Nanur Massacre : রামপুরহাট হত্যাকান্ড স্মৃতি ফিরিয়ে আনল সূঁচপুর গণহত্যার, কী হয়েছিল ২২ বছর আগে?

Nanur Massacre : রামপুরহাট হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। আর এরই মাঝে আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় শোনা গেল প্রায় ২১ বছর আগেকার সূঁচপুর হত্যাকান্ডের (নানুর হত্যাকান্ড) কথা।

Nanur Massacre : রামপুরহাট হত্যাকান্ড স্মৃতি ফিরিয়ে আনল সূঁচপুর গণহত্যার, কী হয়েছিল ২২ বছর আগে?
গ্রাফিক্স : অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 24, 2022 | 8:59 PM

নানুর : রামপুরহাট হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। আর এরই মাঝে আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় শোনা গেল প্রায় ২১ বছর আগেকার সূঁচপুর হত্যাকান্ডের (নানুর হত্যাকান্ড) কথা। এদিন মুখ্যমন্ত্রী গিয়েছিলেন রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে। এই বগটুই থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে সূঁচপুর। ২০০০ সালে এই সূঁচপুরেই এক হিংসার ঘটনায় প্রাণ গিয়েছিল ১১ জন নিরীহ মানুষের। আর ২০২২ সালে এই বীরভূম জেলারই আরো এক গ্রামে সংগঠিত হয় এক ভয়ানক হত্যাকান্ড। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও আজ বলেন, “এরকম নৃশংস ঘটনা কখনও ঘটতে পারে, ভাবতেও পারিনি।” পাশাপাশি এদিন মমতা আরও বলেন, “সূঁচপুরে যেমন হয়েছিল, তেমনভাবে কেসটা সাজাও। যাতে কেউ ছাড়া না পায়।”

নানুর গণহত্যা কী?

সালটা ২০০০। ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে মা-মাটি-মানুষের দল তৃণমূল। বাংলায় রাজনীতির ভিত তৈরি করতে এদিক ওদিক ইস্যু খুঁজছে তৃণমূল। সেই সুযোগ এসেও গেল। দিনটা ২৭ জুলাই। খুন হন ১১ জন খেতমজুর। বোমাবাজি, গুলি এবং ধারাল অস্ত্রের কোপেই খুন হন বলে অনুমান। মৃতদেহ পাওয়া যায়নি বহু নিহতেরও। তাঁরা সকলে তৃণমূল সমর্থক বলেই জানা গিয়েছিল। অভিযোগের তির স্থানীয় সিপিএম নেতা-কর্মীদের দিকে। এই গণহত্যার পরপরই সিপিএম নেতৃবৃন্দরা দাবি করেছিলেন নিহতেরা ডাকাত। এমনকি এই এলাকার তৎকালীন সিপিএম সাংসদ এবং লোকসভায় অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় নিহতদের ভাড়াটে গুণ্ডা, ডাকাত এবং কুখ্যাত সমাজবিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তবে প্রবীণ সিপিএম নেতা এবং পলিটব্যুরোর সদস্য অনিল বিশ্বাস ও বিমান বসু এই গণহত্যা এবং এই ঘটনা পরবর্তী হিংসার তীব্র নিন্দা করেছেন।

নানুর গণহত্যাকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের উত্থান

২০০০ সাল। রাজ্যে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে ঘাসফুল শিবির। ধীরে ধীরে সংগঠন বাড়াচ্ছে। সেইসময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রে বিজেপির সঙ্গে এনডিএ জোট সরকারে ছিলেন। অটল বিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় রেলমন্ত্রী ছিলেন তিনি। সেইসময় নিহতদের পরিবারের এক জন করে সদস্যকে রেলে চাকরি দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত এবং আহতদের পরিবারের এক জন করে সদস্য রেলে চাকরিও পেয়েছিলেন। তবে সূঁচপুর গণহত্যায় নিহত সবচেয়ে ছোটো সদস্য ছিলেন আলি হোসেন। তাঁর মায়ের আক্ষেপ তাঁর পরিবারের একজনও চাকরি পাননি। তবে এই ঘটনায় ১০ জন নিহত এবং দুই জন আহতের পরিবারের একজন করে সদস্যকে চাকরি দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিহতদের চাকরি দেওয়ার নাম করে সহানুভূতি কুড়িয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। এইভাবেই শুরু লাল গড়ে সবুজের পথ চলা। ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে লালদুর্গে ভাঙন ধরায় তৃণমূল কংগ্রেস। বামেদের গড় হিসেবে পরিচিত দুটি পঞ্চায়েতে ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল, কংগ্রেস ও বিজেপি জোট।

নানুর গণহত্যা মামলা

নেতাই গণহত্যায় মামলা গড়ায় কলকাতা হাইকোর্ট অবধি। নানুর থানার পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করে। ২০০১ সালে নানুর থানার পুলিশ চার্জশিট পেশ করে। দীর্ঘ ১০ বছর পর ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে সিপিএমের দাপুটে নেতা ও নানুর জ়োনাল কমিটির সদস্য নিত্যনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় সহ ৪৪ জন সিপিএম নেতা ও কর্মীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সিউড়ির জেলা আদালত তাঁদের যাবজ্জীবন সাজা দেয়। ২০১৪ সালের ১৬ মার্চ কলকাতা হাইকোর্ট বেকসুর খালাস করে দেন ১৯ জনকে। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং নিশীথা মাহাত্রের ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দেয়। অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য আদালতে বলেছিলেন, “জমি সংক্রান্ত বিবাদে সেখানে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতিকে জড়িয়ে এক গ্রামের ৪৪ জনকে ইচ্ছাকৃতভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।”

শহিদ দিবস পালন

২০০০ এর এই নানুর গণহত্যার পর থেকেই শহিদ দিবস পালন করে আসছে তৃণমূল কংগ্রেস। বাসাপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শহিদ বেদী নির্মাণ করা হয়। ২০০১ সাল থেকেই সেখানে শহিদ দিবস পালন করার উদ্যোাগ নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে প্রতি বছর এইদিনে বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় শহিদ দিবস পালন করা হয়। সেখানে নিহতদের প্রতি সম্মান জানানো হয়।

আরও পড়ুন : Bagtui Massacre : ‘মুসলিমদের ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার,’ রামপুরহাট হত্যাকান্ডে মমতাকে আক্রমণ ওয়েইসির