কেটে গেল শ্রী আন্তুতে।
বর্ষায় শ্রী আন্তু এক অন্য অভিজ্ঞতার সাক্ষী করে তুলল আমাদের। কিন্তু বছরের অন্যান্য সময়ে এই শ্রী আন্তুর কোলে বসে আপনি দেখতে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘাও। পোখরি থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার উপরে উঠলে শ্রী আন্তুর ভিউ পয়েন্ট। এই ভিউ পয়েন্টে পর্যটকেরা ভিড় করেন ভোর ৪টে থেকে। কিন্তু পোখরি থেকে সেখান অবধি পৌঁছতে গেলে প্রয়োজন গাড়ির। সূর্যের প্রথম আলো যখন এসে পড়ে, তখন ওই ভিউ পয়েন্ট থেকে দেখা মেলে তুষারাবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘার। আমাদের এই ট্রিপটা যেহেতু বর্ষাকালে করা হয়েছিল, তাই ওই ভিউ পয়েন্টে আর যাওয়া হয়নি। কারণ সে দিন সূর্য মেঘ থেকে আর বেরোয়নি। এটাই ছিল শ্রী আন্তুর ভ্রমণ কাহিনি। এবার ফেরার পালা।
শ্রী আন্তু থেকে ফিরতে পারেন চারালি হয়ে পানিট্যাঙ্কি দিয়ে সীমান্ত পার করে। কিন্তু আমরা বেছে নিয়েছিলাম মিরিকের পথ। পশুপতি ফটক দিয়ে আবার ফিরলাম নিজের দেশে। প্রথমে শ্রী আন্তু থেকে ফিক্কেল যেতে হল শেয়ার গাড়িতে। আমরা আর গাড়ি পরিবর্তন করিনি। ওই একই শেয়ার গাড়ি আমাদের ফিক্কেল থেকে নিয়ে এল পশুপতি ফটকের সামনে। ভারতীয় মুদ্রায় ১,০০০ টাকা নিল। প্রায় ২১ কিলোমিটারের রাস্তা ছিল। ১ ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে গিয়েছিলাম ভারত-নেপাল সীমান্তে। পশুপতি ফটকে বোবা মিল্কশেক (এক ধরনের কোরিয়ান পানীয়) খেতে-খেতে পায়ে হেঁটে নেপাল থেকে চলে এলাম নিজের দেশে।
পশুপতি ফটক থেকে আবার গাড়ি পেয়ে গেলাম দার্জিলিং মোড় অবধি যাওয়ার। এবার আর শেয়ার গাড়ি নয়। গোপালধারার সৌন্দর্য পেরিয়ে, মিরিকের রাস্তা ধরতেই এক রাশ মেঘ এসে জাপটে ধরল। মেঘ শুধু রাস্তাতেই নয়, ততক্ষণে একটু-একটু করে ভিড় জমিয়েছে মনেও… মন কিছুতেই চাইছিল না বাড়ি ফেরার ট্রেন ধরতে। মিরিক থেকে আরও নিচে নামার পর বুঝতে পারলাম এক সুন্দর উইকএন্ড কাটিয়ে এলাম আমরা। দুধিয়া আসতেই গরম কাকে বলে, হাড়ে-হাড়ে টের পাওয়া শুরু হল। এসব আকাশ-পাতাল ভাবতে-ভাবতে আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে-করতে পৌঁছে গেলাম দার্জিলিং মোড়। মাত্র ২,৫০০ টাকায় পশুপতি ফটক থেকে দার্জিলিং মোড় পৌঁছে গেলাম। দার্জিলিং মোড় থেকে অটো করে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। তার পদাতিকে চেপে আবার শিয়ালদহ।