মহুয়া মৈত্র
বঙ্গ রাজনীতির অন্যতম চর্চিত মুখ মহুয়া মৈত্র। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের সৈনিক। কৃষ্ণনগরের সাংসদ ছিলেন। বর্তমানে সংসদ থেকে বহিষ্কৃত। তবে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বরাবর ভরসাস্থল থেকেছেন তিনি। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে আবারও কৃষ্ণনগর থেকেই মহুয়াকে প্রার্থী করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
২০১০ সালে তৃণমূলে যোগ দেন মহুয়া। তারপর থেকে রাজনীতির ময়দানে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মহুয়াকে। নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন বার বার। লোকে বলে, রাজনীতির ময়দানে এক কর্পোরেট স্টাইলের আমদানি করেছিলেন তিনি। মহুয়ার রাজনীতির দুনিয়ায় পা রাখাটাও বেশ চমকপ্রদ। বিলেতে নামী কর্পোরেট সংস্থার লোভনীয় পদ ছেড়ে রাজনীতিতে আসেন তিনি। লন্ডনে এক নামী সংস্থায় ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন মহুয়া। সেসবের পাট চুকিয়ে ২০০৯ সালে রাজনীতিতে পা রাখেন তিনি।
শুরুটা হয়েছিল যুব কংগ্রেসের হাত ধরে। রাহুল গান্ধীর ‘আম আদমির সিপাহি’ কর্মসূচিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল মহুয়ার। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক বেশিদিন টেকেনি। ২০১০ সালেই তিনি যোগ দেন তৃণমূলে। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে নদিয়ার করিমপুর থেকে মহুয়াকে দাঁড় করান মমতা। দলনেত্রীর ভরসার মান রাখেন মহুয়াও। জয়ী হন। বিধায়ক হন। করিমপুরের আমজনতার কাছেও বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিলেন মহুয়া। এর আগে এমন ইংরেজি আদব-কায়দায় অভ্যস্ত, কর্পোরেট দুনিয়া থেকে আসা রাজনীতিককে দেখেনি করিমপুরবাসী।
বিধানসভা ভোটে সাফল্য ও করিমপুরে তাঁর কাজ নজরে এসেছিল দলের শীর্ষ নেতৃত্বেরও। এরপর ২০১৯ সালেই দিল্লির সংসদীয় রাজনীতির জন্য মহুয়াকে বেছে নেন মমতা। উনিশের লোকসভা নির্বাচনে মহুয়াকে প্রার্থী করেন কৃষ্ণনগর থেকে। জিতে সংসদে গিয়ে দলের হলে বার বার সুর চড়িয়েছেন মহুয়া। ঝাঁঝালো প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারকে। এসবের মধ্যেই সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের সাংগঠনিক বিস্তারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। গোয়ার তৃণমূলের ইনচার্জও করা হয়েছিল মহুয়াকে। তবে সাম্প্রতিক ক্যাশ ফর কোয়ারি বিতর্কের মুখে সাংসদ পদ খোয়াতে হয় মহুয়াকে। সংসদীয় এথিক্স কমিটি মহুয়াকে বহিষ্কারের পক্ষে সুপারিশ করেছিল আর এরপরই কড়া পদক্ষেপ করা হয় মহুয়ার বিরুদ্ধে।
বহু চর্চিত তৃণমূলের এই মহিলা সাংসদ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিতর্কেও জড়িয়েছেন। কখনও দু’পয়সার সাংবাদিক মন্তব্যে, কখনও কালী মন্তব্যকে কেন্দ্র করে তুমুল বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন মহুয়া। কালী মন্তব্যের সময় বিতর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল, যে তৃণমূলও সেই মন্তব্যের থেকে দলগতভাবে দূরত্ব তৈরি করেছিল।