West Bengal Panchayat Elections 2023 : ১৮-তে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল ‘উন্নয়ন’, অনুব্রতহীন বীরভূমে এবার কত আসনে প্রার্থী দিল বিরোধীরা?

Bengal Panchayat Election : ২০২৩ সালে বীরভূম জেলা পরিষদে ১০টি আসন বেড়েছে। ৪২ বেড়ে ৫২ হয়েছে। আসন পুনর্বিন্যাস ও জেলার জনসংখ্যা বাড়ার জন্য এই আসন বৃদ্ধি। এবার তৃণমূলের তরফে ৫৯ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। বামেদের ৫১ জন, কংগ্রেসের ১৬ জন ও বিজেপির ৫৯ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

West Bengal Panchayat Elections 2023 : ১৮-তে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল 'উন্নয়ন', অনুব্রতহীন বীরভূমে এবার কত আসনে প্রার্থী দিল বিরোধীরা?
অনুব্রত মণ্ডল
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 18, 2023 | 11:48 PM

বীরভূম: ১৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত বীরভূম জেলায়। রাজনৈতিক মহল বলে, ২০১৮ সালে জেলার দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল ভোট ‘করিয়েছিলেন’। তাতে বিরোধীরা দাঁড়াতেই পারেনি। মনোনয়নপর্বেই ধাক্কা খেয়েছিল বিরোধীরা। ‘উন্নয়ন’ দাঁড়িয়েছিল রাস্তায়। এরপর ভোটের ফলে ১৬৭ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৬৬টিতেই জয় পায় তৃণমূল। বিজেপির দখলে ছিল ১টি। পরে তা তৃণমূলের হাতেই চলে যায়। এবার ১৬৭টি গ্রামপঞ্চায়েতের মধ্যে ৩২টি পঞ্চায়েত দখলের পথে শাসকদল। বিরোধীদের মনোনয়ন জমা না পড়ায় এই ফল। ফের এই পঞ্চায়েতগুলির নিয়ন্ত্রণ হাতে পেতে চলেছে ঘাসফুল প্রার্থীরা। আর গতবার মনোনয়ন জমা না দিতে পারার অভিযোগও ছিল বিরোধীদের। এবার কী বলছে তারা?

এবার তৃণমূলের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের তালিকায় আছে সিউড়ি ২ ব্লকের ৬টি পঞ্চায়েতই। মাড়গ্রাম-১ ও মাড়গ্রাম-২ পঞ্চায়েত সংখ্যাগুরু আসনে বিরোধী না থাকায় বাকি আসনে ভোট হলেও শাসকদল পঞ্চায়েত বোর্ড দখল করবে। পাশাপাশি নানুর ব্লকের ৮টি, লাভপুরের ৯টি, বোলপুরের ৫টি, ইলামবাজারের ২টি পঞ্চায়েত দখল নিতে চলেছে তারা। তবে ইলামবাজারের শীর্ষা ও বাতিকার পঞ্চায়েত দু’টিতে বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা পড়েছে। নানুরের ইন্দাস ১, ইন্দাস ২ ও দাসকলগ্রামেও লড়াই হবে। একইভাবে লাভপুরের হাতিয়া আর চৌহাট্টা মহদরি-২তেও লড়াই হবে বিরোধী প্রার্থী থাকায়। যদিও বোলপুর মহকুমার সিংহভাগ আসনই এখন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শাসকদলের দখলে এসে গিয়েছে। সেই কারণে এখন থেকেই শাসকদলের কর্মী, সমর্থকদের মধ্যে উল্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে। কোথাও আবার সবুজ আবির খেলে কর্মীদের আনন্দ করতে দেখা যাচ্ছে।

তবে বিরোধীরা যতই অনুব্রতর ‘বাহুবল’কে গতবারের ফলের জন্য দায়ী করুক, এবারও অনুব্রত দিল্লির জেলে বসে। তারপরও ৪৬ শতাংশ আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি। বীরভূমের বিজেপির দুই সাংগঠনিক জেলার অবস্থাই একইরকম। রবিবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বীরভূমে ২৮৫৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে বিজেপির হয়ে মনোনয়ন জমা পড়েছে ১৫৬৩টিতে। ৪৯০টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনের মধ্যেও প্রায় ২১ শতাংশ আসনে মনোনয়ন জমা করতে পারেনি গেরুয়া শিবির।

২০১৮ সালে বীরভূম জেলায় ১৬৭টি আসনে পঞ্চায়েত ভোট হয়। তৃণমূল জেতে ১৬৬টি। বিজেপি ১টি, বাম ও কংগ্রেসের ফল ছিল শূন্য। ১৬৭টি পঞ্চায়েতের মোট ২২৪৭টি আসনের মধ্যে মাত্র ২৭৯টিতে লড়াই হয়। ১৯টি পঞ্চায়েত সমিতির ৪৬৫টি আসনের মধ্যে কেবল ৬০টিতে লড়াই হয়। মহম্মদবাজারের একমাত্র গণপুর পঞ্চায়েত তৃণমূলের হাতছাড়া হয়। বিজেপি জেতে। যদিও পরে বোর্ডটি তৃণমূল দখল করে। নলহাটি ১ এর বাণীওড় পঞ্চায়েতে নির্দল প্রার্থী জয়লাভ করেন। পরে অবশ্য বোর্ড দখল নেয় তৃণমূল। ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির মল্লারপুর পঞ্চায়েত বিজেপি জেতে। এখনও পঞ্চায়েতটি বিজেপির দখলে রয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির ১৯টিতে জয় পায় শাসকদল। জেলা পরিষদে তৃণমূল ৪২টি আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়।

২০২৩ সালে বীরভূম জেলা পরিষদে ১০টি আসন বেড়েছে। ৪২ বেড়ে ৫২ হয়েছে। আসন পুনর্বিন্যাস ও জেলার জনসংখ্যা বাড়ার জন্য এই আসন বৃদ্ধি। এবার তৃণমূলের তরফে ৫৯ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। বামেদের ৫১ জন, কংগ্রেসের ১৬ জন ও বিজেপির ৫৯ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট আসন সংখ্যা ৫১৯ টি। তৃণমূল কংগ্রেস সবক’টিতেই প্রার্থী দিয়েছে। বিজেপির পক্ষ থেকে মনোনয়ন সংখ্যা ৩৮৪, সিপিআইএমের ৩৩২, কংগ্রেসের ৯৯। গ্রামপঞ্চায়েতে মোট আসন সংখ্যা ২৮৫৯ জন। সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস মনোনয়নপত্র দিয়েছে ২৯১৬টি, বিজেপি ১৫৬৩টি, সিপিআইএম ১৫১৯টি এবং কংগ্রেস ৫৩৩টি।

এই বিষয়ে তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় জানান, বিরোধীরা সারা বছর সংগঠন করে না। সে কারণেই প্রার্থী দিতে পারে না। স্বাভাবিক নিয়মেই জয়ী হয় তৃণমূল কংগ্রেস। এবারও তাই হবে। বীরভূম সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সভাপতি ধ্রুব সাহার অবশ্য বক্তব্য, দিকে দিকে সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল। ২০১৮ সালে যেমন হয়েছিল, এ বছরও তাঁদের লোকেরা হুমকি পাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। যদিও গতবারের তুলনায় এবার তাঁরা অনেকটাই বেশি মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বলে জানান।

আর প্রার্থী দেওয়া নিয়ে সিপিআইএমের বীরভূম জেলার সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, “মনোনয়ন দাখিল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত লাগাতার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গ্রামের মানুষগুলো হুমকির মুখে পড়ে বেশিরভাগ মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। ২০১৮ সালে তো মনোনয়ন জমা দেওয়াই হয়নি আমাদের। দু একটা জায়গায় দিয়েছিলাম। তাও প্রত্যাহার করতে হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই জয়ী হয়েছিল তৃণমূল।” তবে বাম-বিজেপির হুমকির তত্ত্ব মানতে চাননি তৃণমূলের বীরভূম জেলার সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়।