Adi Shankaracharya: হিন্দুধর্মকে প্রসারিত করতেই আদি শঙ্করার রূপ নিয়েছিলেন শিব! শঙ্করাচার্য কে?
Shankaracharya Jayanti 2022: শঙ্করাচার্য খুবই তরুণ বয়সে বহু উন্নতমানের ধর্মীয় পুস্তক রচনা করে গিয়েছেন । সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ব্রহ্মসূত্র , মনীষ পঞ্চকাম , গীতাভাষ্য , বিবেক চূড়ামণি , প্রবোধ সুধাকর , সমবেদান্ত সিদ্ধাত্ত সংগ্রহ ।
হিন্দুধর্মের পুনর্জাগরনের উদ্গাতা জগৎগুরু শঙ্করাচার্য যাঁর দ্বারা হিন্দুধর্মের পুনর্জাগরণ সম্ভব হয়েছিলো তাঁর নাম শঙ্করাচার্য। সংস্কৃত ভাষায় লেখা আদি শঙ্কর বা শঙ্করাচার্য (Adi Shankara) এর রচনাবলির প্রধান লক্ষ্য ছিল অদ্বৈত তত্ত্বের প্রতিষ্ঠা। সেযুগে হিন্দু দর্শনের মীমাংসা শাখাটি অতিরিক্ত আনুষ্ঠানিকতার উপর জোর দিত এবং সন্ন্যাসের আদর্শকে উপহাস করত। আদি শঙ্কর উপনিষদ্ ও ব্রহ্মসূত্র অবলম্বনে সন্ন্যাসের গুরুত্ব তুলে ধরেন। শঙ্করাচার্য উপনিষদ্, ব্রহ্মসূত্র ও ভগবদ্গীতার ভাষ্যও রচনা করেন। হিন্দু ধর্মে বৈশাখ মাসের একটি বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে শঙ্করাচার্য জয়ন্তী (Shankaracharya Jayanti 2022) পালন করা হয়। আজ সেই বিশেষ দিন। দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে আদি শঙ্করাচার্যর জন্মজয়ন্তী। আদি শঙ্কর, যিনি জগৎগুরু শঙ্করাচার্য নামেও পরিচিত। তাঁর শিক্ষার মূল কথা ছিল আত্ম ও ব্রহ্মের সম্মিলন। তাঁর মতে ব্রহ্ম হলেন নির্গুণ।
জন্ম ও শৈশব
হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে, আদি শঙ্করাচার্য ৭৮৮ খ্রিস্টাব্দের বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষে অমাবস্যার পরে পঞ্চম দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শঙ্কর এক রক্ষণশীল হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবার নাম ছিল শিবগুরু ও মায়ের নাম আর্যাম্বা। তারা অধুনা কেরল রাজ্যের অন্তর্গত কালাডি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আদি শঙ্করাচার্য জগদগুরু নামেও পরিচিত ছিলেন। আদি শঙ্করাচার্য জয়ন্তীকে সবচেয়ে পবিত্র ও ধর্মীয় উৎসব বলে মনে করা হয়। বৈদিক জ্ঞানের কথা প্রচার করেছিলেন তিনি। আদি শঙ্করাচার্যের জন্ম নিয়ে একটি কাহিনি বহুল প্রচলিত।
শোনা যায়, এক সময় মানুষ পবিত্রতা ও আধ্যাত্মিকতা থেকে বঞ্চিত ছিল। সমস্ত ঋষিরা সাহায্য চাইতে ভগবান শিবের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেইসময় ভগবান শিব তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে হিন্দু ধর্মে মানুষকে আলোকিত করতে আদি শঙ্করাচার্য হিসাবে জন্ম নেবেন। এভাবেই, আদি শঙ্করাচার্য হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের শিক্ষা ও সাহায্য করার জন্য জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
অন্যদিকে, শঙ্করের বাবা-মা অনেক দিন ধরেই নিঃসন্তান ছিলেন। তাই তাঁরা ত্রিশূরের বৃষভচল শিবমন্দিরে পুত্রকামনা করে পূজা দেন। এরপর আর্দ্রা নক্ষত্রের বিশেষ তিথিতে শঙ্করের জন্ম হয়। শঙ্কর যখন খুব ছোট, তখন তাঁর বাবা মারা যান। এই জন্য শঙ্করের উপনয়নে দেরি হয়। পরে তার মা উপনয়নের ব্যবস্থা করেন। শঙ্কর ছেলেবেলা থেকেই খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি চারটি বেদ আয়ত্ত্ব করে নেন।
সাত বছর থেকে শঙ্কর সন্ন্যাস গ্রহণের দিকে ঝুঁকেছিলেন। কিন্তু তার মা তাকে অনুমতি দিতে চাইছিলেন না। শেষে তিনি খুব আশ্চর্যজনকভাবে মায়ের অনুমতি পান। কথিত আছে, একদিন তিনি পূর্ণা নদীতে স্নান করছিলেন। এমন সময় একটি কুমির তার পা কামড়ে ধরে। শঙ্করের মাও সেই সময় পূর্ণার তীরে উপস্থিত ছিলেন। তিনি মা-কে বলেন, মা যদি সন্ন্যাস গ্রহণের অনুমতি দেন, তাহলে কুমিরটি তার পা ছেড়ে দেবে। ছেলের প্রাণ বাঁচাতে মা তাকে সন্ন্যাস গ্রহণের অনুমতি দিলেন। তার পর থেকে কোনওদিন পূর্ণা নদীতে কোনও কুমিরকে দেখা যায়নি।
সন্ন্যাসগ্রহণ
শঙ্কর কেরল ত্যাগ করে গুরুর খোঁজে উত্তর ভারতের দিকে রওনা হলেন। নর্মদা নদীর তীরে ওঙ্কারেশ্বরে তিনি গৌড়পাদের শিষ্য গোবিন্দ ভগবদপাদের দেখা পান। গোবিন্দ শঙ্করের পরিচয় জানতে চাইলে, শঙ্কর মুখে মুখে একটি শ্লোক রচনা করেন। এই শ্লোকটিই অদ্বৈত বেদান্ত তত্ত্ব প্রকাশ করে। গোবিন্দ তা শুনে খুব খুশি হন এবং শঙ্করকে শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। কথিত আছে, কাশীতে বিশ্বনাথ মন্দির দর্শন করতে যাওয়ার সময় এক চণ্ডালের সঙ্গে শঙ্করের দেখা হয়ে যায়। সেই চণ্ডালের সঙ্গে চারটি কুকুর ছিল। শঙ্করের শিষ্যরা চণ্ডালকে পথ ছেড়ে দাঁড়াতে বললে, চণ্ডাল উত্তর দেয়, “আপনি কী চান, আমি আমার আত্মকে সরাই না এই রক্তমাংসের শরীরটাকে সরাই?” শঙ্কর বুঝতে পারেন যে, এই চণ্ডাল স্বয়ং শিব এবং তার চারটি কুকুর আসলে চার বেদ। শঙ্কর তাকে প্রণাম করে পাঁচটি শ্লোকে বন্দনা করেন। এই পাঁচটি শ্লোক “মণীষা পঞ্চকম্” নামে পরিচিত।
মঠ
আদি শঙ্কর হিন্দু ধর্মের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করার জন্য চারটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেন। এগুলো দক্ষিণে কর্ণাটকের শৃঙ্গেরীতে, পশ্চিমে গুজরাটের দ্বারকায়, পূর্বে ওড়িশার পুরীতে গোবর্ধন মঠ এবং উত্তরে উত্তরখন্ডের জ্যোতির্মঠে (যশীমঠে)। হিন্দু পরম্পরাগত মতবাদ বিবৃত করে যে তিনি এসব মঠের দায়িত্ব দেন তার চারজন শিষ্যকে যথাক্রমে: সুরেশ্বরাচার্য, হস্তামলকাচার্য, পদ্মপাদাচার্য এবং তোটকাচার্য। এ চারটি মঠের প্রত্যেক প্রধান প্রথম শঙ্করাচার্যের নামানুসারে শঙ্করাচার্য (“পণ্ডিত শঙ্কর”) উপাধি গ্রহণ করেন। আদি শঙ্করাচার্য অদ্বৈতবাদী দর্শণ শাস্ত্রের প্রবক্তা । তিনি ভারতের প্রধান চারটি ধাম ভ্রমণ করেন এবং সেখানে মঠ প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি প্রায় সকল হিন্দু দেব দেবীদের উদ্দেশ্যে স্তোত্র রচনা করেন।
ধর্মীয় পুস্তক
শঙ্করাচার্য খুবই তরুণ বয়সে বহু উন্নতমানের ধর্মীয় পুস্তক রচনা করে গিয়েছেন । সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল ব্রহ্মসূত্র , মনীষ পঞ্চকাম , গীতাভাষ্য , বিবেক চূড়ামণি , প্রবোধ সুধাকর , সমবেদান্ত সিদ্ধাত্ত সংগ্রহ । এই সকল গ্রন্থে তিনি তাঁর বিশ্বাসের ভিত্তিসমূহের ব্যাখ্যা দেন । পরবর্তীতে এগুলোই তাঁর দর্শনের ঐতিহ্য বিবেচিত হয় ।