Jagdeep Dhankhar: ‘কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে GTA-তে, অমিত মিত্র জবাব দিন’
Mamata Banerjee: ২০১১ সালের ১৮ জুলাই কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় জিটিএ চুক্তি।
কলকাতা: ফের ‘টুইটক্কর’ রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের (Jagdeep Dhankhar)। এ বার জিটিএ-র CAG অডিট নিয়ে সরাসরি রাজ্যের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তোপ দাগলেন ধনখড়। নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে টুইট করে সরাসরি রাজ্য সরকারের ‘দুর্নীতির’ বিরুদ্ধে সরব হন রাজ্যপাল। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত দেখা যেতে পারে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এদিন রাজ্যপাল টুইটে লেখেন, “জিটিএ (GTA) নিয়ে একাধিক অভিযোগ এসেছে। কোটি কোটি টাকা আর্থিক গরমিলের অভিযোগ এসেছে। কোনও নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। কোনও উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি। আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। সিএজি (CAG) দিয়ে জিটিএ’র (GTA) অডিট করাব।” তাঁর আরও সংযোজন, “ক্যাগ অডিট স্বচ্ছ দুর্নীতিমুক্ত হওয়া উচিত। মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্রকে এর জবাব দিতে হবে, কেন বিগত ১০ বছর ধরে জিটিএ-তে ক্যাগ অডিট হয়নি। এর উত্তর তাঁদের দিতে হবে।” টুইটে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী ও অমিত মিত্রের নামও উল্লেখ করেছেন রাজ্যপাল।
#AuditDiwas CAG audit promotes transparency, accountability & curbs corruption.
Chief Economic Advisor @DrAmitMitra @MamataOfficial needs to answer – Why no CAG audit #GTA (Gorkha Territorial Administration) for TEN years resulting in GTA being labelled ‘den of corruption’ ? pic.twitter.com/i4FTCSw8bN
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) November 16, 2021
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কার্শিয়াঙে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, নতুন ভোটার তালিকা এলেই পাহাড়ে জিটিএ নির্বাচন হবে। সভা থেকে তৃণমূল নেত্রী বলেন, “নতুন ভোটার লিস্ট এলেই আমরা জিটিএ নিয়ে এগোব। আমরা পাহাড়ের উন্নয়ন চাই। নির্বাচন হওয়া জরুরি। নিজেদের মধ্যে কোনও বিরোধ নয়। ঝগড়া নয়। একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে উন্নয়নের কাজ করব। জিটিএ নির্বাচন হবে। ওটার সঙ্গে লেগে থাকতে হবে।” এখানেই না থেমে তৃণমূল নেত্রী আরও যোগ করেন, “সবসময় কাজে থাকতে পারবে এমন কাউকে জিটিএ-র দায়িত্ব দেওয়া ভাল।” তারপর, দার্জিলিঙের জেলাশাসককে জিটিএ-র দায়িত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রী।”
২০১১ সালের ১৮ জুলাই কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় জিটিএ চুক্তি। ওই বছর ২ সেপ্টেম্বর রাজ্য বিধানসভায় পাশ হয় জিটিএ বিল। ২০১৪-র ১৪ মার্চ থেকে কার্যকর হয় চুক্তি। পাঁচ বছরের জন্য স্বাক্ষরিত জিটিএ চুক্তির মেয়াদ আগেই ফুরিয়েছে। বর্তমানে মোর্চা ভেঙে যাওয়ায় জিটিএ-র প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও বেশ জটিলতা দেখা দিয়েছে। ২০১২ সালে প্রথম জিটিএ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচন বয়কট করে জিএনএলএফ। দশটির বেশি আসনে প্রার্থী দিয়েই মোর্চার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগে পরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায় সিপিএম। পৃথকভাবে লড়াই করে তৃণমূল। সর্বোচ্চ আসন পেয়ে জয়ী হয় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।
কিন্তু, পাহাড়ে জিটিএ নির্বাচন যেমন থমকে ছিল, তেমনই থমকে ছিল অডিটও। ফলে, পাহাড়ের একাধিক আঞ্চলিক দলের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন রাজ্যপাল। পাশাপাশি, ওই আঞ্চলিক দলগুলি বিভিন্ন সময়ে দাবিপত্রও প্রকাশ করেছে। শুধু রাজ্যপাল নন, জিটিএ অডিটের দাবি জানিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষও। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে পাহাড়ে বিমল গুরুং, রোশন গিরিরাও জিটিএ-র অডিটের দাবি তুলেছিলেন।
যদিও, রাজ্যপালের এই দাবিকে কার্যত গুরুত্ব দিতে নারাজ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রাক্তন চেয়ারম্যান অনীত থাপা। তাঁর দাবি, নিয়ম করেই জিটিএ-র অডিট হয়েছে। স্বচ্ছতার সঙ্গেই জিটিএ পরিচালিত হচ্ছে। একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে পাহাড়জুড়ে। পাল্টা, রাজ্যপালকে তোপ দেগে অনীতের জিজ্ঞাসা, “কেন পাহাড়ে আসেন রাজ্যপাল? কী অভিযোগ করবেন? কেন করবেন?…পাহাড়ে শান্তির পরিবেশ রয়েছে।”
উল্লেখ্য, পাহাড়ের রাজনীতিতে সম্প্রতি বিশাল পটপরিবর্তন হয়েছে। ভেঙে গিয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। তারপর, পৃথকভাবে নিজ নিজ দল করেছেন অনীত-বিনয়-বিমল। কার্শিয়াঙে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে অনীত থাপাকে দেখা গেলেও দেখা যায়নি বিমল গুরুঙ ও বিনয় তামাং-কে।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের অনুমান, মোর্চা কার্যত ভেঙে গিয়েছে। পৃথক পৃথক দল ঘোষণা করেছেন বিনয় তামাং ও অনীত থাপা। মোর্চার রাশ একা হাতেই ধরেছেন বিমল গুরুঙ। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাহাড়ে ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে জিএনএলএফ। ফলে, পাহাড়ে ঘর গোছাতে হলে জিটিএ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে তৃণমূল। মোর্চার ভাঙন রোধেও তত্পর শাসক শিবির। অন্তত তেমনই বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। জানিয়েছেন, পাহাড়ে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও বিরোধ নেই। ফলে, সেদিক থেকে রাজ্যের বিরুদ্ধে আপাতত যে সুর তুলবেন না অনীত, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
আরও পড়ুন: Post Poll Violence: মামলা রুজুর পরেই নাবালিকা ধর্ষণ-কাণ্ডে দ্বিতীয়বার নবগ্রামে ‘স্পটভিজিট’ সিবিআইয়ের