Anit Thapa: ‘আমরাও চাই বছর বছর অডিট হোক,’ অনীতের সুর-বদলে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত পাহাড়ে!

BJP: ২০১১ সালের ১৮ জুলাই কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় জিটিএ চুক্তি। ওই বছর ২ সেপ্টেম্বর রাজ্য বিধানসভায় পাশ হয় জিটিএ বিল। ২০১৪-র ১৪ মার্চ থেকে কার্যকর হয় চুক্তি।

Anit Thapa: 'আমরাও চাই বছর বছর অডিট হোক,' অনীতের সুর-বদলে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত পাহাড়ে!
অনীতরে প্রতিক্রিয়ায় বদল, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 17, 2021 | 3:31 PM

শিলিগুড়ি: ফের ‘টুইটক্কর’ রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের (Jagdeep Dhankhar)। সরাসরি,  জিটিএ-র CAG অডিট নিয়ে সরাসরি রাজ্যের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তোপ দেগেছেন ধনখড়। পাল্টা, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রাক্তন চেয়ারম্যান অনীত থাপা দাবি করেছিলেন, নিয়ম করেই পাহাড়ে জিটিএ অডিট হয়েছে। তারপর ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। সম্পূর্ণ অন্য সুর অনীতের গলায়। স্পষ্টই জানালেন বছর বছর, প্রতিবছর জিটিএ নির্বাচন হওয়া উচিত। অনীতের এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করেই নতুন করে জল্পনা পাহাড়ের রাজনৈতিক মহলে।

গতকাল অর্থাত্‍, মঙ্গলবার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় একটি টুইট করে বলেন,  “জিটিএ (GTA) নিয়ে একাধিক অভিযোগ এসেছে। কোটি কোটি টাকা আর্থিক গরমিলের অভিযোগ এসেছে। কোনও নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। কোনও উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি। আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। সিএজি (CAG) দিয়ে জিটিএ’র (GTA) অডিট করাব।”

তাঁর আরও সংযোজন, “ক্যাগ অডিট স্বচ্ছ দুর্নীতিমুক্ত হওয়া উচিত। মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্রকে এর জবাব দিতে হবে, কেন বিগত ১০ বছর ধরে জিটিএ-তে ক্যাগ অডিট হয়নি। এর উত্তর তাঁদের দিতে হবে।” টুইটে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী ও অমিত মিত্রের নামও উল্লেখ করেছেন রাজ্যপাল।

পাল্টা রাজ্যপালের দাবিকে, কার্যত নস্যাত্‍ করে দিয়ে অনীত দাবি করেছিলেন, নিয়ম করেই জিটিএ-র অডিট হয়েছে। স্বচ্ছতার সঙ্গেই জিটিএ পরিচালিত হচ্ছে। একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে পাহাড়জুড়ে। পাল্টা, রাজ্যপালকে তোপ দেগে অনীতের জিজ্ঞাসা, “কেন পাহাড়ে আসেন রাজ্যপাল? কী অভিযোগ করবেন? কেন করবেন?…পাহাড়ে শান্তির পরিবেশ রয়েছে।”

অথচ, ২৪ ঘণ্টাও কাটল না, অনীত সরাসরি সংবাদমাধ্যমকে বললেন, “আমরা চাই বছর বছর অডিট হোক। ১০ বছর কেন, বছর বছর অডিট হোক। জিটিএ-র অডিট নিয়ে তো আমরা আগেও বলেছি।” আর অনীতের এই সুর বদলেই কার্যত পাহাড়ে ফের সমীকরণ বদলের সম্ভাবনা দেখছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

২০১১ সালের ১৮ জুলাই কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় জিটিএ চুক্তি। ওই বছর ২ সেপ্টেম্বর রাজ্য বিধানসভায় পাশ হয় জিটিএ বিল। ২০১৪-র ১৪ মার্চ থেকে কার্যকর হয় চুক্তি। পাঁচ বছরের জন্য স্বাক্ষরিত জিটিএ চুক্তির মেয়াদ আগেই ফুরিয়েছে। বর্তমানে মোর্চা ভেঙে  যাওয়ায় জিটিএ-র প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও বেশ জটিলতা দেখা দিয়েছে। ২০১২ সালে প্রথম জিটিএ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচন বয়কট করে জিএনএলএফ। দশটির বেশি আসনে প্রার্থী দিয়েই মোর্চার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগে পরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায় সিপিএম। পৃথকভাবে  লড়াই করে তৃণমূল। সর্বোচ্চ আসন পেয়ে জয়ী হয় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।

কিন্তু, পাহাড়ে জিটিএ নির্বাচন যেমন থমকে ছিল, তেমনই থমকে ছিল অডিটও। ফলে, পাহাড়ের একাধিক আঞ্চলিক দলের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন রাজ্যপাল। পাশাপাশি, ওই আঞ্চলিক দলগুলি বিভিন্ন সময়ে দাবিপত্রও প্রকাশ করেছে। শুধু রাজ্যপাল নন, জিটিএ অডিটের দাবি জানিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষও। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে  পাহাড়ে  বিমল গুরুং, রোশন গিরিরাও জিটিএ-র অডিটের দাবি তুলেছিলেন।

তবে সম্প্রতি, ভেঙে গিয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। তারপর, পৃথকভাবে নিজ নিজ দল করেছেন অনীত-বিনয়-বিমল। কার্শিয়াঙে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে অনীত থাপাকে দেখা গেলেও দেখা যায়নি বিমল গুরুঙ ও  বিনয় তামাং-কে। মোর্চা ভেঙে যাওয়ায় বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাহাড়ে ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে জিএনএলএফ। এদিকে, স্বতন্ত্র দল গড়ায় অনীত থাপা, বিমল গুরুঙ বা বিনয় তামাং-দের নিজ নিজ অনুগামী তৈরি হলেও সম্মিলিত জনমত কার্যত নেই। সেক্ষেত্রে, পাহাড়ে নিজ প্রভাব বিস্তার করতে গেলে কোনও বড় রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়া দরকার। সেদিক থেকে অনীত থাপার পক্ষে থাকতে পারে তৃণমূল ও বিজেপি। কারণ পাহাড়ে প্রভাব বিস্তার করতে এই দুই দলই মরিয়া। অন্তত এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

পাহাড়ে জিটিএ নির্বাচন যেমন থমকে ছিল, তেমনই থমকে ছিল অডিটও। ফলে, পাহাড়ের একাধিক আঞ্চলিক দলের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন রাজ্যপাল। পাশাপাশি, ওই আঞ্চলিক দলগুলি বিভিন্ন সময়ে দাবিপত্রও প্রকাশ করেছে। শুধু রাজ্যপাল নন, জিটিএ অডিটের দাবি জানিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষও। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে  পাহাড়ে  বিমল গুরুং, রোশন গিরিরাও জিটিএ-র অডিটের দাবি তুলেছিলেন।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি  কার্শিয়াঙে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, নতুন ভোটার তালিকা এলেই পাহাড়ে জিটিএ নির্বাচন হবে। সভা থেকে তৃণমূল নেত্রী বলেন, “নতুন ভোটার লিস্ট এলেই আমরা জিটিএ নিয়ে এগোব। আমরা পাহাড়ের উন্নয়ন চাই। নির্বাচন হওয়া জরুরি। নিজেদের মধ্যে কোনও বিরোধ নয়। ঝগড়া নয়। একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে উন্নয়নের কাজ করব। জিটিএ নির্বাচন হবে। ওটার সঙ্গে লেগে থাকতে হবে।” অন্যদিকে, ক্ষমতায় এলে পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য  একাধিক প্রকল্প ঘোষণা করা হবে এমনটা আগেই জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।  ফলে অনীত থাপা এখন  কোন পথে পা বাড়ান সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

আরও পড়ুন: Nandigram: পড়ে রয়েছে ভাঙা ঘর, আবাস যোজানার টাকা খরচ হচ্ছে অন্য খাতে, গ্রেফতার ৪!