রাতের অন্ধকারে নদীর ধারে পড়ে রয়েছে একগুচ্ছ ডিজিটাল রেশন কার্ড! চাঞ্চল্য বালুরঘাটে

জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় প্রায় ১৮ লক্ষ ৬৫ হাজার ৫১৫ জন রেশন কার্ড গ্রাহক রয়েছে। বছর পাঁচেক আগে থেকে পুরনো রেশন কার্ড বদলে ডিজিটাল রেশন কার্ড দেওয়া শুরু হয়েছে৷ বর্তমানে জেলার প্রায় ৯৮ শতাংশ মানুষকে ডিজিটাল রেশন কার্ড দেওয়া হয়ে গিয়েছে।

রাতের অন্ধকারে নদীর ধারে পড়ে রয়েছে একগুচ্ছ ডিজিটাল রেশন কার্ড! চাঞ্চল্য বালুরঘাটে
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jun 06, 2021 | 12:08 AM

দক্ষিণ দিনাজপুর: নদীর ধারে পড়ে রয়েছে একগুচ্ছ ডিজিটাল রেশন কার্ড (Digital ration Card)! সারাদিন চোখে পড়েনি কারুর। রাতের অন্ধকারে আচমকাই নদীর ধারের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে পথচারিরা দেখতে পান অনেকগুলো কার্ড পড়ে রয়েছে। কাছে গিয়ে বোঝা যায়, সবগুলিই রেশন কার্ড। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় বালুরঘাট থানার পুলিশকে। পুলিশ এসে প্রায় ১৫ থেকে ২০ টি কার্ড (Digital ration Card) উদ্ধার করে। তবে, জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, এই মর্মে যদিও কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তবে একসঙ্গে এত রেশন কার্ড কোথা থেকে এল তা নিয়ে ধন্দে এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দা ভানু দেব বলেন, “শুক্রবার রাতে আমরা নদীর ধারে আমাদের এই কার্ডগুলি নজের আসে। তখনও বুঝিনি যে এগুলো রেশন কার্ড। বুঝতে পেরেই পুলিশে খবর দিই। পুলিশ এসে কিছু কার্ড সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছে। আমাদের অনুমান, বাকি কার্ডগুলি জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক মানুষ এখনও ডিজিটাল রেশন কার্ড পায়নি। সেক্ষেত্রে এই কার্ডগুলি কোথা থেকে এল তা প্রশাসনের তরফে খতিয়ে দেখা হোক।”

বালুরঘাট পুলিশ জানিয়েছে, এইভাবে ডিজিটাল রেশন কার্ড উদ্ধার প্রথম নয়। এর আগে জেলার বিভিন্ন জায়গায় ডিজিটাল রেশন কার্ড পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু, কীভাবে এই কার্ড নদীর ধারে এল তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, কিছু কার্ড (Digital ration Card) উদ্ধার হলেও বাকি কিছু নদীর জলে ভেসে গিয়ে থাকতে পারে। ভুয়ো রেশন কার্ড তৈরির কোনও চক্র জেলায় সক্রিয় হয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। জেলা খাদ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, এখনও রেশন কার্ড হারিয়ে যাওয়ার বা এই ধরনের কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে, এই ধরনের কিছু হয়ে থাকলে তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে।

জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় প্রায় ১৮ লক্ষ ৬৫ হাজার ৫১৫ জন রেশন কার্ড গ্রাহক রয়েছে। বছর পাঁচেক আগে থেকে পুরনো রেশন কার্ড বদলে ডিজিটাল রেশন কার্ড (Digital ration Card) দেওয়া শুরু হয়েছে ৷ বর্তমানে জেলার প্রায় ৯৮ শতাংশ মানুষকে ডিজিটাল রেশন কার্ড দেওয়া হয়ে গিয়েছে। বাকিদের স্লিপের মাধ্যমে রেশন দেওয়া হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে ওই রেশন কার্ডগুলি কোথা থেকে এল?এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ামক জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, “ডিজিটাল কার্ড উদ্ধারের খবর পেয়েছি। উদ্ধার হওয়া কার্ডগুলি কোথা থেকে এল তা জানিনা। তবে আমাদের অফিস থেকে একটি কার্ডও কোথায় যায়নি। জেলার ৯৮% মানুষ ডিজিটাল কার্ড পেয়ে গিয়েছে। যারা এখনও পায়নি তারা স্লিপের মাধ্যমে রেশন তুলছেন। এই কার্ডগুলি আমরা মিলিয়ে দেখছি। এর সাথে কোন অসাধু চক্রের যোগ থাকলে আমরা প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

উল্লেখ্য, আগে রেশনের জন্য চালু ছিল এপিএল, বিপিএল যোজনার আওতাভুক্তদের কার্ড। কেন্দ্রের নয়া খাদ্য সুরক্ষা যোজনা চালু হওয়ার পর সেই নিয়মে বেশ কিছু হেরফের হয়েছিল। কেন্দ্রের যোজনার আওতায় আসেন রাজ্যের প্রায় ছয় কোটি মানুষ। কিন্তু এই যোজনার বাইরে যাঁরা থেকে গিয়েছেন তাঁদের জন্য় রাজ্য সরকারের তরফে খাদ্যসাথী প্রকল্প চালু করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন রাজ্যের প্রায় আট কোটি মানুষ। সকলেই যাতে রেশন পরিষেবার সুবিধা পান তার জন্য়েই মূলত ডিজিটাল রেশন কার্ড (Digital ration Card) চালু করতে উদ্য়োগী হয় খাদ্য় ভবন।  ডিজিটাল রেশন কার্ড এবং ছাপানো রেশন কার্ডের বৈধতা একই। নির্দিষ্ট ন্য়ায্যমূল্যের খাদ্য়দ্রব্যই শুধু নয়, পরিচয়পত্র হিসেবেও এই কার্ডটি ব্যবহার করা যাবে। গোটা রেশন পরিষেবাটিই হবে বায়োমেট্রিক অথবা অনলাইন পদ্ধতিতে। তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তেহারেও একটি বড় প্রকল্প ছিল ‘দুয়ারে রেশন’। তৃণমূল ক্ষমতায় এলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রেশন পৌঁছবে এমনই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পের ড্রাই রানও ইতিমধ্যে সেরে ফেলেছে রাজ্য সরকার। সূত্রের খবর, আগামী অগাস্টের শেষে অথবা সেপ্টেম্বরের শুরুতে ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন মুখ্য়মন্ত্রী।

আরও পড়ুন: সিপিএমকে সাম্প্রদায়িক তকমা! বামজোটে ‘বিধি বাম’ এবার ফরোয়ার্ড ব্লকও