Yash Dayal: ছক্কার ফুলঝুরি! যশ দয়ালের মতো হাল হয়েছিল স্টোকস-স্টুয়ার্টদেরও, কী ভাবে ফিরেছিলেন তাঁরা?
যে বোলার এক ওভারে ৬টি ছয় হজম করেন, তাঁর ভবিষ্যৎ কী হতে পারে?
কলকাতা: নাটকীয় উত্থানে কখনও হ্যাটট্রিক থাকে, কখনও চার-ছয়ের বন্যাও থাকে। কেউ কেউ স্রেফ ছয়ের পর ছয় মেরে রাতারাতি নায়ক হয়ে যান। রবি-সন্ধেয় রিঙ্কু সিংয়ের (Rinku Singh) আশ্চর্য উত্তরণ চমকে দিয়েছে ক্রিকেট বিশ্বকে। শেষ ওভারে টানা ৫টা ছয় মেরে যে জেতানো যায়, রিঙ্কু যেন অসম্ভবকে বিশ্বাস করাতে শুরু করেছেন। আগ্রাসী ব্যাটের সামনে বোলার-নিধন নতুন নয়। বাউন্সের নিয়ম, পিচ থেকে শুরু করে মাঠের সাইজ, সবই হয় ব্যাটারদের কথা ভেবেই। বোলার যেন জন্মই নেন মার খাওয়ার জন্য। কেউ কেউ তারপরও ফিরে আসেন, প্রত্যাবর্তন হয়, আবার হয় তাঁকে নিয়ে আলোচনা। যে বোলার এক ওভারে ৬টি ছয় হজম করেন, তাঁর ভবিষ্যৎ কী হতে পারে? মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, হয়তো কয়েক রাত ঘুমোতে পারেন না। আর প্রাপ্তি হিসেবে টিম থেকে বাদ পড়া। এমন বোলারের কেরিয়ার গ্রাফে ৬টা ছয় চিরকালীন ক্ষত, দগদগে কালো দাগ। এই যে রিঙ্কুকে নিয়ে এত আলোচনা, যশ দয়াল (Yash Dayal) কি তাতে থাকছেন? থাকলেও তাঁর নামের আগে হয়তো জুড়ে দেওয়া হচ্ছে হতভাগ্য শব্দটা। এই যশ কি আবার ফিরবেন? বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla-র এই প্রতিবেদনে।
ছয় ছক্কা হাঁকানো ব্যাটারকে সকলেই মনে রাখেন। আর ছয় ছক্কা হজম করা বোলারকে ক’জন মনে রাখেন? এক ওভারে ৬টি ছয় হাঁকানো প্রথম ব্যাটার স্যার গ্যারিফিল্ড সোবার্স। ১৯৬৮ সালে নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে পেসার ম্যালকম ন্যাশের বিরুদ্ধে এই রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। ১৯৮৪ সালে রবি শাস্ত্রী রঞ্জি ট্রফিতে বরোদার বিরুদ্ধে তিলক রাজের একটি ওভারে ৬টি ছক্কা মেরেছিলেন। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ওডিআই বিশ্বকাপে এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন প্রোটিয়া হার্শেল গিবস। নেদারল্যান্ডসের ড্যান ভ্যান বুঞ্জের এক ওভারে ছয়টি ছক্কা মেরেছিলেন গিবস।
২০০৭ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট ব্রডের এক ওভারে ৬টি ছক্কা হাঁকান যুবি। ২০১৬ সালে টি-২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে ইডেনে শেষ ওভারে পরপর ৪টে ছয় মেরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিশ্বকাপ ট্রফি জিতিয়েছিলেন কার্লোস ব্রাথওয়েট। বোলার ছিলেন ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস। ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজের এক ম্যাচে আকিলা ধনঞ্জয়ের এক ওভারে ৬টি ছয় মারেন ক্যারিবিয়ান তারকা কায়রন পোলার্ড। এ তো গেল ছয় ছক্কা, চার ছক্কা মারা ব্যাটার এবং ক্ষত পাওয়া বোলারদের নাম। স্টুয়ার্ট ব্রড, বেন স্টোকসের মতো ক্রিকেটাররা পরবর্তীতে দেখিয়ে দিয়েছেন, কী ভাবে এক গভীর ক্ষতে প্রলেপ লাগানো যায়।
ম্যালকম ন্যাশ, তিলক রাজদের অবস্থা কী হয়েছিল ৬ বলে ছ’টা ছয় খেয়ে? কেরিয়ারে প্রভাব পড়েছিল কতটা? ইতিহাস আর সে ভাবে মনে রাখেনি। তখনকার ক্রিকেট এখনকার মতো দ্রুতগতির ছিল না। মিডিয়ার হামলে পড়া ছিল না। সমালোচনায় সে ভাবে বিদ্ধ হতে হয়নি। কিন্তু বেন স্টোকস ও স্টুয়ার্ট ব্রডের মতো ক্রিকেটারদের ফিরে আসাটা যে বেশ কঠিন ছিল, সন্দেহ নেই। পরিশ্রমকেই সাফল্যের মন্ত্র করে প্রত্যাবর্তনের মঞ্চ সাজিয়েছিলেন তাঁরা।
২০১০ সালের টি-২০ বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ড দলের সদস্য ছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড। ২০১৯ সালের ওডিআই বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ছিলেন বেন স্টোকস। ২০১৯ সালের ওডিআই বিশ্বকাপের ফাইনালে ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেয়েছিলেন বেন স্টোকস। উল্লেখ্য, ইংল্যান্ডের তারকা অলরাউন্ডার বেন স্টোকস ৯১টি টেস্টে ১৯৪টি উইকেট, ১০৫টি ওডিআই ম্যাচে ৭৪টি উইকেট ও ৪৩টি টি-২০ ম্যাচে ২৬টি উইকেট নিয়েছেন। এই তিন ফর্ম্যাটে যথাক্রমে স্টোকস করেছেন ৫৭১২, ২৯২৪ ও ৫৮৫ রান। পাশাপাশি স্টুয়ার্ট ব্রড ১৬১টি টেস্টে ৫৭৬টি উইকেট, ১২১টি ওডিআইতে ১৮৭টি উইকেট এবং ৫৬টি টি-২০-তে ৬৫টি উইকেট নিয়েছেন। এই তিন ফর্ম্যাটে যথাক্রমে ব্রড করেছেন ৩৫৮৪, ৫২৯ ও ১১৮ রান। এই তারকা ক্রিকেটারদের উত্থান থেকেই শিক্ষা নিতে পারেন যশ। কে বলতে পারে ভবিষ্যতে হয়তো এই যশই ভারতকে কোনও বিশ্বকাপে জেতাতেই পারেন।