চুক্তি বিতর্কে জট পাকিয়ে আইএসএল থেকে দূরে সরছে ইস্টবেঙ্গল

কোয়েসের (Quess) সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙার পর থেকেই ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে আগ্রহ দেখায়নি আর কোনও ইনভেস্টার (Investor)। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) উদ্যোগে এগিয়ে আসে শ্রী সিমেন্ট (Shree Cement)। কিন্তু চুক্তিপত্র হাতে পাওয়ার পরই দু'পক্ষের সমস্যা শুরু।

চুক্তি বিতর্কে জট পাকিয়ে আইএসএল থেকে দূরে সরছে ইস্টবেঙ্গল
শ্রী সিমেন্ট-ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে স্বাক্ষরিত টার্মশিট। ছবি: সূত্র
Follow Us:
| Updated on: Jun 01, 2021 | 7:25 PM

কলকাতা: শ্রী সিমেন্টের (Shree Cement) সঙ্গে চুক্তি কি আদৌ হবে ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal)? ময়দানে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এটাই। শ্রী সিমেন্টের টার্ম শিটে কী এমন রয়েছে, যার জন্য এগিয়েও পিছিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছেন লাল-হলুদ কর্তারা? ইনভেস্টারদের শর্ত মানলে কি সত্যিই বিকিয়ে যাবে ক্লাব? আর কোনও গুরুত্বই থাকবে না কর্মকর্তাদের? টিভি নাইনের হাতে আসা টার্ম শিট (Termsheet) সোজাসাপ্টা সাতটা বিষয় তুলে ধরেছে শ্রী সিমেন্ট (Shree Cement)। ১) সব ধরণের খেলা এবং তার প্রমোশনের ক্ষেত্রে ক্লাব ও শ্রী সিমেন্টের ‘যুগ্মভাবে’ কাজ করবে। ২) ইস্টবেঙ্গল ব্র্য়ান্ডকে ব্যবহার করার পূর্ণ চুক্তি থাকবে। লোগো, নাম, রং থেকে শুরু করে ক্লাবের সোশ্যাল মিডিয়া হ্য়ান্ডল অর্থাত্‍ ওয়েবসাইট, টুইটার, ফেসবুক ব্যবহারের পূর্ণ অধিকার থাকবে ইনভেস্টরের। ৩) ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের যাবতীয় সম্পত্তি, সত্ত্বাধিকার, স্টেডিয়াম, অফিস, ক্লাব তাঁবু, অ্যাকাডেমির আবাসন, চুক্তির পর থেকে নতুন কোম্পানির আওতায় আসবে। ৪) ফুটবল টিম সহ ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের যাবতীয় পুরনো বকেয়া মেটানোর দায় শুধু ক্লাবেরই। এর সঙ্গে শ্রী সিমেন্ট বা নতুন কোম্পানি জড়িত থাকবে না। ৫) চুক্তির মধ্যে থাকাকালীন ইস্টবেঙ্গল ক্লাব যে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে হবে শ্রী সিমেন্টের। প্রয়োজন পড়লে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের যে কোনও সম্পত্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বোর্ডের অনুমতি নিতে হতে পারে। ৬) চুক্তিবদ্ধ থাকাকালীন ফুটবল সংক্রান্ত বা অন্যান্য কোনও বিষয়ে কাউকে কোনও সত্ত্বাধিকার দেওয়ার আগে বোর্ডের অনুমতি নিতে হবে। ৭) শ্রী সিমেন্ট যে পরিস্থিতিতে চুক্তি বাতিল করতে পারে। তার জন্য ৯০ দিনের নোটিশ দেবে তারা।

আরও পড়ুন: হাঁটুর চোটে অলিম্পিক থেকে সরলেন ক্যারোলিনা

কোয়েসের (Quess) সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙার পর থেকেই ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে আগ্রহ দেখায়নি আর কোনও ইনভেস্টার (Investor)। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) উদ্যোগে এগিয়ে আসে শ্রী সিমেন্ট (Shree Cement)। কিন্তু চুক্তিপত্র হাতে পাওয়ার পরই দু’পক্ষের সমস্যা শুরু। ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) তরফে বলা হয়েছিল, ফুটবল, ক্রিকেট, অ্যাথলেটিক্স থেকে শুরু সম্পূর্ণ স্পোর্টিং রাইটস (Sporting Rights) এবং ক্লাবের অন্যান্য ভূমিকা, এমনকি রোজকার কাজও নতুন বোর্ডের তত্ত্বাবধানেই হবে। তাতে ক্লাবের আর গুরুত্ব থাকবে না। কার্যত ক্লাব বিক্রির সামিল হবে তা। টানাপোড়েনে আটকে যায় ইস্টবেঙ্গল-শ্রী সিমেন্ট চুক্তি। ঘটনা হল, ইনভেস্টর আর স্পনসরের মধ্যে ফারাক বুঝতে পারছেন না লাল-হলুদ কর্তারা। ইনভেস্টার অর্থ লগ্নি করার পাশাপাশি মুনাফাও বুঝে নেবে। আর শ্রী সিমেন্ট পূর্ণ স্বাধীনতা চাইছে। যথেষ্ট সময় দেওয়া হলেও ক্লাব চুক্তিপত্রে সই করেনি। এখনও তা নিয়ে তীব্র ধোঁয়াশা। যদি দ্রুত চুক্তিপত্রে সই না করে ইস্টবেঙ্গল, এ বার আইএসএল খেলা হবে কিনা, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। অন্যান্য বিষয় তাও মেনে নিলেও অ্যাক্টিভিটি ক্লজ় নিয়েই যত আপত্তি ক্লাবের। কোয়েস থাকাকালীন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের নতুন অফিস হয়েছিল রাজারহাটে। আইনজীবীদের পরামর্শ নিয়ে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তাতে ক্লাবও পাল্টা কয়েকটা বিষয়ে তাদের আপত্তি তুলে ধরেছে। ১) চুক্তিতে স্পষ্ট ব্যাখ্যা করা হয়েছে, ইস্টবেঙ্গল ক্লাব ও শ্রী সিমেন্ট যৌথভাবে খেলাধুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না, যৌথ উদ্যোগের কথা বলা হলেও আসলে দুটো পার্টি এক হয়ে কাজ করার কথা ভাবছে। এই ‘যৌথ উদ্যোগ’কে যেন পুরোপুরি মর্যাদা দেওয়া হয়। ২) ক্লাবের যাবতীয় সম্পত্তি, শুধুমাত্র ইস্টবেঙ্গল ক্লাবেরই। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ক্লাব তাঁবু, ক্লাবের স্পোর্টিং রাইটস চুক্তির আওতায় আসবে। কিন্তু আশ্চর্যের হল, ‘কনভেন্স’ বা হস্তান্তর শব্দটা ব্যবহার করা হয়নি টার্ম শিটে। এটা ছাড়া কোনও ভাবেই চুক্তিতে সই করা সম্ভব নয় ক্লাবের পক্ষে। ৩) ২০ শতাংশ শেয়ারের কমে কোনও ভাবেই ক্লাব রাজি নয়। ৪) ক্লাব তাঁবু ও অন্যান্য পরিকাঠামো ব্যবহারের অধিকার সব সময় থাকবে ক্লাবের। ক্লাব তাঁবু বা অন্যান্য পরিকাঠামো ব্যবহারের জন্য ক্লাবের কোনও অনুমতির দরকার নেই। খেলা সংক্রান্ত বিষয় ছাড়াও ক্লাবের আরও অনেক ভূমিকা রয়েছে। সেগুলো যথাযথ পালনের জন্য এই অধিকার সব সময় থাকবে ক্লাবের। চুক্তি নিয়ে টালবাহানা আর মানতে চাইছে না শ্রী সিমেন্ট। কর্ণধার হরিমোহন বাঙ্গুর স্পষ্ট বলেছেন, ‘এমন চলতে থাকলে ইস্টবেঙ্গলে আর থাকব না আমরা।’ শ্রী সিমেন্টের এই সতর্কবার্তা কি ঘুম ভেঙেছে ইস্টবেঙ্গলের? মনে তো হয় না। যত দেরি হচ্ছে, ততই আইএসএল দূরে সরছে ইস্টবেঙ্গল থেকে।