শুরুতেই স্মিথকে ফেরাও

অ্যাডিলেড টেস্টের প্রথম দিনের খেলা নিয়ে TV9 বাংলা ডিজিটালের হয়ে কলম ধরলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়।

শুরুতেই স্মিথকে ফেরাও
Follow Us:
| Updated on: Dec 17, 2020 | 7:11 PM

শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়

ভারত ২৩৩-৬(৮৯ ওভার)

বিরাটের আউটটার সময় খুব আফসোস হচ্ছিল। যে ভাবে ব্যাট করছিল, শেষ কয়েকটা ওভার থাকলে ও হয়তো সেঞ্চুরিটাই করে ফেলত। আর সেটা হলে, প্রথম দিনের শেষে ভারতের স্কোর আরও ভালো জায়গায় থাকত। তবু বলব, অ্যাডিলেডের প্রথম দিনটা খুব খারাপ যায়নি ভারতের। ম্যাচ এখনও ফিফটি-ফিফটি। কালকের প্রথম সেশনটার উপর অনেকটাই নির্ভর করবে ম্যাচের ভাগ্য। একটা প্রশ্ন অনেকেই করছে, গোলাপি টেস্টের প্রথম ইনিংসে ভারতের টার্গেট কী হওয়া উচিত? আমার অঙ্ক বলছে, ২৭৫-২৮০-র কাছাকাছি রানটা নিয়ে যেতে পারলে লড়াই করার মতো রসদ পেয়ে যাবে সামি-বুমরারা। প্রথম দিনের শেষ ঋদ্ধিমান সাহা আর রবিচন্দ্রন অশ্বিন ক্রিজে আছে। এই জুটিটাকে লম্বা খেলার চেষ্টা করতে হবে। কারণ, এটাই ভারতের শেষ জুটি। ওদের সঙ্গে যদি বোলাররা একটু সঙ্গত করতে পারে, তা হলে টার্গেটটা ছুঁতে অসুবিধা হবে না।

সহজ কথা হল, ৩০০-র কাছাকাছি রান তোলার পর বিরাটদের লক্ষ্য হওয়া উচিত স্টিভ স্মিথ। ডেভিড ওয়ার্নার না থাকায় অস্ট্রেলিয়া টিমের ব্যাটিং গভীরতা কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে। তা ছাড়া, জাস্টিন ল্যাঙ্গারের এই অস্ট্রেলিয়া পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। অ্যাডিলেডে জয়ের স্বপ্ন দেখার জন্য তাই অজিদের তাকিয়ে থাকতে হবে স্মিথের দিকে। কিছুটা ফর্মে থাকা মার্নাস লাবুসেন, ক্যাপ্টেন টিম পেইন আর ট্র্যাভিস হেডদের উপরেও আস্থা রাখা যায়। তাই বুমরা, সামিরা যদি শুরুতেই স্মিথকে ফিরিয়ে দিতে পারে, তা হলে কিন্তু আত্মবিশ্বাসে জোরাল ধাক্কা খাবে অস্ট্রেলিয়া। সেই সুযোগটা নিতেই হবে ভারতীয় বোলারদের। অ্যাডিলেডের প্রথম দিনটা একটা জিনিস পরিষ্কার করে দিল, বোলারদের জন্য অনেক কিছু রয়েছে পিচে। মিচেল স্টার্ক, জস হ্যাজেলউডরা ছোট ছোট স্পেলে এসে বল মুভ করিয়েছে। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের খেলতে বেশ সমস্যাই হয়েছে। এটা মাথায় রাখলে ভারতীয় বোলাররাও সফল হবে। বুমরাকে নিয়ে প্রচুর প্রত্যাশা। সামিও অভিজ্ঞ বোলার। শুধু উমেশকে নিজের লাইন-লেন্থটা ঠিক রাখতে হবে। যত বেশি লুজ বল দেবে, ততই সেট হয়ে যাবে বিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা। অশ্বিনের কাছ থেকেও দারুণ কিছু দেখতে চাইছি। ওর প্রচুর ভ্যারিয়েশন। বিপক্ষকে যা চাপে ফেলবেই।

ম্যাচের প্রিভিউতে লিখেছিলাম, প্রথম টেস্টের জন্য ভারত যে টিমটা বেছেছে, সেটা অন্তত আমার পছন্দ হয়নি। পৃথ্বী শ-র বদলে শুভমন গিলকে খেলানোর পক্ষে ছিলাম। কেন, সেটা দিনের দ্বিতীয় বলে পৃথ্বী (০) নিজেই প্রমাণ করে দিয়েছে। স্টার্ক নতুন বলটা যে ভিতরে আনার চেষ্টা করবে সেটা ওর বোঝা উচিত ছিল। টেস্ট ওপেনারের কাছে তো এই টেকনিকটাই কাম্য। সেই নিরীখে যদি বলি, তা হলে পৃথ্বীর থেকে শুভমন অনেক এগিয়ে। মায়াঙ্কও (১৭) খুব বেশি এগোতে পারেনি। তবে ওখান থেকে খেলাটা ধরে নিয়েছিল পূজারা আর বিরাট। পূজারা গত বার অস্ট্রেলিয়ায় প্রচুর রান করেছিল। ওর অসীম ধৈর্যের জন্য। আজও সেটাই শুরু করেছিল। ১৬০ বলে ৪৩ করেও লিয়ঁর বলে লাবুসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরল।

বিরাটকে তবু অপ্রতিরোধ্য দেখাচ্ছিল। ও খুব ভালো করে জানে, এই একটাই ম্যাচ খেলছে। দুটো ইনিংস আছে ওর হাতে, এটা ভেবেই নেমেছিল ক্রিজে। বিরাট কেন ভারতের সেরা ব্যাটসম্যান, সেটা আরও একবার দেখতে পেলাম। প্রয়োজনে রক্ষণাত্মক হয়েছে, প্রয়োজনে আক্রমণাত্মক খেলেছে। এটাই বিরাটের ক্লাস। তবু কেন ওকে ক্যাপ্টেন্সি বিতর্ক তুলে চাপে রাখা হয়, জানি না। বিরাট ৭৪ রানের ইনিংসটা যদি না খেলত, তা হলে কিন্তু ভারতই চাপে পড়ে যেত। রান আউট না হলে সেঞ্চুরিটাও করে ফেলত।

রাহানের শুরুটা ভালো ছিল। সাবলীলই খেলছিল।কিন্তু স্টার্কের ওই বলটা সামলাতে পারল না। হনুমা বিহারীও (১৬) যেমন। ক’দিন আগে দিন-রাতের প্রস্তুতি ম্যাচটাতে সেঞ্চুরি করেছিল। সেই কারণেই ওকে প্রথম টেস্টে টিমে রাখা হয়েছিল। কিন্তু হ্যাজেলউডের ভিতরে আসা বলটা বুঝতে না পেরে উইকেট দিয়ে গেল।

টেস্ট ম্যাচের অঙ্কটা সেশন অনুযায়ী হয়। বিরাটের থেকে ভালো আর কে জানে। কালকের তিনটে সেশন যদি ভারত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে, তা হলে কিন্তু অ্যাডিলেড দখলে নিতে পারে বিরাটরা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত ২৩৩-৬ (বিরাট ৭৪, পূজারা ৪৩, রাহানে ৪২, স্টার্ক ২-৪৯, হ্যাজেলউড ১-৪৭, কামিন্স ১-৪২, লিয়ঁ ১-৬৮)।