KL Rahul: ‘কিপার কুল’ রাহুল! সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও ভরসা দিচ্ছেন
Asia Cup 2023, IND vs SL: ঘরের মাঠে ওয়ান ডে বিশ্বকাপ। কিপার-ব্যাটার হিসেবে প্রথম পছন্দ রাহুল। ঈশান কিষাণ স্পেশালিস্ট কিপার। তাঁর ক্ষেত্রে ব্যাটিংয়ে নজরকাড়া অনেক বেশি জরুরি। গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চাপের মুখে অনবদ্য একটা ইনিংস। সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে লো-স্কোরিং ম্যাচেও ব্যাট হাতে অবদান। রাহুল ফেরায় ঈশানের জায়গা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। শ্রেয়স আইয়ারের 'চোট' সেই রাস্তা পরিষ্কার করে।

স্পেশালিস্ট কিপার নন। হঠাৎ জাতীয় দলে কিপিং করছেন, তাও নয়। প্রত্যাবর্তনের পর এ বার অনেক আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে, এই বিষয়টা প্রশংসনীয়। রাহুল এবং রাহুল। একটা সময় ওয়ান ডে দলে রাহুল দ্রাবিড়ের জায়গা নিশ্চিত করতে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়েরও অবদান রয়েছে। অজান্তেই যেন রাহুল দ্রাবিড়ের নামে টেস্ট প্লেয়ারের তকমা জুড়ে গিয়েছিল। ওয়ান ডে ক্রিকেটে সেই রাহুল দ্রাবিড়ই ১০ হাজারের ওপর রান করেছেন। এর জন্য তাঁকে কিপারের ভূমিকাও পালন করতে হয়েছে। টিম ম্যানেজমেন্ট একজন বাড়তি ব্যাটার কিংবা বোলার খেলানোর সুযোগ পেয়েছে। কয়েক বছর আগে লোকেশ রাহুলের ক্ষেত্রেও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাঁর ব্যাটিং দক্ষতা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু দক্ষ ব্যাটারদের ভিড়ে তাঁর জায়গা কোথায়! কিপার-ব্যাটার, এই ভূমিকা রাহুলকে একাদশে জায়গা ধরে রাখার সেই সুযোগ করে দিয়েছে। বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
ঋষভ পন্থ চোটের জন্য বাইরে। তবে টেস্ট কংবা টি-টোয়েন্টিতে ঋষভ অটোমেটিক চয়েস হলেও ওয়ান ডে-তে ছিলেন না। টিম ম্যানেজমেন্ট এমন কাউকে চাইছিল, তাঁর ব্যাটিং স্কিল ভালো। লোকেশ রাহুল তেমনই একজন। যে কোনও পজিশনে ব্য়াট করতে পারেন। শুরুর দিকে কিপার-ব্যাটার হিসেবে তাঁকে খেলানো নিয়ে এতটা আত্মবিশ্বাসী ছিল না টিম ম্যানেজমেন্টও। রাহুলকেও কম বিদ্রুপ শুনতে হয়নি। এমনকি তাঁর নিজের শহর বেঙ্গালুরুতে একটি ম্যাচে গ্যালারি থেকে বারবার ধোনি…ধোনি… চিৎকারে বিরক্ত করা হয়েছে। কিপিং দক্ষতা বাড়ানোয় মন দেন রাহুল। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে নিয়মিত কিপিং করেছেন। সাফল্য মিলেছে জাতীয় দলেও। এ বারের এশিয়া কাপে যেন নতুন রাহুলকে পাওয়া গিয়েছে।
ঘরের মাঠে ওয়ান ডে বিশ্বকাপ। ২০১১ সালের পর ভারতের কাছে আরও একটা সুযোগ। বিশ্বকাপে টিম ইন্ডিয়ার কিপার-ব্যাটার হিসেবে প্রথম পছন্দ লোকেশ রাহুল। তাঁর অনুপস্থিতিতে ঈশান কিষাণ ব্যাট হাতে নজর কাড়েন। ঈশান স্পেশালিস্ট কিপার। তাই তাঁর ক্ষেত্রে ব্যাটিংয়ে নজরকাড়া অনেক বেশি জরুরি। গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চাপের মুখে অনবদ্য একটা ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন ঈশান। সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে লো-স্কোরিং ম্যাচেও ব্যাট হাতে অবদান রাখেন। রাহুল ফেরায় ঈশানের জায়গা পাওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। মিডল অর্ডারে একজন বাঁ হাতি ব্যাটার থাকলে টিমেরই সুবিধা। শ্রেয়স আইয়ারের ‘চোট’ সেই রাস্তা পরিষ্কার করে। পাকিস্তান ম্যাচে শ্রেয়সের জায়গায় প্রবেশ রাহুলের। প্রত্যাবর্তনেই সেঞ্চুরি। শ্রীলঙ্কা ম্যাচে নজর কাড়লেন অনবদ্য কিপিংয়ে।
স্পিন-সহায়ক পিচে রবীন্দ্র জাডেজার বোলিং কিপিং করা যথেষ্ঠ চ্যালেঞ্জিং। তার ওপর রয়েছেন কুলদীপ যাদবের মতো রিস্ট স্পিনারও। কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে পিচ থেকে টার্নও পাচ্ছিলেন কুলদীপ-জাডেজা। তাঁদের বিরুদ্ধে অনবদ্য কিপিং রাহুলের। কিপারের ক্ষেত্রে আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক, রিভিউ নেওয়ার ক্ষেত্রে ক্যাপ্টেনকে সাহায্য করা। তেমনই বোলারকে নিয়মিত ভাবে ব্য়াটারের টেকনিক সম্পর্কে ‘তথ্য’ দিয়ে যাওয়াও জরুরি। রাহুল যেটা খুব ভালো ভাবেই করলেন। একটি ডিআরএসের ক্ষেত্রে ক্যাপ্টেনকে সটান মাথা ঝাঁকিয়ে না করে দিয়েছিলেন। যদিও ডিআরএস নেন রোহিত। রিপ্লেতে দেখা যায়, রাহুল দু’শো শতাংশ নিশ্চিত ছিলেন।
নতুন বলে বিধ্বংসী স্পেল করেন জসপ্রীত বুমরা এবং মহম্মদ সিরাজ। গতি এবং সিম মুভমেন্ট দুটোই ছিল। লেট সুইংও হচ্ছিল। মাঝে মাঝে কিপারের সামনে বল ডেড হয়ে যাচ্ছিল। আবার অনেক ডেলিভারি লাফিয়েও ধরতে হল। অসমান বাউন্সের পিচে নজর কাড়লেন কিপার রাহুল। দুটো উদাহরণ দেওয়া যাক। ইনিংসের প্রথম ওভারে ইন সুইং-আউট সুইং দুটোই করেছেন। নিজের দ্বিতীয় ওভারে প্রথম ডেলিভারি অফস্টাম্পের সামান্য বাইরে থেকে ভেতরে নিলেন। পাথুম নিশাঙ্কার ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটের পিছনে। ডান দিকে অনেকটা নীচু হয়ে ক্যাচ নিতে হল রাহুলকে।
দ্বিতীয়ত, কুলদীপের বোলিংয়ে সমরবিক্রমা ক্রিজ ছেড়ে মারতে গিয়ে লাইন মিস করেন। অনেক কিপারই ‘লোভে’ পড়ে অতিরিক্ত তাড়াহুড়ো করেন। বল হাতে জমাতে সমস্যা হয়। স্টাম্পিংয়ের সুযোগ মিস হয়। রাহুল ঠান্ডা মাথায় বল ধরলেন। বল হাতে জমতেই দ্রুতগতিতে বেল ওড়ালেন। চরিত আসালঙ্কার উইকেট প্রসঙ্গেও বলতে হয়। কুলদীপের বোলিং সুইপের চেষ্টা করেছিলেন। বল ব্য়াটের নীচে সামান্য ছোঁয়া লেগে প্যাডে, কিছু সময় হাওয়ায় ছিল। উইকেটের পিছন থেকে সামনে ঝাঁপিয়ে অনবদ্য একটা ক্যাচ। রিপ্লেতে পরিষ্কার ধরা ধরে, ব্যাটে লেগেছে বল। যদি না লাগত, লেগ বিফোর হত। রাহুল ক্যাচটা না নিলে জুটি ভাঙা যেত না।
ম্যাচ সচেতনতা, ডিআরএসের ক্ষেত্রে পরিষ্কার মতামত, কুলদীপ-জাডেজার টার্ন সামলানো, ঠান্ডা মাথায় সব সামলালেন। কলম্বোয় যেন আবিষ্কার করা গেল কিপার কুল, রাহুলকে। বিশ্বকাপের আগে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে যা বিরাট আত্মবিশ্বাস দেবে। ঈশান যদি ধারাবাহিক রান পান, শ্রেয়সের একাদশে ফেরা ক্রমশ কঠিন হবে।





