এ কোন বঙ্গ! বেডে গাদাগাদি, মেঝেতে শুয়ে জ্বরে কাঁপছে একরত্তিরা!
Bed crisis in WB: পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর যে সংক্রমণ হওয়ার পরও এক-একটি বেডে রাখা হয়েছে দুই-চার জন শিশুকে।
কলকাতা: বঙ্গে শুরু হয়েছে ‘অজানা জ্বর’ সংক্রমণ। করোনার কারণে যখন জেরবার রাজ্যবাসী সেই সময় এই অজানা জ্বরে কাবু বঙ্গবাসী। এই জ্বরে সব থেকে বেশি ক্ষতগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যই এক হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৃত্যুও হয়েছে অনেকের। উত্তরে আলিপুরদুয়ার থেকে দক্ষিণে কলকাতা সংলগ্ন এলাকা জেলার সমস্ত ছবি প্রায় এক। তবে এর মধ্যে বেশি আক্রান্ত হয়েছে উত্তর বঙ্গের শিশুরা। হু-হু করে বেড়ে গিয়েছে সংক্রমণ। যার কারণে সরকারি হাসপাতাল গুলিতে মিলছে না বেড। হাসপাতালের বাইরে লম্বা লাইন। পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর যে সংক্রমণ হওয়ার পরও এক-একটি বেডে রাখা হয়েছে দুই-চার জন শিশুকে।
জেলার শয্যা চিত্রটা দেখে নেওয়া যাক আলিপুরদুয়ারঃ জ্বর নিয়ে ভয় বাড়ছে আলিপুরদুয়ারে। জানা যাচ্ছে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে শিশুদের জন্য ৫০ বেড রয়েছে। আর সেখানে রোগীর সংখ্যা ৭০। প্রতিদিনই জ্বর নিয়ে আশা আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। ৩০-৪০ জন শিশুকে নিয়ে মায়েরা হাসপাতালে আসছেন। জ্বর সর্দি কাশি নিয়ে অনেকেই ভর্তি হচ্ছে। বেড কম পড়ার কারণে উদ্বিগ্ন জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরাও।
কোচবিহার: কোচবিহার MJN মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অজানা জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছে বহু শিশু। একসাথে প্রচুর শিশু ভর্তি হওয়ায় মিলছে না জায়গা। একটি বেডে গাদাগাদি করে কোনো রকমে স্থান পেয়েছে শিশুরা। আর এতেই সংক্রমণ ছড়ানোর আশংকা বেড়েছে। মিলছেনা সঠিক পরিমানে গ্যাস , আতংকিত শিশুর অবিভাবকরা। শিশুর এক অবিভাবক বিশ্ব বর্মন জানান, হাসপাতালে বেড খুব কম , বাচ্চাদের ডাক্তার ৪/৫ ঘন্টা পর পর গ্যাস দেবার কথা বললেও সেই গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। একই বক্তব্য অন্যান্য অভিভাবকদর।
জলপাইগুড়ি: রাজ্যের মধ্যে সব থেকে খারাপ অবস্থা জলপাইগুড়ির। সূত্রের খবর,এখনও পর্যন্ত ৮৮ জন শিশু ভর্তি হয়েছে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজে। এক-একটি বেডে রয়েছে এক সঙ্গে রাখা হচ্ছে শিশুদের। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশে ফের পাঁচ সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম আসে জলপাইগুড়িতে। উত্তরবঙ্গের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি ডাক্তার সুশান্ত রায় ও অন্যান্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সাথে।
পূর্ব মেদিনীপুর: কোলাঘাটে একটি বেসরকারি শিশু নার্সিংহোমে জ্বর শ্বাসকষ্ট সহ ভাইরাল নিউমোনিয়া নিয়ে প্রায় ৩০ জন শিশু ভর্তি। এই সংখ্যাটা আরও বাড়ছে বলে জানা গিয়েছে। বেড দিতে হিমশিম খাচ্ছে বেসরকারি এই নার্সিংহোম।
পূর্ব বর্ধমান: কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালেও ছবিটা এক। প্রতিদিন গড়ে ৩-৪ জন শিশু জ্বর নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। তবে এই জ্বর সিজন চেঞ্জর কারনে সাধারণ জ্বর।এতে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।দু এক দিন পরে সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর শিশুদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে হাসপাতাল থেকে।
উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি এই ঢেউ ভারতে আছড়ে পড়তে পারে। সেই ঢেউয়ে শিশুরাই বিপদসীমায় থাকবে বলে মনে করছেন গবেষকদের একাংশ। সেই কথা মাথায় রেখে মাস দুয়েক আগেই সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী জানান, আগাম ব্যবস্থা নিচ্ছে রাজ্য।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এ দিন জানানো হয়, তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। পেডিয়াট্রিক কেয়ার এর জন্য আলাদা ব্যবস্থা জুলাই মাসের মধ্যেই নেওয়া হবে। মুখ্যসচিব সাংবাদিক বৈঠকে জানান, ১৩০০ পেডিয়াট্রিক আইসিইউ, ৩৫০ এসএনসিইউ এবং ১০ হাজার জেনারেল বেড তৈরি রাখা হচ্ছে। পুরোটাই কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের কথা মাথায় রেখে।
তাছাড়া পিকু-র ব্যবস্থা করা হচ্ছে একাধিক হাসপাতালে। সাধারণ ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রয়েছে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, তেমনি কেবলমাত্র শিশুদের একটি অত্যাধুনিক ইউনিট হল পিকু। যেখানে যাবতীয় উন্নত মানের চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকবে বাচ্চাদের চিকিৎসার জন্য। করোনার তৃতীয় ঢেউ সামলাতে এই চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়ার কথা বলেছে স্বাস্থ্য দফতর।