‘হাচিকো’-র স্মৃতি উসকে দিল টুকু, মালিকের অপেক্ষায় কখনও ছাদে, কখনও বা সিঁড়ির কোণায় উঁকি দিচ্ছে একজোড়া মায়াভরা চোখ!

গোষ্ঠবাবুর প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বাড়িত গিয়ে মাঝেমধ্যেই টুকুকে খাবার দিয়ে আসা হচ্ছে। কিন্তু খাবার মুখে তুলছে না সে। রাস্তা দিয়ে কেউ গেলেই ছাদ থেকে একজোড়া মায়াভরা চোখ উঁকি দিচ্ছে মালিক মালকিনের প্রতীক্ষায়। এই বুঝি বাড়ি এলেন তাঁরা! কিন্তু, মালিক মালকিনের দেখা না পেয়ে কেঁদে চলেছে সে।

'হাচিকো'-র স্মৃতি উসকে দিল টুকু, মালিকের অপেক্ষায় কখনও ছাদে, কখনও বা সিঁড়ির কোণায় উঁকি দিচ্ছে একজোড়া মায়াভরা চোখ!
মনভার টুকুর, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: May 18, 2021 | 9:42 PM

দক্ষিণ দিনাজপুর: অধ্যাপক মারা গেলেও প্রায় তেরো বছর নিয়ম মেনে স্টেশনে বসেই মালিকের অপেক্ষা করত হাচিকু। দিনের পর দিন সেই অনন্ত অপেক্ষা নজরে পড়েছিল পথচলতি আমজনতারও। সূদুর জাপান থেকে আচমকা বাক্সবন্দি হয়ে জার্মানিতে এসে পড়া ছোট্ট সারমেয়টিকে আশ্রয় দিয়েছিলেন এক অধ্যাপক। নামকরণ করেছিলেন হাচিকো। হৃদয়বিদারক সেই কাহিনী সিনেমার পর্দায় দেখে চোখের জল ফেলেননি এমন মানুষ বোধহয় নেই। এ বার সেই হাচিকোর স্মৃতিই যেন উসকে দিল টুকু।

বছর চারেক আগে, বালুরঘাটের দিশারী এলাকার বাসিন্দা গোষ্ঠ সাহা বাড়ির পাশের ড্রেনে একটি শিশু সারমেয়কে পড়ে থাকতে দেখেন। ছোট্ট ছানাটিকে দেখে আর সামলাতে পারেননি গোষ্ঠবাবু। সঙ্গে সঙ্গে তাকে তুলে নিয়ে আসেন বাড়িতে। তারপর থেকে সাহা দম্পতির স্নেহযত্নেই বেড়ে উঠতে থাকে খুদে সারমেয়। নাম হয় টুুকু। গোষ্ঠবাবু ও তাঁর স্ত্রী লতিকা দেবীর দুই কন্যা সন্তানের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর ষাটোর্ধ্ব প্রবীণ দম্পতিকে রীতিমতো পাহারা দিয়ে রাখত টুকুই। কিন্তু, সম্প্রতি গত শুক্রবার ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হন গোষ্ঠবাবু। চিকিৎসার জন্য প্রথমে তাঁকে বালুরঘাট ও পরে মালদায় মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেদিন, গোষ্ঠবাবুর সঙ্গে ছিলেন লতিকাদেবীও। মালদা হাসপাতালে গোষ্ঠবাবুকে ভর্তি করার পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনিও। পরে দেখা যায়, লতিকাদেবী করোনায় আক্রান্ত। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে মালদা কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে, শনিবার সকালেই মারা যান গোষ্ঠবাবু। সেদিনই, করোনায় মারা যান লতিকাদেবীও। ফলে, শুক্রবার থেকেই বাড়িতে একা পড়ে গিয়েছে টুকু।

গোষ্ঠবাবুর প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বাড়িতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই টুকুকে খাবার দিয়ে আসা হচ্ছে। কিন্তু খাবার মুখে তুলছে না সে। রাস্তা দিয়ে কেউ গেলেই ছাদ থেকে একজোড়া মায়াভরা চোখ উঁকি দিচ্ছে মালিক মালকিনের প্রতীক্ষায়। এই বুঝি বাড়ি এলেন তাঁরা! কিন্তু, মালিক মালকিনের দেখা না পেয়ে কেঁদে চলেছে সে। বাড়ি ছেড়েও যেতে চায়নি টুকু। ঘরে কেউ খাবার দিতে এলেই সিঁড়ির বাঁকে অনিমেষ দৃষ্টিতে নিজের মনিবেরই খোঁজ করে চলেছে সে। টুকুর এই অবস্থা দেখে মন ভার এলাকাবাসীদেরও। খবর দেওয়া হয়েছে গোষ্ঠবাবুর দুই মেয়েকেও। পোষ্যের এহেন অপেক্ষা চোখে জল এনেছে স্থানীয়দের।

আরও পড়ুন: ডেকে ডেকে সাড়া পাচ্ছিলেন না স্ত্রী, একটু খোঁজ করতে হাসপাতালেই মিলল করোনা আক্রান্ত স্বামীর ঝুলন্ত দেহ!