Mamata Banerjee In Bagtui: ‘সূঁচপুরের মতো কেসটা সাজাতে হবে…’, কেষ্টর পরামর্শ শুনেই পুলিশকে নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর
Mamata Banerjee In Bagtui: "সূঁচপুরে যেমন সাজিয়েছিল...এখনও জেলে রয়েছে...বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে এর পিছনে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পিকেটিং দিলে এই ঘটনা ঘটত না।"
বীরভূম: “সূঁচপুরে যেমন হয়েছিল, তেমনভাবে কেসটা সাজাও। কেউ যেন ছাড়া না পায়।” বগটুইয়ে স্বজনহারা অভিশপ্ত সেই বাড়ির সদস্য মিহিলালের সামনে দাঁড়িয়েই ডিজিকে ডেকে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে নির্দেশ দিলেন, দ্রুত বগটুইয়ের তৃণমূল ব্লক সভাপতি আনারুল শেখকে গ্রেফতার করতে হবে। TV9 বাংলা প্রথম থেকেই বলে আসছিল এই ‘হত্যালীলা’র নাটের গুরু আনারুল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাতেই সিলমোহর দিলেন। তবে এই ঘটনার কেস ডায়েরি এমনভাবে সাজানোর নির্দেশ দিলেন, যাতে কোনও ফাঁকফোকড় না থাকে।
ঘড়ির কাঁটায় তখন ১টার কিছু বেশি। মুখ্যমন্ত্রী আর মিহিলাল মুখোমুখি। পাশে দাঁড়িয়ে অনুব্রত মণ্ডল। মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মিহিলাল। বেলা ১.২০ মিনিট। মাইক হাতে নিয়ে এবার বলা শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমে ঘটনার বিবরণ দেন। জানান কীভাবে ভাদু শেখের খুনের পরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। এরপর তিনি ডিজিকে ডাকেন। আনারুলকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেন ও পুলিশ পাঠায়নি সময়মতো, সেটা দেখতে হবে। এখানকার যে এসডিপিও ছিলেন,তিনি যখন ঘটনা দেখলেন, তারপরও কেন কোনও ব্যবস্থা নিলেন না? এখানে আগেও তো এমন ঘটেছে। এসডিপিও, আইসি, ডিআইবি দায়িত্ব পালন করেননি। যারা যারা দায়িত্ব পালন করেনি, যারা জেনে শুনেও পুলিশকে ঠিকমতো কাজে লাগায়নি, আমি তাদের কঠোর শাস্তি চাই।”
এরপরই সূঁচপুরের প্রসঙ্গ আসে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেসটা খুব ভালোভাবে আটঘাট বেঁধে সাজাতে হবে। কারণ আমি শুনেছি আগের কেসটা, যেটা মার্ডার হয়েছিল তিন চার বছর আগে হাইকোর্ট থেকে বেল পেয়ে গিয়েছে।” ঠিক তখনই পাশ থেকে বলে ওঠেন অনুব্রত মণ্ডল। তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, “সূঁচপুরে যেমন সাজিয়েছিল…এখনও জেলে রয়েছে…” কেষ্টর কথার রেশ ধরেই মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকর্তাকে নির্দেশ দেন, “সূঁচপুরে যেমন হয়েছিল, লোকটা এখনও জেলে রয়েছে। সূঁচপুরের কেসটা দেখে নিন।” আবার পাশ দিয়ে অনুব্রতর প্রসঙ্গ উত্থাপন, ‘সূঁচপুরের মতো কেসটা সাজাতে হবে।’ মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই পুলিশকে বললেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীও বললেন, “কেসটা এমনভাবেই তৈরি করতে হবে। পরিবারের কথা, পাড়া পড়শিদের কথা নিয়ে, যাতে দোষীরা শাস্তি পায়।”
ঘটনায় প্রথম থেকেই গ্রামবাসী ও স্বজনহারা বগটুইয়ের ব্লক সভাপতি আনারুল শেখের দিকে আঙুল তুলছিলেন। অভিযোগ ছিল, তাঁর নির্দেশেই হামলা হয়েছে। এমনকি তিনিই নাকি পুলিশকে গ্রামে ঢুকতে বারণ করেছিলেন। দমকলকেও আটকে রাখা হয়েছিল। সেই অভিযোগকেই মান্যতা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আনারুলকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “খুন হওয়াটা খারাপ, বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করাটাও খারাপ। দুটো ঘটনাকেই আমি কনডেম করছি। আমি কিন্তু কোনও কথাই শুনতে চায়নি। একে পেলাম না, ওকে পেলাম না বলে। যেখানেই পালাক, ধরে নিয়ে আসতে হবে। আনারুল গ্রেফতার হবে। হয় ও আত্মসমর্পণ করবে, তা না হলে যেখান থেকে পারে গ্রেফতার করবেন।”
ঘটনায় অবশ্য পুলিস প্রশাসনকেও কাঠগড়ায় দাঁড়ি করিয়েছেন গ্রামবাসী ও সাক্ষীরা। তাদের বক্তব্য, পুলিশের সামনেই কার্যত হামলা চলেছে। পুলিশকে গ্রামে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি প্রথমে। সেই তত্ত্বকেও কার্যত স্বীকৃতি দিলেন পুলিশ মন্ত্রী। তিনি বলেন, “পাবলিক বলছিল ঘটনা ঘটতে পারে, এসডিপিও জানত। আইসি জানত। তাই তারা চাইলেই, সময়ে ব্যবস্থা নিতে পারতেন। ব্যবস্থা নিলে এই ঘটনা ঘটত না। কিন্তু পুলিশ পিকেটিং দেয়নি।”
মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রী নিজেই বলেন, “বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে এর পিছনে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পিকেটিং দিলে এই ঘটনা ঘটত না।” পুলিশকে পুলিশমন্ত্রীর নির্দেশ, ‘ভালোভাবে পিকেটিং রাখতে হবে এখানে। সকালে রাখলাম, বিকালে পালালে চলবে না।’
আরও পড়ুন: LIVE: অনুব্রতকে সঙ্গে নিয়েই বগটুই গ্রামে পৌঁছলেন মমতা