‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ হান জুনেই, আদালতে তোলা হল ‘চিনা গুপ্তচর’-কে

হানের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ রাষ্ট্রদোহিতার। তদন্তকারীদের দাবি, চিনের গুপ্তচর হয়ে ভারতের আর্থিক পরিকাঠামো ধ্বংস করার জন্যই হানের ভারতে আসা। গোটা ভারত জুড়ে চিন একটি প্রতারণার জাল বুনেছে।

'রাষ্ট্রদ্রোহী' হান জুনেই, আদালতে তোলা হল 'চিনা গুপ্তচর'-কে
আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হান জুনেইকে, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jun 12, 2021 | 3:05 PM

মালদহ: বাংলায় ‘চিনা গুপ্তচর’ হান জুনেইয়ের অনুপ্রবেশ এবং রহস্যজনক গতিবিধি নিয়ে আগেই সন্দেহ করেছিলেন গোয়েন্দারা। মালদহে এনআইএ-আইবির (NIA-IB) জেরার মুখেও পড়তে হয়েছে হানকে। শনিবার, ধৃত হান জুনেইকে তোলা হল মালদা জেলা আদালতে। বিশেষ পুলিশ নিরাপত্তা ও নজরদারিতে তাঁকে আদালতে নিয়ে আসা হয়।

হানের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ রাষ্ট্রদোহিতার। তদন্তকারীদের দাবি, চিনের গুপ্তচর হয়ে ভারতের আর্থিক পরিকাঠামো ধ্বংস করার জন্যই হানের ভারতে আসা। গোটা ভারত জুড়ে চিন (China) একটি প্রতারণার জাল বুনেছে। ‘মাল্টি লেভেল মার্কেটিং’ এর নাম করে হান ও তাঁর সঙ্গী সাং জিয়ান জাল বুনেছিলেন। পাওয়ার ব্যাঙ্ক ও ইভেন্ট প্ল্যান্ট বলে দুটি অ্যাপকে ডেভলপ করেছিলেন তাঁরা। টাকা দ্বিগুণ করিয়ে দেওয়ার নাম করে, সেই অ্যাপের মাধ্যমেই তাঁরা ভারতে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে লগ্নি করাতেন। হানকে জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ১৩০০ ভারতীয় সিমকার্ড (sim card) জাল তথ্য সহযোগে নিজের স্ত্রী ও সঙ্গী সাং জিয়ানের সাহায্যে চিনে নিয়ে চলে যান হান। নিজের অন্তর্বাসের আড়ালে সিম পাচার করতেন তিনি। সেই জাল সিম দিয়ে অ্যাকাউন্ট হ্য়াক করে অনলাইনেই টাকা হাতিয়ে নিতেন তাঁরা। অনলাইনে জালিয়াতি করে টাকা লেনদেনের পাঁচটি যন্ত্র পাওয়া গিয়েছে হানের কাছে। এছাড়াও পাওয়া গিয়েছে, বাংলাদেশের কয়েকটি সিম কার্ড, পেন ড্রাইভ, অ্যাপেলের ল্যাপটপ, আইফোন, বাংলাদেশ এবং ভারতীয় টাকা। হানের ল্যাপটপ ও মোবাইল থেকে পাচার সংক্রান্ত বহু তথ্য় পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, লখনউয়ে হান ও তাঁর স্ত্রীর নামে মামলা দায়ের হওয়ায় চিন তাঁকে ভারতের ভিসা দিতে অস্বীকার করে। তখন ঘুরপথে নেপাল থেকে বাংলাদেশ হয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ হানের। বিএসএফের (BSF) প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে হান জুনেই একজন দাগি আসামী। যে পদ্ধতিতে হান ভারতে প্রবেশ করেন, সেই একই পথে সীমান্ত পেরিয়ে চিনে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাই করেছিলেন তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা। তদন্তকারীরা আরও জানিয়েছেন, হানের তিন সহযোগী গত বছর লখনউ এটিএসের হাতে ধরা পড়ে। গত জানুয়ারি মাসে লখনউ এটিএস জুলাই ও এলিস নামে দুই চিনা নাগরিককে গ্রেফতার করে। এদের কাছ থেকেই হদিশ মেলে সাং জিয়ান নামে চিনের আরও এক নাগরিকের। তাকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তকারীরা দেখতে পান, ধৃত তিন জনই ভারতীয় নামে প্রচুর ভারতীয় সিম কার্ড তুলছিল। সেই সিম কার্ড তারা চিনে পাঠাচ্ছিল। তাঁদের সূত্রেই হানের কথা প্রথম জানা যায়। হান ও তাঁর স্ত্রী-র নামে মামলা করে এটিএস।

শনিবার, আদালত থেকে হানকে নিজেদের হেফাজতে রাখার আর্জি জানিয়েছে লখনউ এটিএস। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার কালিয়াচকের মিলিক সুলতানপুর সীমান্ত এলাকা থেকে হান জুনেইকে পাকড়াও করে বিএসএফ। সীমান্তে এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছিলেন তিনি। তা দেখেই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সন্দেহ হয়। তখনই তাঁকে আটক করে মহদিপুর ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।

আরও পড়ুন: ‘বিতর্ক-ভারতী’! উপাচার্য ‘মানহানি’ করেছেন, প্রশাসনের দ্বারস্থ বিশ্বভারতীর অধ্যাপক