Mahalaya 2023: মহালয়ার দিন তর্পণ কেন করা হয়? বাড়িতেই পালন করুন খুব সহজ পদ্ধতিতে
Pitru Tarpan: মহালয়ার দিন, দেবতা, ঋষি বা পিতৃপুরুষদের কাছে পূর্বপুরুষদের সন্তুষ্ট করতে কালো তিল মিশ্রিত জল নিবেদনের প্রক্রিয়াকে তর্পণ বলা হয়। সেই সঙ্গে পূর্বপুরুষদের সন্তুষ্ট করার জন্য পিণ্ডদান ও ব্রাহ্মণভোজন করারও প্রথা রয়েছে। এই তিনটিকে একসঙ্গে শ্রাদ্ধ বলা হয়।

১২ মাসে মোট ২৮ পক্ষ। তার মধ্যে পিতৃপক্ষ ও দেবীপক্ষ হল অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ পক্ষকাল। আশ্নিনের কৃষ্ণপক্ষকে মহালয়া বলা হয়ে থাকে। এই কৃষ্ণপক্ষকেই বলা হয় পিতৃপক্ষ। হিন্দুদের বিশ্বাস, যমালয় থেকে মর্ত্যে পূর্বপুরুষরা নেমে আসেন। তাঁদের তুষ্ট করার জন্য শ্রাদ্ধের আয়োজন করার রীতি রয়েছে এদিন। শুধু তাই নয়, পিতৃপক্ষের উল্লেখ রয়েছে মহাভারতেও। এবছর পিতৃপক্ষের অন্তিমকাল বা মহালয়া পালিত হবে আগামী ১৪ অক্টোবর। সাধারণত পিতৃপক্ষ চলে টানা ১৬দিন ধরে। এই বিশেষ তিথিতে রীতি মেনে শ্রাদ্ধ, তর্পণ করা হলে পূর্বপুরুষরা প্রসন্ন হয়ে আশীর্বাদ বর্ষণ করে থাকেন। মহালয়ার দিন গঙ্গার মতো পবিত্র নদীর তীরে ব্রাহ্মণের মাধ্যমে পূর্বপুরুষদের নামে শ্রাদ্ধ, পিণ্ডদান ও অন্নপ্রদান করা হয়ে থাকেন বহু মানুষ।
মহালয়ার দিন, দেবতা, ঋষি বা পিতৃপুরুষদের কাছে পূর্বপুরুষদের সন্তুষ্ট করতে কালো তিল মিশ্রিত জল নিবেদনের প্রক্রিয়াকে তর্পণ বলা হয়। সেই সঙ্গে পূর্বপুরুষদের সন্তুষ্ট করার জন্য পিণ্ডদান ও ব্রাহ্মণভোজন করারও প্রথা রয়েছে। এই তিনটিকে একসঙ্গে শ্রাদ্ধ বলা হয়। পবিত্র নদীর তীরে বা গয়ার মতো তীর্থস্থানে শ্রাদ্ধ করার নিয়ম রয়েছে। যদি গঙ্গা বা গয়ায় যেতে না পারেন, তাহলে বাড়িতেও তর্পণ করা সম্ভব। বাড়ির সবচেয়ে নির্জন স্থানে বা গোয়ালঘরে করা উচিত।
কীভাবে বাড়িতে শ্রাদ্ধ করবেন ?
1. বাড়িতে শ্রাদ্ধ করতে, শ্রাদ্ধের তারিখে সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠে স্নান করুন।
2. পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করে পিতৃপুরুষের সন্তুষ্টির জন্য শ্রাদ্ধ ও দান করার প্রতিজ্ঞা নিন। শ্রাদ্ধ না করা পর্যন্ত কিছু খাবেন না।
3. দিনের অষ্টম মুহুর্তে অর্থাৎ কুতুপ কাল শ্রাদ্ধ করুন। ১১টা ৩৬ মিনিট থেকে ১২টা ২৪ মিনিট পর্যন্ত হল কুপুত কাল শ্রাদ্ধের সময়।
4. দক্ষিণ দিকে মুখ করে, বাম পা মুড়ে মাটিতে আপনার হাঁটু দিয়ে বসুন।
5. একটি চওড়া তামার পাত্রে বার্লি, তিল, চাল, কাঁচা গরুর দুধ, গঙ্গা জল, সাদা ফুল এবং জল একসঙ্গে মিশ্রিত করুন।
6. হাতে কুশা ঘাস রেখে ওই জল পূরণ করুন। এরপর বুড়ো আঙুল দিয়ে সরাসরি একই পাত্রে ফেলে দিন। এইভাবে ১১ বার করে আপনার পূর্বপুরুষদের ধ্যান করুন।
7. পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে আগুনে ক্ষীর নিবেদন করুন। এরপর পঞ্চবলি অর্থাৎ দেবতা, গরু, কুকুর, কাক ও পিঁপড়ের জন্য আলাদা খাবার বের করুন।
8. ব্রাহ্মণদের ভোজন করান ও ভক্তি নিয়ে দক্ষিণা ও অন্যান্য জিনিস দান করুন।
কোন কোন বিষয়গুলি মাথায় রাখবেন?
– ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, পূর্বপুরুষের জগৎ রয়েছে দক্ষিণ দিকে। এই কারণে, সম্পূর্ণ শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করার সময় দক্ষিণ দিকে মুখ করে বসা উচিত। পিতৃ তিথিতে সকাল বা সন্ধ্যের সময় শ্রাদ্ধ করবেন না। শাস্ত্রে এই নিয়ম নিষিদ্ধ। শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান সর্বদা বিকেলে করা উচিত।
– তর্পণের সময় পূর্বপুরুষরা দুধ, তিল, কুশ, ফুল ও জল দিয়ে তৃপ্ত হন। জল নিবেদন করলে পিতৃপুরুষদের তৃষ্ণা নিবারণ হয়। এমনটা না করা হলে পিতৃপুরুষেরা তৃষ্ণার্ত থাকেন বলে মনে করা হয়। তাই শ্রাদ্ধের দিনগুলিতে প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করতে না পারলেও অন্তত জল দিয়ে তর্পণ করা উচিত।
– পুত্রদের সাধারণত পিতার শ্রাদ্ধ করা উচিত। একাধিক পুত্র থাকলে শুধুমাত্র জ্যেষ্ঠ পুত্রেরই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করা উচিত। পুত্রের অনুপস্থিতিতে স্ত্রীর শ্রাদ্ধ করা উচিত। স্ত্রী না থাকলে প্রকৃত ভাই শ্রাদ্ধ করতে পারেন। ব্রাহ্মণদের অন্ন প্রদান ও পিণ্ডদান করলে পূর্বপুরুষরা অন্ন লাভ করেন। বস্ত্রদানের মাধ্যমে পূর্বপুরুষদের কাছে বস্ত্র বিতরণ করা হয়। প্রতি পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় পূর্বপুরুষদের তর্পণ করতে হবে।





