করোনার ভয়ে এগিয়ে এল না কেউ, হিন্দু পড়শির দেহ সৎকার করলেন মুসলিমরা

খুশির ঈদের নামাজ পড়ে তারা নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছিলেন। তখন হঠাৎই খবর পেলেন গ্রামেরই বছর বাহাত্তরের হরেন্দ্রনাথ সাধুখাঁ গত হয়েছেন।

করোনার ভয়ে এগিয়ে এল না কেউ, হিন্দু পড়শির দেহ সৎকার করলেন মুসলিমরা
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: May 15, 2021 | 12:03 AM

হুগলি: আশিক মোল্লা, গোলাম সুবানী, গোলাম সারবার, সেখ সানিরা হুগলির পোলবা-দাদপুর ব্লকের বাবনান গ্রামের বাসিন্দা। খুশির ঈদের নামাজ পড়ে তাঁরা নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছিলেন। হঠাৎই খবর পেলেন গ্রামেরই বছর বাহাত্তরের হরেন্দ্রনাথ সাধুখাঁ গত হয়েছেন। কিন্তু করোনার ভয়ে তাঁর দেহ সৎকারে কেউ এগোচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার রাত থেকে পড়ে রয়েছে দেহ। এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে এলেন আশিকরাই। ঈদের দিন হিন্দু প্রতিবেশীর দেহ সৎকারে কাঁধ এগিয়ে দিলেনএই মুসলিম যুবকরা।

জানা গিয়েছে, গত তিনদিন ধরে প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। কিন্তু করোনা পরীক্ষা করার আগেই বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। এদিকে বৃদ্ধের করোনাতেই মৃত্যু হয়েছে, এই আশঙ্কা করে কোনও প্রতিবেশী তাঁর বাড়ির আশেপাশে ঘেঁষছেন না। করোনা রিপোর্ট না থাকায় প্রশাসনেরও সাহায্য নিতে পারছিল না পরিবার। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে মরদেহ আগলে বসে থাকেন তাঁরা। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বাড়িতেই পড়ে থাকে মৃতদেহ।

এদিকে কারও সাহায্য় না পেয়ে বৃদ্ধের ছেলে চন্দন সাধুখাঁ অসহায় হয়ে পড়েন। সেই খবর পৌঁছয় আশিক, গোলাম, সানিদের কাছে। ঈদের নামাজ শেষ হতেই তাঁরা সোজা হাজির হন হন প্রতিবেশী সাধুখাঁর বাড়িতে। নিজেরাই খাট বেঁধে মৃতদেহ ফুল দিয়ে সাজিয়ে মৃতদেহ কাঁধে তোলেন। নিয়ে যান স্থানীয় শিরপুল শ্মশানে। বৃদ্ধের ছেলে চন্দনের সঙ্গে দাহকার্যেও হাত লাগান তাঁরা।

আরও পড়ুন: খাস কলকাতায় শ্বাসকষ্টের রোগীকে ফেরাল ৭ হাসপাতাল, ভোর রাত পর্যন্ত ঘুরেও হল না করোনা পরীক্ষা

করোনা অতিমারিতে প্রতিনিয়ত মৃত্যুভয় মানুষকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। কারও মৃত্যু হলে দাহ করার লোক পাওয়াও দুষ্কর হয়ে উঠেছে। এমন একটা অস্থির ও অসহায় সময়ে ভয় সরিয়ে সম্প্রীতি ও একতার বার্তা দিলেন আশিক, গোলাম, সানিরা। বুঝিয়ে দিলেন এটাই বাংলার সংস্কৃতি।