Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

‘সোনার চাঁদ’ শ্যামের ৪ কোটি টাকার বিস্কুট-বাঁট রামের লকারে, চক্ষু চড়কগাছ তদন্তকারীদের!

Bishnupur Tender Case: শ্য়ামাপ্রসাদের ওই লকার থেকে প্রায় ৩কিলোগ্রামের অধিক সোনা পাওয়া গিয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি।

'সোনার চাঁদ' শ্যামের ৪ কোটি টাকার বিস্কুট-বাঁট রামের লকারে, চক্ষু চড়কগাছ তদন্তকারীদের!
অলঙ্করণ: অভিজিত্‍ বিশ্বাস
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 05, 2021 | 3:24 PM

বাঁকুড়া: তড়তড় এগিয়ে চলেছে শ্যাম-কাণ্ড। বিষ্ণুপুর পৌরসভার প্রাক্তন সভাপতি ও মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের (Shyamaprasad Mukherjee) রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের লকারগুলি আগেই বাজেয়াপ্ত করেছিলেন তদন্তকারীরা। সেই লকার থেকে এ বার বেরল ভরি ভরি সোনার অলঙ্কার, সোনার বাঁট ও বিস্কুট! শ্য়ামাপ্রসাদের ওই লকার থেকে প্রায় ৩কিলোগ্রামের অধিক সোনা পাওয়া গিয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি। ব্যাঙ্কের সেই লকারের মালিকানা রয়েছে  শ্য়াম- ঘনিষ্ঠ রামশঙ্কর মহন্তের নামে।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, রামশঙ্কর জেরায় স্বীকার করেছেন প্রাক্তন মন্ত্রীর বাড়ি থেকে ব্যাগে করে সমস্ত সোনার গয়না এনে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে নিজের লকারে জমা করতেন। এছাড়াও, একাধিক জমি-জায়গার মালিকানাও ছিল শ্যামাপ্রসাদের। শুক্রবার দুপুরে রামশঙ্করকে সঙ্গে নিয়ে বিষ্ণুপুর শহরের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে হানা দেন তদন্তকারীরা। লকার খুলতেই থরে থরেসাজানো সোনার বাঁট, সোনার বিস্কুট-সহ সোনার অলঙ্কার দেখতে পান তদন্তকারীরা। ঠিক কত পরিমাণ সেই সম্পত্তি তা বুঝতে স্বর্ণ বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হন গোয়েন্দারা। গোটা ঘটনা ভিডিয়োগ্রাফি করে রাখা হয়। বিশেজ্ঞরাই জানান প্রাপ্ত সোনার পরিমাণ প্রায় ৩ কিলোগ্রাম। সোনার পরিমাণ যাচাইয়ের পর ওই লকার সিল করে দেওয়া হয়। প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে অভিযান চালান তাঁরা।

শুধু সোনা নয়, তদন্তকারীরা ইতিমধ্যেই প্রায় ৫০ কোটি অর্থমূল্যের জমি-জায়গার খোঁজ পেয়েছেন। জানা গিয়েছে, শ্য়ামাপ্রসাদ মুখোপাধ্য়ায় বিপুল পরিমাণ টাকা জমি কেনার কাজে বিনিয়োগ করেছিলেন। বিষ্ণুপুর শহরে ও আশেপাশে বিভিন্ন জায়গায় তাঁর নামে-বেনামে প্রচুর জমির খোঁজ মিলেছে। এমনকী, নিজের ছেলেমেয়ের নামেও বেশ কিছু জমি কিনেছিলেন তিনি। তদন্তে নেমে সেগুলির অনেকগুলির দলিলও হাতে এসেছে তদন্তকারীদের। সেই সব দলিল মিলিয়ে জমি চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হয়েছে।

শহর ও শহর সংলগ্ন মরার গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় খড়িকাশুলিতে প্রায় ৪ বিঘার জমির ওপর নির্মীয়মান পেট্রোল-পাম্পে যান তদন্তকারী অফিসাররা। মরার গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়াও খড়িকাশুলিতে প্রায় ১২ বিঘা জমির খোঁজ মিলেছে। পেট্রোলপাম্প তৈরির কাজে নিযুক্ত ঠিকাদার জানিয়েছেন, প্রাক্তন মন্ত্রী শ্য়ামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে রূপা মুখোপাধ্য়ায়ের নামে কেনা হয়েছে ওই জমি। প্রায় ৯ মাস যাবত্‍ চলছে পাম্প তৈরির কাজ। এছাড়াও, শহরের তুর্কিডাঙায় রয়েছে ৬ কাঠা জমি।  জমি কেনার ক্ষেত্রে ঠিক কত পরিমাণ টাকা ব্যয় করা হয়েছে, আর কারা এর সঙ্গে যুক্ত ছিল তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

অন্যদিকে প্রাক্তন মন্ত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট গুলি রীতিমতো চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূত্রের খবর, ঐ অ্যাকাউন্ট গুলিতে বিভিন্ন সময়ে ২০ লক্ষ টাকা থেকে ৭০ লক্ষ টাকা নগদে জমা করা হয়েছে। এমনকি বিধানসভা নির্বাচনের আগে ২০ লক্ষ টাকা জমা করার তথ্যও হাতে পেয়েছেন তদন্তকারীরা। এছাড়াও বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের ছেলে-মেয়ের অ্যাকাউন্টগুলিতে। তাঁদের অ্যাকাউন্টে প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি জমা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। তবে, টাকার পরিমাণ সঠিকভাবে কত সে বিষয়ই এখনও স্পষ্টত মুখ খোলেননি তদন্তকারীরা। প্রশ্ন উঠছে প্রাক্তন মন্ত্রীর এত জমানো টাকার উত্‍স কী? সূত্রের খবর, টেণ্ডার দুর্নীতির ঘটনায় আরও এক প্রাক্তন মন্ত্রী ঘনিষ্ঠকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা।

ধৃত শ্যাম-ঘনিষ্ঠ রামশঙ্করের বাড়ি থেকে ১৯ লক্ষ টাকা-সহ চারটি জমির দলিল এবং স্থানীয় পোস্ট অফিসে শ্যামাপ্রসাদের নামে আটটি সেভিংস অ্যাকাউন্টের পাশবইও হাতে এসেছে তদন্তকারীদের। শ্যামাপ্রসাদের টাকা রামশঙ্করের মাধ্যমেই বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ত। প্রাক্তন মন্ত্রীর জমি কেনাবেচা ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত সব কিছুই দেখতেন রামশঙ্কর অনুমান গোয়েন্দাদের। ইতিমধ্যেই প্রাক্তন মন্ত্রীর আরেক ঘনিষ্ঠ বিষ্ণপুর পুরসভার প্রাক্তন ওভারশেয়ার দিলীপ গড়াইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। টেন্ডার দুর্নীতিতে  তাঁর সক্রিয় যোগ রয়েছে বলে দাবি পুলিশের। আরও পড়ুন:  বিশ্লেষণ: টিকা নিয়ে রক্তারক্তি, বঙ্গ জুড়ে অনিয়ম, গাফিলতি কোথায়?