মঙ্গলগ্রহের ফিনফিনে বায়ুমণ্ডল থেকে অক্সিজেন বের করেছে রোভার পারসিভের‍্যান্স

রোভারের মধ্যে রয়েছে একটি যন্ত্রাংশ। আকারে ছোট হলেও কর্মক্ষমতায় বাজিমাত করায় দক্ষ। এর নাম MOXIE। এই MOXIE- র সাহায্যেই মঙ্গলগ্রহের ফিনফিনে বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে অক্সিজেন ছেঁকে বের করা হয়েছে।

মঙ্গলগ্রহের ফিনফিনে বায়ুমণ্ডল থেকে অক্সিজেন বের করেছে রোভার পারসিভের‍্যান্স
মঙ্গলগ্রহের অত্যন্ত পাতলা বায়ুমণ্ডল থেকে অক্সিজেন বের করে আনা মোটেও সহজ কাজ নয়। বরং একপ্রকার অসম্ভব। কিন্তু এই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছে রোভার পারসিভের‍্যান্স।
Follow Us:
| Updated on: Apr 22, 2021 | 7:13 PM

ফের রেকর্ড করেছে নাসার রোভার পারসিভের‍্যান্স। এবার মঙ্গলগ্রহের অত্যন্ত পাতলা বায়ুমণ্ডলীয় স্তর থেকে অক্সিজেন বের করে এনেছে এই রোভার। মার্কিন স্পেস এজেন্সি জানিয়েছে, লাল গ্রহের বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড সংগ্রহ করে, তাকে শ্বাসযোগ্য অক্সিজেনে পরিণত করেছে পারসিভের‍্যান্স। এর আগে এমন অসাধ্য সাধন কেউই করতে পারেনি। তাই অভাবনীয় এই সাফল্যের পাশাপাশি প্রথম এমন কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলার খেতাবও জুড়েছে নাসার ‘মার্স রোভার’- এর মাথায়।

গত মঙ্গলবার এই অসাধ্য সাধন করেছে রোভার পারসিভের‍্যান্স। মঙ্গলগ্রহের অত্যন্ত পাতলা বায়ুমণ্ডল থেকে অক্সিজেন বের করে আনা মোটেও সহজ কাজ নয়। বরং একপ্রকার অসম্ভব। কিন্তু এই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছে রোভার পারসিভের‍্যান্স। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি লাল গ্রহের মাটি ছুঁয়েছিল রোভার। প্রায় সাতমাস সফর করে মঙ্গলগ্রহে পৌঁছেছে এই ছয় চাকার যান। গত ২০ এপ্রিল মঙ্গলের বুকে ৬০তম দিন ছিল রোভারের। আর সেই দিনই এই অসাধ্য সাধন করেছে পারসিভের‍্যান্স।

রোভারের মধ্যে রয়েছে একটি যন্ত্রাংশ। আকারে ছোট হলেও কর্মক্ষমতায় বাজিমাত করায় দক্ষ। এর নাম MOXIE বা Mars Oxygen In-Situ Resource Utilization Experiment। এই MOXIE- র সাহায্যেই মঙ্গলগ্রহের ফিনফিনে বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে অক্সিজেন ছেঁকে বের করা হয়েছে। ৫ গ্রাম অক্সিজেন উৎপাদন করেছে MOXIE। যার সাহায্যে ১০ মিনিট শ্বাস নিতে পারবেন একজন নভশ্চর।

MOXIE

ইলেকট্রোলাইসিস- এর সাহায্যে কাজ করে রোভারে থাকা যন্ত্রাংশ MOXIE। কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে অক্সিজেন নির্গমন করার জন্য অতিরিক্ত তাপের ব্যবহার করা হয় এক্ষেত্রে। মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডলের ৯৫ ভাগ জুড়েই রয়েছে কার্বন ডাই অক্সাইড। বাকি ৫ শতাংশের মধ্যে ১ শতাংশে রয়েছে নাইট্রোজেন আর আর্গন। অক্সিজেন প্রায় নেই বললেই চলে। লাল গ্রহে মূলত প্রাণের সন্ধান করতেই গিয়েছে নাসার রোভার। সেই অভিযানে এভাবে অক্সিজেন পাওয়া সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কারণ শুধু শ্বাস নেওয়ার ক্ষেত্রে নয়, রকেটের জ্বালানি হিসেবে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। নাসার মতে মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডলে প্রায় ৭ মেট্রিক টন রকেটের জ্বালানি রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ২৫ মেট্রিক টন অক্সিজেন। তাই পৃথিবী থেকে ২৫ টন অক্সিজেন ট্যাঙ্ক বয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে মঙ্গলগ্রহেই একটি এক টনের ‘অক্সিজেন কনভারসান’ মেশিন বসানো বুদ্ধিমানের কাজ।

আরও পড়ুন- রোবট যখন বারটেন্ডার! বানাতে পারে বিভিন্ন ধরণের ককটেল-মকটেল, বলতে পারে জোকসও

জানা গিয়েছে, এক ঘণ্টায় ১০ গ্রাম শ্বাসযোগ্য অক্সিজেন উৎপাদন করতে পারে MOXIE। তাই আগামী দু’বছরে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে অন্তত ৯ বার এই যন্ত্রাংশকে কাজ করানোর পরিকল্পনা রয়েছে নাসার বিজ্ঞানীদের। আগামী দিনে মঙ্গলের বুকে নভশ্চরদের নিয়ে গিয়ে কোনও অভিযান হলে, হয়তো তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের উৎপাদনও সেখানেই করা হবে।