ঘরই নেই, দুয়ারে আসবে কি সরকার! মনে প্রশ্ন অশীতিপর মায়ারানির

চোখে জল নিয়ে এখন বৃদ্ধা বলছেন, "সারা জীবন কষ্টে গেল শেষ বয়সে একটা ঘর পেলাম না। মগড়া ব্লক অফিসে গেলাম, বলল ঘর পাবো। আজও পেলাম না।"

ঘরই নেই, দুয়ারে আসবে কি সরকার! মনে প্রশ্ন অশীতিপর মায়ারানির
ঘরই নেই, দুয়ারে আসবে কি সরকার! মনে প্রশ্ন অশীতিপর মায়ারানির
Follow Us:
| Updated on: Jan 10, 2021 | 5:37 PM

হুগলি: সরকারি প্রকল্পের সবরকম সমস্যা সমাধানে দরাজহস্ত হয়েছে রাজ্য। সব ধরনের পরিষেবা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে দুয়ারে এসেছে সরকার। কিন্তু, যাদের মাথার উপর ছাদ কিংবা ঘরের দুয়ারই নেই তাঁদের কী হবে? তারা কি সরকারের কোনও প্রকল্পের সুবিধা পাবেন না? ঠিক এই প্রশ্নই জেগেছে চুঁচু্ড়ার বঙ্কিম কাননের ৭০ বছরের বৃদ্ধা মায়ারানি বিশ্বাসের মনে।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হঠাৎ আগুন লেগে পুড়ে গিয়েছিল টালির চালের ঘর দু’টো। সে সময় চেয়েচিন্তে পলিথিনের ত্রিপল দিয়ে আচ্ছাদন দিয়ে কোনও রকমে রোদ-বৃষ্টি আটকান অশীতিপর বৃদ্ধা।

মায়ারানির বাড়িতে থাকে বিধবা মেয়ে, দুই নাতি আর এক নাতনি। বড় নাতি সামান্য কাজ করে যা আয় করে, তা দিয়েই গুজরান হয় তাঁদের। মায়ারানি একশো দিনের কাজ করতেন। এখন বয়স হয়ে যাওয়ায় তা আর পারেন না। মেয়ে সন্ধ্যারানি মণ্ডল রাস্তার পাশে কাঁচা আনাজ বিক্রি করতেন। অসুস্থ হওয়ায় এখন আর কাজ করতে পারেন না। দু’বেলা খাবার জোটাতেই হিমশিম অবস্থা। তাই পোড়া ঘরটা সারানো আর হয়ে ওঠেনি। এর মধ্যে আমপান ঝড় কাটিয়ে কোনও রকমে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ভেঙে পড়া ইটের দেওয়ালগুলো। ছাউনি শতছিন্ন হয়ে গিয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় বৃদ্ধার নাতনি সুষমা পড়াশোনা করে লণ্ঠনের আলোয়।

কোদালিয়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের পিছনের পাড়া বঙ্কিম কানন। পঞ্চায়েত থেকে বাংলা আবাস যোজনার ঘর পাওয়া যায়, শুনেই ছুটে গিয়েছিলেন বৃদ্ধা। পঞ্চায়েত থেকে ব্লক অফিস, অনেক ঘোরাঘুরি করেও ঘর মেলেনি। স্থানীয় বিধায়ক অসিত মজুমদারের কাছেও দরবার করেন। করোনাকালে কিছু চাল-ডাল মিলেছে ঠিকই। তবে ঘরের সুরাহা হয়নি। চোখে জল নিয়ে এখন বৃদ্ধা বলছেন, “সারা জীবন কষ্টে গেল শেষ বয়সে একটা ঘর পেলাম না। মগড়া ব্লক অফিসে গেলাম, বলল ঘর পাবো। আজও পেলাম না।”

আরও পড়ুন: দুয়ারে কে আগে বিনে পয়সায় পৌঁছে দেবে ভ্যাকসিন? এ নিয়ে তরজা কেন্দ্র-রাজ্যের

বৃদ্ধার মেয়ে সন্ধ্যারানী বলেন, “কীভাবে এই ঘরে থাকি ভগবান জানে। ঝড়ের দিন শুধু ভগবানকেই ডেকেছি। পঞ্চায়েত থেকে বলা হয়েছিল ঘর দেওয়া হবে, কবে হবে জানি না।” বঙ্কিম কাননের পঞ্চায়েত সদস্যা ডলি ঘোষ বলেন, “আমি ওদের নিয়ে বিডিও অফিসে গেছি। প্রধানকে বলেছি, বিধায়ক জানেন। অনেক চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু এখনও ঘর হয়নি। বৃদ্ধার পরিবার খুবই কষ্টে আছে। ওদের বিপিএল কার্ড ছিল না। কাগজ লিখে এনে দিয়েছি যাতে বিনা পয়সায় চাল পায়।”

দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প চলছে রাজ্যের সর্বত্র। ভাল সাড়া পড়েছে। অগুণতি মানুষের কত সমস্যা রোজ সমাধান হচ্ছে। এলাকার বিধায়ক অসিত মজুমদার ঘুরছেন প্রতিটি ক্যাম্পে। তাঁর কাছে বৃদ্ধার অসহায় অবস্থা জানানো হয়। মায়ারানী এখনও কেন ঘর পাননি তা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কিছু বলার নেই। বলার হয়ত বৃদ্ধারও কিছু নেই। কারণ দুয়ারে সরকার এলেও তাঁর যে দুয়ারই নেই।

আরও পড়ুন: কন্যাসন্তান হওয়ায় মানসিক চাপ! দুই মেয়েকে জলে ডুবিয়ে খুন করল মা!