বেঁচে থাকার কঠিন লড়াই! ‘কোভিড রোগীরই সেবা করব, দয়া করে কাজটা কেড়ে নেবেন না’

হাসপাতালে (Chandannagar Hospital) কর্মরত আয়াদের দাবি, তাঁরা কেউ ২০ বছর, কেউ বা ৩০ বছর হল এই হাসপাতালে রোগীর সেবা করে আসছেন।

বেঁচে থাকার কঠিন লড়াই! 'কোভিড রোগীরই সেবা করব, দয়া করে কাজটা কেড়ে নেবেন না'
নিজস্ব চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Apr 29, 2021 | 6:53 PM

হুগলি: অতিমারি (COVID-19) কাউকে হাতে মারছে। কাউকে ভাতে মারার কল করেছে। সংক্রমিত হয়ে কেউ প্রাণ হারাচ্ছেন। কেউ বা আবার কাজ হারিয়ে হতাশায় তিলে তিলে ক্ষয় হচ্ছেন। সম্প্রতি হতাশার সে চিত্রই প্রকট হল চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে। এখন এ হাসপাতাল কোভিড রোগীদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। ফলে এখানে কর্মরত আয়ারা কাজ হারানোর আশঙ্কায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন।

পদে পদে বিপদের হাতছানি আছে। তবু সব বুঝেও করোনা আক্রান্তদের সেবা করতে চান চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালের আয়া দিদিরা। বলছেন, “কাজ না করলে খাব কী? এই দুর্দিনে যদি ঘরের ছেলেপুলের মুখে দু’টো দানা না তুলে দিতে পারি কষ্টেই যে শেষ হয়ে যাব।” চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে আয়ার কাজ করেন প্রায় আশি জন। রোগীর সেবা করে তাঁদের সংসার চলে। এদিকে চন্দননগর হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল করে দেওয়ায় এখন তাঁরা কাজ হারা। কারণ, কোভিড ওয়ার্ডে সকলে তো ঢুকতে পারবেন না।

আরও পড়ুন: হঠাৎ কী এমন ঘটল! ভোটের সকালে হন্তদন্ত হয়ে অনুব্রতের বাড়িতে ডাক্তার-নার্স

প্রতিবাদে হাসপাতাল সুপারের ঘরের সামনে ধরনায় বসেন তাঁরা। এই হাসপাতালে কর্মরত আয়াদের দাবি, তাঁরা কেউ ২০ বছর, কেউ বা ৩০ বছর হল এই হাসপাতালে রোগীর সেবা করে আসছেন। কিন্ত হঠাৎ চন্দননগর হাসপাতাল কোভিড হাসপাতাল হওয়াতে তাঁদের কোনও কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু তাঁরা শর্তসাপেক্ষেও কাজ করতে রাজি। অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা শুনতে চাইছেন না।

তাঁদের দাবি, গত বছর কোভিডের সময় চন্দননগর হাসপাতালে সারি ওয়ার্ডে কাজ করেছেন তাঁরা। কিন্তু এ বছর মানুষের এই বিপদে এগিয়ে এলেও প্রশাসন তাঁদের দিয়ে কাজ করাতে রাজি নয়। হাসপাতাল সুপার ও সিএমওএইচকে বার বার জানিয়েছেন, তাতেও কোন ফল হয়নি বলেই অভিযোগ। তাই বাধ্য হয়ে অবস্থানে বসেছেন।

হাসপাতালে ১৮০টি কোভিড বেড রয়েছে। এর মধ্যে ১০০টি এখন ভর্তি। চন্দননগর হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় কুমার রায় বলেন, “এই ভাবে আয়াদের কোভিড রোগীর শুশ্রূষায় কাজ করানো যায় না। এটা প্রটোকলে আটকায়। সরকারি কোনও নির্দেশ নেই। কোভিড রোগীদের সেবা করতে গেলে অনেক কোভিড প্রটোকল মানতে হয়। নার্সরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাঁরা জানেন, কী ভাবে সেবা করতে হয়। আয়াদের সেই প্রশিক্ষণ না থাকায় তাদের দিয়ে কাজ করানোটা কঠিন।”

কিন্তু আয়ারা তা মানতে নারাজ। তাঁদের যুক্তিও অত্যন্ত বাস্তবসম্মত। এই কঠিন দিনে কাজ হারালে পেট চলবে কী করে। আর পেট না ভরলে লড়াইয়ের শক্তি আসবে কোথা থেকে। পরিস্থিতি কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। অসহায়তার ছবি রাজ্যজুড়ে।