Pure Science Study in India: ‘সুন্দর পিচাই বা সত্য নাদেলা তৈরি হলেও, আর্যভট্টের দেশেই বিজ্ঞানে কোনও নোবেল নেই!’

TV9 Bangla Digital

TV9 Bangla Digital | Edited By: ঈপ্সা চ্যাটার্জী

Updated on: Feb 14, 2022 | 2:21 PM

Pure Science Study in India: বিশুদ্ধ বিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়ার কবরে শেষ পেরেকটা গেঁথে দেওয়া হয়েছিল যখন এনএসটিএস-কে বদলে ন্য়াশনাল ট্যালেন্ট সার্চ স্কলারশিপ করে দেওয়া হল।

Pure Science Study in India: 'সুন্দর পিচাই বা সত্য নাদেলা তৈরি হলেও, আর্যভট্টের দেশেই বিজ্ঞানে কোনও নোবেল নেই!'
আর্যভট্টের দেশেই বিজ্ঞানে নোবেল নেই কেন?

প্রবীর কে বসু (অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার): 

গত ১৩ ফেব্রুয়ারিই আমরা বিশ্ব রেডিয়ো দিবস পালন করেছি, কিন্তু অনেক ভারতীয়েরই হয়তো জানা নেই যে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুই প্রথম রেডিয়ো তরঙ্গ আবিষ্কার করেছিলেন। সেই সময় ভারত পাশ্চাত্য শাসনের অধীনে থাকায় মার্কনি সেই কৃতিত্ব পেয়েছিলেন। পশ্চিমী দুনিয়া কখনওই স্বীকার করত না যে একজন ভারতীয় বিজ্ঞানী এই কাজটা করতে পারেন। একই মনোভাব প্রকাশ পেয়েছিল যখন পদার্থবিদ্যার জন্য অধ্যাপক সত্যেন বসু ও ডঃ সুদর্শনকে নোবেল পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। কীভাবে একজন বসু উপাধির ব্যক্তিকে নোবেল দেওয়া থেকে অস্বীকার করতে পারেন, যেখানে পদার্থবিদ্যার অন্যতম ব্যবহৃত শব্দই হল বোসন?  বলা হয় যে, যদি আপনার নাম বিশেষ্য হিসাবে পদার্থবিদ্য়ায় ব্যবহৃত হয়, তার অর্থ আপনি জিনিয়াস, যেমন অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে চন্দ্রশেখর হল শেষ সীমা। আর আপনার নাম যদি সাধারণ বিশেষ্য হিসাবে ব্যবহার হয়, তার অর্থ আপনি অসাধারণের থেকেও আরও বেশি কিছু। কিন্তু সেখানেও পাশ্চাত্যের হিংসাপরায়ণ মনোভাবেই জয় হয়েছিল।

আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একজন পদার্থবিজ্ঞানী ও উদ্ভিদবিজ্ঞানী ছিলেন। উনিই প্রথম গাছের প্রাণ রয়েছে, তা প্রমাণ করেছিলেন এবং গাছের ক্ষুদ্রতম বৃদ্ধি ও সংকেত পরিমাপ করার জন্য একটি অনন্য যন্ত্র, ক্রেসকোগ্রাফ তৈরি করেছিলেন।

ওই দিনগুলি পদার্থবিদ্যার সুবর্ণ সময় ছিল। আমাদের দেশ থেকেই শীর্ষ পদার্থবিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু, তাঁর ছাত্র সত্যেন বসু, এম এন সাহা, পি সি মহালনবিস, নোবেলজয়ী সিভি রমণ, সুপরিচিত রসায়নবিদ পিসি রায়, রামানুজম, হরগোবিন্দ খুরানা, হোমি ভাবা, হোমি সেথনার মতো বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা উঠে এসেছিলেন। এরপর আইআইএস, আইআইটি তৈরি হল। সেখানেই তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যায় ইতি পড়ে। সমস্ত উজ্জ্বল পড়ুয়ারা অঙ্ক, পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা ছেড়ে আইআইটিতে কম্পিউটার সায়েন্স ও  ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বেছে নিতে শুরু করল। আইআইএস অন্তত বায়োফিজিক্সের মতো বিষয় নিয়ে গবেষণার সুযোগ রেখেছে।

সরকার এই বিষয়টিকে আরও তালগোল পাকিয়ে দেয়। প্রথমে ন্যাশনাল সায়েন্স ট্যালেন্ট এক্সাম হত কেবলমাত্র বিজ্ঞানের পড়ুয়াদের জন্য। বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার জন্য তারা ভাল বৃত্তিও পেতেন। যদি কোনও পড়ুয়া এনএসটিএস-এ জয়ী হতেন, কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করতে চাইলে, বৃত্তি পেতেন না। এরপর কোনও এক জ্ঞানী ব্যক্তি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াদেরও এনএসটিএসের বৃত্তি পাওয়ার অনুমোদন দিলেন। বিশুদ্ধ বিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়ার কবরে শেষ পেরেকটা গেঁথে দেওয়া হয়েছিল যখন এনএসটিএস-কে বদলে ন্য়াশনাল ট্যালেন্ট সার্চ স্কলারশিপ করে দেওয়া হল। এখন পড়ুয়াদের শুধুমাত্র বিজ্ঞানই নয়, সমাজবিদ্যা এবং না জানি আরও কত পরীক্ষা দিতে হয়। ঈশ্বরই জানেন কোন জ্ঞানী ব্যক্তি এই কাজটি করেছিলেন। এর ফলাফল হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিশুদ্ধ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমরা ডজনভর সুন্দর পিচাই বা সত্য় নাদেলাদের তৈরি করেছি, কিন্তু বিজ্ঞানে একটিও নোবেল আনতে পারিনি। যে দেশ থেকে আর্যভট্ট ও পরবর্তী সময়ে রামানুজ তৈরি হয়েছিল, সেখান থেকে একজনও মেডেলিস্ট নেই। একটি এবেল পুরস্কার বা গোডেল পুরস্কারও নেই।

যদি বিশুদ্ধ বিজ্ঞানকে অবহেলা করা হয়, তবে মানবসভ্যতায় কোনও সমাজই অবদান রাখতে পারে না। এই বিষয়ে আমাদের কাছে সেরা মস্তিষ্কগুলি রয়েছে, কিন্তু তাদের স্টক মার্কেট ও তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। মাথার থেকেও টাকার দাম বেশি।

লেখক একজন অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার।

Latest News Updates

Follow us on

Related Stories

Most Read Stories

Click on your DTH Provider to Add TV9 Bangla