পৃথক আলিপুরদুয়ার তৈরির ৭ বছরেও হয়নি মহকুমা, ব্লক ও থানার পুনর্বিন্যাস, খোলেনি আদালত! ক্ষোভ সাধারণের
Alipurduar: আলিপুরদুয়ার জেলার সপ্তম বর্ষপূর্তীতেও প্রশাসনিক সংস্কার নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। ২০১৪ সালে সাবেক জলপাইগুড়ি জেলার ছয়টি ব্লক নিয়ে আলিপুরদুয়ার জেলা গঠিত হয়। কিন্তু জেলা গঠনের পর সাত বছরেও প্রশাসনিক সংস্কার হয়নি বলে অভিযোগ।
আলিপুরদুয়ার: উত্তরবঙ্গকে বঞ্চনার অভিযোগে বঙ্গভঙ্গের জিগির তুলেছেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লা (John Barla)। তিনি বলছেন, তৃণমূল আমলেও বঞ্চিত থেকে গিয়েছে উত্তরবঙ্গ। তাই আলাদা রাজ্যের প্রয়োজন। বিষয়টিকে মোটেই সমর্থন করেনি বিজেপি (BJP)। এদিকে এনিয়ে ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)।
জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের কড়া হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলা ভাগ হবে না। এরই মধ্যে গত শুক্রবার আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) জেলা হিসেবে সাত বছর পূর্ণ করার বিষয়ে টুইট করেন তিনি।
কিন্তু এই সাত বছরেও আলিপুরদুয়ার জেলায় হয়নি নতুন কোনও মহকুমা, ব্লক, থানা বা এলাকার পুনর্বিন্যাস। এই সাত বছরে জেলা আদালতের বোর্ড লাগানো হলেও আজও তা চালু হয়নি। বর্তমানে জেলায় শাসক দলের বিধায়ক, সাংসদ না থাকায় বিধানসভায় প্রশাসনিক সংস্কারের বিষয়টি কে তুলবেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু সাত বছরেও কোনও পক্ষের তেমন উদ্যোগ চোখে না পড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এনিয়ে আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল রাজ্যের শাসক দলের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছেন। তিনি বলেন, “আলিপুরদুয়ারকে জেলা করা হয়েছে ভাল কথা। তবে এখনও প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ জেলা হওয়ার আলাদা কোনও সুযোগ সুবিধা পান না এটা সত্যি। জেলায় নতুন থানা, ব্লক, জেলা আদালতও তৈরি হয়নি।” এনিয়ে কী পদক্ষেপ করবেন? বিজেপি বিধায়ক বলেন, আমি জেলার প্রশাসনিক সংস্কারের বিষয়টি বিধানসভায় তুলব।
এ ব্যাপারে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামীর অবশ্য ভিন্ন মত। তিনি বলেন, “৩৪ বছরে বাংলা যে জায়গায় গিয়েছিল, সেখান থেকে অনেক সংস্কার হয়েছে। আমরা জেলা পেয়েছি ২০১৪ সালে। সাত বছরে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। অনেক বাকিও আছে। তবে মানবিক মুখ্যমন্ত্রী খুব শীঘ্রই কাজ করবেন।” তিনি তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার কথা। বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দিচ্ছে না। উন্নয়ন করতে হলে টাকার দরকার হয়। জেলা আদালত তো হাইকোর্টের বিষয়। টেকনিক্যাল কারণে আটকে আছে। তবে আমি নিশ্চিত এটা শীঘ্রই হয়ে যাবে।”
আলিপুরদুয়ার প্রবীণ নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক ল্যারি বোস বলেন, “আমরা এ নিয়ে জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। আমাদের আদালতের কাজে জলপাইগুড়ি যেতে হয়। সেখানে তো একদিনে কাজ হয় না। কুমারগ্রাম থেকে কেউ জলপাইগুড়ি গেলে দু’দিন লাগে। আমরা আশা করেছিলাম, জেলা আদালত হবে। এখনও হয়নি। হাইকোর্ট থেকে পরিদর্শন করে গিয়েছে। হচ্ছে, হবে বলে কিন্তু আদতে তো হচ্ছে না। প্রশাসনের কাছে বার বার অনুরোধ করছি, জেলা আদালতটি অবিলম্বে চালু করার জন্য। আলিপুয়ারদুয়ারবাসী জেলা আদালত চায়। মহকুমা চায়।”
এ ব্যাপারে জেলার বিশিষ্ট আইনজীবী জহর মজুমদারে মত, “রাজ্য সরকার জমি দিয়েছে, অস্থায়ীভাবে যাতে জেলা জজ কোর্ট হয়, সেজন্য পুরানো এসডিও বিল্ডিং দিয়েছে। ১ কোটি টাকা খরচ করে এজলাস হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত হাইকোর্টের অদূরদর্শীতায় জেলা জজ কোর্টই হয়নি। আমরা বার বার হাইকোর্টকে অনুরোধ করেছি। হাইকোর্টে গেলে আমাদের জানানো হয়, ‘এখনি হবে।’ পরে আর কিছু হয় না।”
তিনি যোগ করেন, “ফুল ফেজে জেলা এখনও হয়নি। বিচার ব্যবস্থার কাজ না শুরু হলে আলিপুরদুয়ারকে পূর্ণাঙ্গ জেলা বলা যায় না। আমরা সরকারকে জানিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এনিয়ে দেখা করব। জজ কোর্ট বিল্ডিংয়ের জন্য টাকা বরাদ্ধের দাবি জানাব। সাধারন মানুষ অসুবিধায় পড়ছে। সাত বছর কাজ হচ্ছে না। হাইকোর্ট এক কথা বলে, অন্য কাজ করে। হাইকোর্টের অদূরদর্শিতাই দায়ী। এরপর না হলে আমরা সার্বিক আন্দোলনে নামব।”
২০১৪ সালের ২৫ জুন জলপাইগুড়ি জেলা ভেঙে পৃথক আলিপুরদুয়ার জেলা গঠিত হয়। ওই দিন আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ডের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী আলিপুরদুয়ারকে নতুন জেলা ঘোষণা করেছিলেন। আলিপুরদুয়ার জেলার সপ্তম বর্ষপূর্তীতেও প্রশাসনিক সংস্কার নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। ২০১৪ সালে সাবেক জলপাইগুড়ি জেলার ছয়টি ব্লক নিয়ে আলিপুরদুয়ার জেলা গঠিত হয়। কিন্তু জেলা গঠনের পর সাত বছরেও প্রশাসনিক সংস্কার হয়নি। ফলে এখনও আলিপুরদুয়ার জেলার নতুন কোনও মহকুমা, ব্লক বা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রশাসনিক সংস্কার না হওয়ায় বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ জমা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় সম্মান! দেশের সেরা বিজ্ঞান মনস্ক সঙ্ঘের তকমা পেল জলপাইগুড়ি সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাব
জেলার ছয়টি ব্লকের আয়তন এতটাই বড় যে ব্লক থেকে জেলা অফিসে আসতে সাধারন মানুষের প্রায় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। পাশাপাশি এখনও জেলা আদালতও গঠন হয়নি। হয়নি কোনও নতুন থানা। ফলে জেলা আলিপুরদুয়ারে হলেও আজও এই জেলার প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা জেলার সুবিধা ভোগ করতে পারেন না বলেই অভিযোগ।
আরও পড়ুন: অবিরাম বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ, বন্যা পরিস্থিতি একাধিক এলাকায়
যেমন জটেশ্বর এলাকার বাসিন্দাদের কথায়, “আমাদের এলাকা থেকে বিডিও অফিস প্রায় ২৪ কিলোমিটার। তাই আমরা ভেবেছিলাম জেলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফালাকাটা ব্লককে ভেঙে জটেশ্বরকে ব্লক ঘোষণা করা হবে। জটেশ্বর ব্লক হলে এলাকার পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা উপকৃত হতেন। কিন্তু জেলা গঠনের সাত বছর হতে চললেও আমাদের আশা তো পূরণ হল না।”