KLO: মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে এবার শান্তি আলোচনায় কেএলও, তবে কি আলাদা হচ্ছে উত্তরবঙ্গ?

KLO: উত্তরবঙ্গের ছটি জেলা এবং নিম্ন অসমের ৭ টি জেলা নিয়ে পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে সহিংস আন্দোলনে নেমেছিল কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন।

KLO: মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে এবার শান্তি আলোচনায় কেএলও, তবে কি আলাদা হচ্ছে উত্তরবঙ্গ?
স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার পথে কেএলও?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 03, 2021 | 11:33 AM

কোচবিহার: অস্ত্র ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ডাক কেএলও- জঙ্গিদের । অসম সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে শান্তি আলোচনায় আসতে চলেছে উত্তরের নিষিদ্ধ সংগঠন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন অর্থাত্ কেএলও। তাহলে কি আলাদা হচ্ছে উত্তরবঙ্গ ? উঁকি দিচ্ছে একাধিক প্রশ্ন ।

উত্তরবঙ্গের ছটি জেলা এবং নিম্ন অসমের ৭ টি জেলা নিয়ে পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে সহিংস আন্দোলনে নেমেছিল কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে আন্দোলন চালিয়ে অবশেষে মায়ানমারে আশ্রয় নিয়ে আছেন এই জঙ্গি সংগঠনের সর্বাধিনায়ক জীবন সিংহ এবং তাঁর সঙ্গে কয়েকশো কেএলও জঙ্গি ।

ইতিপূর্বে অসম সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন এনডিএফবি-র জঙ্গিরা অস্ত্র ছেড়ে সাধারণ জীবনে ফিরে এসেছে । প্রায় কয়েক হাজার জঙ্গী আত্মসমর্পণ করেছেন । সম্ভবত সেই পথেই ফের একবার আত্মসমর্পণের পথে আসতে চলেছে কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন প্রায় সকলেই ।

বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই টুইট করেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা । কেএলও- র দাবি পূরণে এই শান্তি আলোচনায় অসম সরকার উদ্যোগী হলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার কী করবে সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছে সকলে । কারণ উত্তরবঙ্গের যে অংশ নিয়ে পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবি করে কেএলও, সেই অংশটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমিকা কী হবে তাই নিয়ে একাধিক প্রশ্ন আছে । জটিলতা রয়েছে বিস্তর ।

বিগত দিনে একাধিক নাশকতা মূলক কার্যকলাপ চালিয়ে বহু মামলা জড়িয়ে রয়েছে কেএলও সদস্যরা। সম্প্রতি ইউএপিএ ধারায় কেএলও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বিধান নগর থানায় । ফলে মায়ানমার থেকে শান্তি প্রক্রিয়ায় এলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার কী ভূমিকা গ্রহণ সেদিকেই তাকিয়ে সকলে ।

তবে নিষিদ্ধ এই সংগঠনকে সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার যে প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছে অসম ও কেন্দ্রীয় সরকার তাতে উত্তরবঙ্গ ভাগেরও একটা বিষয় স্পষ্ট হচ্ছে ।

প্রসঙ্গত, অগাস্টে একটি ভিডিয়ো বার্তা প্রকাশ্যে এসেছিল কেএলও-র তরফে। উত্তরবঙ্গের কোচ রাজবংশী জনজাতির মানুষদের নিয়ে তৈরি এই জঙ্গি সংগঠন বা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এবার ভোল বদলে পৃথক রাজ্যের বদলে স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি করে।

জীবন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন কেএলও গত কয়েক মাস ধরেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গত দুমাসে অন্তত চারটি ভিডিয়ো বার্তা দিয়েছেন কেএলও চেয়ারম্যান জীবন সিংহ।

সেই ভিডিয়োতে অবশ্য জীবন সিংহকে দেখা যায়নি। সেই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, জীবন সিংহর লিখিত বিবৃতি পাঠ করছেন পাভেল কোচ নামে এক যুবক। তিনি নিজেকে সংগঠনের বিদেশ সচিব হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন।

লিখিত বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, তাঁরা উত্তরবঙ্গের সাতটি জেলা, নেপালের কিছু অংশ, বিহারের কিষানগঞ্জ সংলগ্ন কিছু অংশ, অসমের বেশ কিছু এলাকা, মেঘালয়ের বেশ কিছু এলাকা ও বাংলাদেশের রংপুর এলাকা নিয়ে স্বাধীন কামতাপুর রাষ্ট্র গঠন করতে চায়।

তাঁদের দাবি, ইতিহাসে যে কোচবিহার রাজ্যের উল্লেখ ছিল, তার যা সীমা তার পরিসর মেনেই স্বাধীন কামতাপুর রাষ্ট্র তৈরি করা হবে। এই বিবৃতিতে ভারতকে তাঁদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সশস্ত্র সংগ্রামের আহ্বান জানানো হয়েছে এই ভিডিয়ো বার্তায়।

উল্লেখ্য, ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে যেখানে বিভিন্ন জনজাতি, তাঁদের নিজস্ব ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পেয়েছে।  সামাজিক, অর্থনৈতিক মানোন্নয়ন হয়েছে প্রত্যেক জনজাতির। কিন্তু তাঁদের কোনও মানোন্নয়ন এতদিনেও হয়নি। তাঁদের কাছে স্বাধীনতা দিবস অর্থবহ নয়। স্বাধীন হতে গেলে, তাঁদের জনজাতির আলাদা সত্ত্বা প্রয়োজন। আর সেক্ষেত্রেই তাঁদের এই দাবি আরও জোরাল হচ্ছে।

কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের জন্ম ১৯৯৫ সালে। তোমির দাস ওরফে জীবন সিংহ আলিপুরদুয়ারের উত্তর হলদিবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর হাত ধরেই কেএলও-র জন্ম। এবং প্রথম থেকেই কেএলও উত্তর পূর্ব ভারতের বরো ও বরো জঙ্গি গোষ্ঠী এনডিএফবি-র খুব ঘনিষ্ঠ। কেএলও গোষ্ঠী উলফা গোষ্ঠীরও খুব ঘনিষ্ঠ।

আরও পড়ুন: ‘জানলার কাচ চুইয়ে পড়ছিল রক্ত, ভিতরে থেকে ওঁদের টেনে বার করে আনতে কষ্ট হচ্ছিল খুবই!’ মধ্যরাতের হাইওয়েতে ভয়ঙ্কর দৃশ্য