Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Hasimara Airbase: দেশের গর্ব রাফালের তর্জন-গর্জনে হারাচ্ছে শ্রবণশক্তি? কী বলছেন হাসিমারার ভুক্তভোগীরা?

Rafale Aircraft: ভোর হতেই এখানে শুরু হয় যুদ্ধবিমান রাফালের তর্জন গর্জন। অথচ যে রাফাল নিয়ে দেশবাসীর এত গর্ব, সেই রাফালই এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আলিপুরদুয়ার জেলার হাসিমারা বায়ুসেনা ছাউনি লাগোয়া গ্রামগুলিতে।

Hasimara Airbase: দেশের গর্ব রাফালের তর্জন-গর্জনে হারাচ্ছে শ্রবণশক্তি? কী বলছেন হাসিমারার ভুক্তভোগীরা?
রাফাল যুদ্ধবিমান
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 23, 2022 | 9:57 PM

আলিপুরদুয়ার : রাফালের শব্দে বধির ডুয়ার্সের কালচিনি ব্লকের হাসিমারা সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। না, আপাতত যুদ্ধের কোনও আভাস নেই। তবু ভোর হতেই এখানে শুরু হয় যুদ্ধবিমান রাফালের তর্জন গর্জন। অথচ যে রাফাল নিয়ে দেশবাসীর এত গর্ব, সেই রাফালই এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আলিপুরদুয়ার জেলার হাসিমারা বায়ুসেনা ছাউনি লাগোয়া গ্রামগুলিতে। এখানে বাস করেন কয়েক লক্ষ মানুষ। যুদ্ধবিমানের কান ঝালাপালা করে দেওয়া শব্দে বধিরতা বাড়ছে কয়েকটি গ্রামে। স্থানীয় গ্রামবাসীরা বলছেন, হাসিমারা বায়সেনা ছাউনির আশে পাশে কয়েকটি গ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষই কম-বেশি কানে শুনতে পান না। তাঁদের আশঙ্কা, এভাবে চললে গোটা এলাকার মানুষজনের কেউই আর কানে ঠিক মতো শুনতে পাবেন না।

এই সমস্যা আজকের নয়। অনেক দিন ধরেই চলছে। ১৯৬৩ সালে হাসিমারা বায়ুসেনা ছাউনি চালুর পর থেকেই যুদ্ধবিমানের আওয়াজ শোনা এলাকার মানুষের কাছে রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে এলাকা ফাঁকা ছিল। এখন জনবসতি বেড়েছে। এদিকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে যুদ্ধবিমানের আনাগোনাও। মিগ ছেড়ে এখন সেই জায়গার দখল করে নিয়েছে রাফাল যুদ্ধবিমান। হাসিমারা হয়ে উঠেছে ভারতের দ্বিতীয় রাফাল স্কোয়াড্রন। প্রতিরক্ষাতে এটা গর্বের হলেও এলাকার মানুষজনের মধ্যে বধিরতা প্রবণতা বাড়ছে, এটা নিঃসন্দেহে উদ্বেগের। উল্লেখ্য, হাসিমারা বায়ুসেনা ছাউনির রানওয়ে সম্প্রসারণের জন্য দুই বছর যুদ্ধবিমানের মহড়া বন্ধ রেখেছিল প্রতিরক্ষামন্ত্রক। তবে রাফাল হাসিমারা বায়ুসেনার মাটি ছোঁয়ার পর থেকেই ফের শুরু হয়েছে ফ্লাইং। এখন সমস্যা আর তীব্র হচ্ছে। জানা গিয়েছে ৯০-এর দশকে রাজ্য সরকারের তরফে চিকিৎসক আবিরলাল মুখোপাধ্যায় হাসিমারা এসে বায়সেনা ছাউনি সংলগ্ন গ্রামগুলি ঘুরে প্রত্যেক গ্রামবাসীর কান পরীক্ষা করে একটি পূর্নাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন। ব্যাস ওই পর্যন্তই। অভিযোগ, তারপর এই মানুষগুলির কথা আর কেউ ভাবেননি।

কালচিনির প্রাক্তন বিধায়ক পবন লাকড়া এই বিষয়ে বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্যকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। বিশেষজ্ঞ এসে দেখে গিয়েছেন। তাঁরা পরীক্ষাও করে গিয়েছেন। তাঁরাও বলেছিলেন, এটা প্রতিকার হওয়া উচিত। আমরা কেউ পাকিস্তানের নাগরিক না। আমরা চাই ভারতের আরও শক্তি বাড়ুক। তবে এখানে বায়ুসেনা ঘাটির জন্য মানুষ কম শুনতে পাচ্ছে। গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে। আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম, যাঁরা গরিব মানুষ, তাঁদের মেডিকেল ট্রিটমেন্ট বা টুলস দেওয়া হোক। কথা বলার মত বা শোনার মত লোক নেই। আমরা উচু গলায় কথা বলি। আমরা প্রতিবাদ করব না। প্রতিকার চাই। তাদের ট্রেনিংগুলি এক জায়গায় না করে দূরে দূরে করা হোক।”

এলাকার প্রাক্তন সভাপতি সত্যেন মণ্ডলের মুখেও একই কথা। বলেন, “রাফাল আসাতে শব্দে মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। এয়ারফিল্ডের চারপাশে যে গ্রাম রয়েছে, সেখানে স্কুল আছে। অনেক গুলি গ্রাম রয়েছে। রাফালের জন্য শিক্ষকদের পড়ানোয় সমস্যা হচ্ছে, সাময়িক বন্ধ রাখতে হচ্ছে। একজন বিশেষজ্ঞ এলেও কোনও কাজ হয়নি। দেশের স্বার্থে এটা প্রয়োজন আছে, আমরা সেটা মানি। কিছু ক্ষেত্রে সরকার কিছু করতে পারে। তবে এই জায়গাটা বাদ দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যদি স্কেটার রাউন্ড দেয় তবে এলাকার লোকের সুবিধে হত। এছাড়া হাই লেভেল ফ্লাইং হলে ভাল হত। এখানেই ফ্লাইং হচ্ছে, ৮৫ শতাংশ লোক ভুক্তভোগী। এখানে গরির লোক আছে। সরকারী তরফে ব্যবস্থা হয়। আমরা চিঠি লিখেছিলাম। কোন উত্তর আসেনি। কিছুটা লাঘব হলে ভাল হয়। আমরা টার্গেট হব, এটা ঠিক নয়।”

একই মত এলাকার মহিলাদেরও। দিনে রাতে অসুবিধে হচ্ছে। পড়াশোনার অসুবিধে হচ্ছে। ছোট শিশুরা ভয় পায়। অনেকেরই কানে শুনতে অসুবিধা হচ্ছে। চিন্তা বাড়ছে গর্ভবতী মহিলাদের নিয়েও। এই বিষয়ে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের বিশিষ্ট চোখ কান গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৌম্যজিত দত্ত বলেন, “চিন্তার ও উদ্বেগের বিষয়। এটা রাফাল বিমানের শব্দের জন্য হচ্ছে। অনেক লোক এই হাসপাতালে আসেন। বধিরতা শব্দের কারণে হয়। ৯০ ডেসিবেলের বেশি শব্দের জন্য এটা হয়। এতদিন সমস্যা ছিল না। কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে।”

বিষয়টি নিয়ে কালচিনি ব্লকের বিডিও প্রশান্ত বর্মণ জানিয়েছেন, “গ্রামবাসীদের সমস্যা থাকলে তা জানালে ব্যাবস্থা নেব। বিষয়টি জেলাশাসকের দৃষ্টি আকর্ষন করব।এখন পর্যন্ত অভিযোগ জমা পড়েনি। জমা পড়লে তা জেলাশাসককে জানাব।”

অভিযোগ উঠছে, দিনভর যুদ্ধবিমানের শব্দে অনেক শিশুই বধিরতা নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে হ্রদরোগ আক্রান্তের সংখ্যা। প্রভাব পড়ছে স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যেও। কিন্তু সরকারিভাবে কোনও পরিসংখ্যান নেই। হাসিমারাতে রাফাল বিমান এখন গোটা দেশের গর্ব। কিন্তু প্রদীপের কাছেই কি তাহলে অন্ধকার? এই শব্দ-যন্ত্রণা থেকে কি কোনও মুক্তির পথ পাবেন এলাকাবাসীরা? কোনও ব্যবস্থা কি নেবে প্রশাসন? এই সব প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন হাসিমারা বায়ুসেনা ছাউনি সংলগ্ন এলাকার মানুষরা।

আরও পড়ুন : Rabies Laboratory in Kolkata: এ বার থেকে কুকুর কামড়ালে আর টিকার জন্য অপেক্ষা নয়, বেলেঘাটা আইডিতেই হবে জলাতঙ্কের পরীক্ষা