মালদার পর বহরমপুর, গঙ্গায় ভাসছে মৃতদেহ

তবে, গঙ্গায় লাশ ভেসে ওঠা এই প্রথম নয়। গঙ্গায় সারসার করোনা রোগীর দেহ ভেসে ওঠা, নদীর তীরে বালি চাপা দেওয়া অগুনতি দেহের খবরে বঙ্গে গঙ্গা অববাহিকার জেলাগুলিতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে আগেই। চলতি মাসেই মালদার মানিকচকে গঙ্গায় ভেসে আসে প্লাস্টিকে জোড়া মৃতদেহ।

মালদার পর বহরমপুর, গঙ্গায় ভাসছে মৃতদেহ
ভাসছে মৃতদেহ, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jun 08, 2021 | 6:26 PM

মুর্শিদাবাদ: করোনাকালে ফের ভয় ধরাচ্ছে গঙ্গা (Ganga River)। মঙ্গলবার দুপুরে, বহরমপুরে গঙ্গায় ভেসে উঠল এক মহিলার মৃতদেহ! মাঝনদীতে এইভাবে মৃতদেহ ভাসতে দেখে আতঙ্কিত এলাকাবাসী।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এদিন দুপুর দেড়টা নাগাদ ফরাসডাঙ্গার দিকে কলেজ ঘাটের কাছে আচমকা নদীর জলে এক মহিলার মৃতদেহ (dead Body) ভাসতে দেখা যায়। কীভাবে কোথা থেকে সেই মৃতদেহ এল, তা নিয়ে রীতিমতো শঙ্কিত এলাকাবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা শোভন সরকার বলেন, “দুপুর দেড়টা নাগাদ বডিটা ভাসছে দেখি। এই সময়ে কোথা থেকে ওই দেহ ভেসে এল তা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়েছে।” অরূপ মণ্ডল নামে আরও এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “শুধু দেখছি জলে লাশ ভাসছে। এই জলই আমরা খাই। ওই মহিলা করোনা রোগী (COVID patient) ছিলেন কি না কী করে জানব! এই জল থেকে কতটা ক্ষতি হতে পারে তাও তো কারো হেলদোল নেই।” লাশ ভেসে ওঠার খবর ছড়িয়ে পড়তেই তড়িঘড়ি খবর দেওয়া হয় স্থানীয় থানায়। খবর দেওয়া হয় পুরসভাতেও। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনের তরফে এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপই করা হয়নি। লাশ ভাসতে ভাসতে চলে গিয়েছে অন্যত্র।

তবে, গঙ্গায় লাশ ভেসে ওঠা এই প্রথম নয়। গঙ্গায় সারসার করোনা রোগীর দেহ ভেসে ওঠা, নদীর তীরে বালি চাপা দেওয়া অগুনতি দেহের খবরে বঙ্গে গঙ্গা অববাহিকার জেলাগুলিতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে আগেই। চলতি মাসেই মালদার মানিকচকে গঙ্গায় ভেসে আসে প্লাস্টিকে জোড়া মৃতদেহ (Dead Body)। ওই দুই মৃতদেহ করোনা রোগীর হতে পারে এমন আশঙ্কায় রাজ্যের জনস্বাস্থ্য দফতরের সরবরাহ করা পানীয় জল ব্যবহারও কার্যত বন্ধ করেছেন মালদাবাসী। কারণ, এর আগে উত্তর প্রদেশ এবং বিহারে গঙ্গা নদীতে করোনা আক্রান্তদের মৃতদেহ ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনায় দেশ জুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। সেই সময় ঝাডখণ্ড হয়ে গঙ্গা নদীপথে মৃতদেহ বঙ্গে আসতে পারে বলে সতর্কতা জারি করে রাজ্য প্রশাসন। গঙ্গা অববাহিকার জেলাগুলিতেও বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা করে প্রশাসন। এমনকী গঙ্গায় নেমে স্নান করাও বন্ধ করে দেওয়া হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কিন্তু, তারপরেও নজর এড়িয়ে কী করে গঙ্গায় ভেসে আসছে দেহ তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

পাশাপাশি, গঙ্গার জলে দেহ ভেসে আসার জেরে রীতিমতো বিপদের মুখে মৎস্যজীবীরা। গঙ্গায় মৃতদেহ ভেসে আসার জেরে কার্যত আতঙ্কে মাছ কেনা বন্ধ করেছেন ‘বাজারপ্রিয়’ বাঙালি। জনপ্রিয়তা কমেছে গঙ্গার মাছের। নিজস্ব ভেড়িতে চাষ করা রুই কাতলা বলেও পার পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। উপরি পাওনা লকডাউন। সব মিলিয়ে মুখ থুবড়ে পড়তে বসেছে মাছের ব্যবসা।

কিন্তু, নদীতে করোনা রোগীর দেহ ভেসে আসলে তা থেকে কোনওভাবে কোভিড সংক্রমণ সম্ভব কি না তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। বহু বিশষজ্ঞের দাবি, করোনায় মৃত রোগীর থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা কম। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক এবং এইমসের সমীক্ষা অনুযায়ী, করোনা আক্রান্তের দেহ দাহ করা বা অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সংক্রমণের ভয় থাকার সম্ভাবনা আছে। তবে সেক্ষেত্রে পিপিইকিট প্রতিরোধক হতে পারে। কিন্তু, জল থেকে করোনা ছড়ানোর কোনও তথ্য এখনও পর্যন্ত হাতে আসেনি বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের একাংশের। করোনা ভাইরাস মূলত ড্রপলেট, কাশি, কফ, থুতু ও নিঃশ্বাস থেকেই ছড়ায় বলেই মনে করছেন তাঁরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য় সংস্থার তরফে জানা গিয়েছে, সাঁতার কাটার সময়ে জলের মাধ্যমে করোনা ছড়ায় না। তবে, নদীর জলে মৃতদেহ ভেসে উঠলে সেখানে ভাইরাস ব্যক্টিরিয়ার উপস্থিতিতে নদীর জল আরও দূষিত হতে পারে। এক্ষেত্রে, মৃতদেহগুলির সংস্পর্শে যে বা যাঁরা সরাসরি আসবেন, তাঁদের স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে।

আরও পড়ুন: ‘তৃণমূলের নামে মিথ্যা অপবাদ ও কুৎসা প্রচারের জন্য দুঃখিত’, মাইকিং করে ‘ভুল স্বীকার’ বিজেপি কর্মীদের!