আইএসএফে ‘না’ অধীরের, ‘হ্যাঁ’ মান্নানের, ক্রমেই ‘অনিশ্চিত’ হচ্ছে জোটের ভবিষ্যৎ

Abdul Mannan: কংগ্রেসের তরফে, অধীরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতারা। তাঁদের দাবি ছিল, বাংলার পরিস্থিতি মোকাবিলা করার চেয়ে বেশি সময় দিল্লিতেই পর্যবসিত করেন অধীর।

আইএসএফে 'না' অধীরের, 'হ্যাঁ' মান্নানের, ক্রমেই 'অনিশ্চিত' হচ্ছে জোটের ভবিষ্যৎ
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jun 27, 2021 | 8:17 PM

হুগলি: একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটেছে সংযুক্ত মোর্চার । নির্বাচনের পর থেকেই পরাজয়ের কারণ খতিয়ে দেখতে দলীয় বৈঠক ছাড়াও শরিক দলগুলির সঙ্গে একাধিক বৈঠক সেরেছে বাম-কংগ্রেস। আইএসএফের সঙ্গে জোটের বিরুদ্ধাচারণ করেছে বামেদের শরিক দল ফরোয়ার্ড ব্লক। আলিমুদ্দিনের নরমগরম হাওয়া পৌঁছেছে জেলাতেও। অন্যদিকে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে (Adhir Chaudhuri)  নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলের সদস্যরা।

সম্প্রতি, কংগ্রেস নেতা অধীর (Adhir Chaudhuri)  জানান, আইএসএফের সঙ্গে কোনও জোট নেই কংগ্রেসের। বহরমপুরের একটি সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “মুর্শিদাবাদ জেলাতে আইএসএফ আমাদের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছিল। তাই ওদের সঙ্গে জোট আমাদের আগেও ছিল না। আগামী দিনেও থাকবে না।” তবে, পুর নির্বাচনে সিপিএমের সঙ্গেই লড়াই হবে সেই কথা স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা।

রবিবার, সম্পূর্ণ অধীরের (Adhir Chaudhuri)  বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে জোট প্রসঙ্গে মতামত জানালেন কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। স্পষ্টই বললেন, “আইএসএফের সঙ্গে আমরা আমাদের জোট ভাঙছি না। অনেকে অনেক বড় পদাধিকারী হতে পারেন। কিন্তু, আমি কংগ্রেসের সবচেয়ে বর্ষীয়ান নেতা। আর আমি সর্বদা দিল্লির নির্দেশ মেনে চলি। এমন কোনও নির্দেশ দিল্লির তরফে আসেনি। যদি আসে তখন নিশ্চই ভাবনাচিন্তা করব। কারোর যদি ক্ষমতা থাকে, সে এসে বলুক জোট ভেঙে গিয়েছে। এভাবে বললেই জোট ভাঙা যায় না। তার জন্য ঊর্ধ্বতনের নির্দেশ লাগে।”

MEETING BETWEEN ABBAS SIDDIQUI AND ABDUL MANNAN

বৈঠকে মান্নান-আব্বাস , নিজস্ব চিত্র

বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতার (Abdul Mannan) আরও দাবি, ফুরফুরা শরীফের পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে তাঁর পারিবারিক সম্পর্ক। ব্যক্তিগত সেই সম্পর্কের খাতিরে না হলেও রাজনৈতিক খাতিরে তিনি আব্বাসদের পাশে আছে বলেই জানান। মান্নানের কথায়, “ওরা অত্যাচারিত হচ্ছে। ওরা আমাদেরই শরিক দল। অন্তত, ব্যক্তিগত সম্পর্কের খাতিরে না হোক, রাজনৈতিক খাতিরেই আমি ওদের পাশে থাকব। সেখানে একমাত্র  সুপ্রিম অর্ডার ছাড়া আর কারোর কথা শোনার আমি পক্ষপাতী নই।”

অন্যদিকে, রবিবারের বৈঠকে উপস্থিত ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী বলেন, “আমি অপক্ক। নতুন এসেছি। জোটের ব্যাপারে শেষ সিদ্ধান্ত নেবেন প্রদীপ ভট্টাচার্য ও  আব্দুল মান্নান। তাঁরা যদি জোট ভাঙার কথা বলেন, তখন আমরা তা নিঃসন্দেহে ঘোষণা করব। তবে এখনও এ ব্যাপারে আমরা বিশেষ কিছু জানি না। দেখা যাক ভবিষ্যতে কী হয়।”

উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে, আগামী পুরভোটে সংযুক্ত মোর্চার সঙ্গে জোট চেয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীকে চিঠি লেখেন মান্নান। নির্বাচন বামফ্রন্ট ও আব্বাস সিদ্দিকীর দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টকে নিয়ে সংযুক্ত মোর্চার গড়ে ভোটে লড়াই করেছিল কংগ্রেস। কিন্তু ভাঙড়ে আইএসএফ (ISF) প্রার্থী নওশাদ সিদ্দিকী ছাড়া সংযুক্ত মোর্চার কেউ জয় পাননি। এমনকী কংগ্রেস গড় মালদা, মুর্শিদাবাদের জয়ের হাসি হেসেছে তৃণমূল।

ফলে, জোট নিয়ে রীতিমতো প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে বামফ্রন্টের চেয়ারম্য়ান বিমান বসুকে। অন্য়দিকে, কংগ্রেসের তরফে, অধীরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতারা। তাঁদের দাবি ছিল, বাংলার পরিস্থিতি মোকাবিলা করার চেয়ে বেশি সময় দিল্লিতেই পর্যবসিত করেন অধীর। পাশাপাশি, নির্বাচন আবহে আইএসএফ ও আব্বাসকে নিশানা করে অধীরের বার বার আক্রমণকেও মানতে পারেনি দল। বিভ্রান্ত হয়েছিলেন আমজনতা এমনই অভিযোগ।

কংগ্রেসের দলীয় কোন্দলের শেষ এখানেই নয়। মান্নান-অধীরের পরস্পরবিরোধীতা দলের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায়। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র মারা যাওয়ার পর কে হবেন তা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সেইসময়, হাইকম্য়ান্ডকে চিঠি লিখে অধীরকে সভাপতি হিসেবে চান মান্নান। দায়িত্ব মিলতেই একরকম মান্নানকে ব্রাত্য রেখেই কাজ শুরু করেন অধীর। দলীয় সূত্রে খবর, অধীরের এই ‘পরিচালনা’ মানতে পারেননি প্রবীণ নেতা। ক্ষোভ জমছিলই। নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না বলেও ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছিলেন আব্দুল মান্নান। ভোটে ভরাডুবির পর ফের প্রকাশ্যে অধীর-আব্দুলের ‘ঠাণ্ডা যুদ্ধ’। এর ফলাফল পুরনির্বাচনেও পড়তে পারে বলেই আশঙ্কা জোটের একাংশের নেতৃত্বের। যদিও, পুরনির্বাচন এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যায়নি সংযুক্ত মোর্চার তরফে।

আরও পড়ুন: ‘লেট দিস স্টার্ট ফ্রম হিজ় ফাদার’, অধিকারী পুত্রকে কীসের ইঙ্গিত দিলেন ‘চাণক্য’?