দেড় বছর ধরে কারখানা বন্ধ বাবার, সেও এক লড়াই, তবু অদম্য জেদেই ISCতে তৃতীয় ডানকুনির মেহেলি

ISC: ভাদুয়ার বাসিন্দা অজিত ঘোষ ও দীপা ঘোষ। ডানকুনির ব্যাটারির কারখানায় কাজ করতেন অজিতবাবু।

দেড় বছর ধরে কারখানা বন্ধ বাবার, সেও এক লড়াই, তবু অদম্য জেদেই ISCতে তৃতীয় ডানকুনির মেহেলি
মেহেলি ঘোষ আইএসসিতে তৃতীয়। নিজস্ব চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 25, 2022 | 7:15 AM

হুগলি: এক-দেড় বছর বাবার কারখানা বন্ধ। তবু মেয়ের লেখাপড়ায় কোনও খামতি রাখেননি। মেয়েও বাবাকে কথা দিয়েছিল, ভাল ফল করবে আইএসসিতে। তা বলে দেশের মধ্যে তৃতীয় স্থানে থাকবে, এতটাও আশা করেনি ডানকুনির ভাদুয়ার মেহেলি ঘোষ। রবিবার ফল প্রকাশ হতেই উচ্ছ্বসিত ঘোষ পরিবার। আইএসসি বারো ক্লাসের ফল প্রকাশ হয়েছে এদিন। শ্রীরামপুর হলিহোম স্কুলের ছাত্রী মেহেলি ঘোষ পেয়েছে ৯৯.২৫ শতাংশ নম্বর। আরও ৭৭ জনের সঙ্গে এই স্থান ভাগ করে নিয়েছে সে।

ভাদুয়ার বাসিন্দা অজিত ঘোষ ও দীপা ঘোষ। ডানকুনির ব্যাটারির কারখানায় কাজ করতেন অজিতবাবু। তাঁদের একমাত্র মেয়ে মেহেলি। বছর দেড়েক হল ব্যাটারি কারখানায় আগুন লাগার পর তা বন্ধ। এখন সে অর্থে কোনও আয় নেই তাঁর। সামান্য কিছু চাষের জমি আছে। তাতে কোনওভাবে চলে। তবে মেয়ে যেহেতু ছোট থেকেই মেধাবী। এই অভাবের কোনও ছায়া তিনি মেয়ের উপর পড়তে দেননি। শুধু সাহস আর অনুপ্রেরণা দিয়ে গিয়েছে।

মেহেলি জানাল, বাবা, মায়ের অনুপ্রেরণা আর স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের সবসময় পাশে থাকাই এতটা এগিয়ে দিয়েছে তাকে। মেহেলি বলে, “এটা একদম অন্যরকম অভিজ্ঞতা। এতটা ভাল ফল হবে ভাবতে পারিনি। আমার বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি বিষয় ছিল। আমার সবথেকে প্রিয় বায়োলজি। আমি বাংলারই কোনও মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পড়তে চাই। এরপর উচ্চশিক্ষা নিয়ে সার্জারির দিকে যাওয়ার ইচ্ছা। আমি গ্রামের দিকে প্র্যাকটিস করতে চাই।”

মেহেলির বাবা অজিতকুমার ঘোষ বলেন, “মেয়ের রেজাল্টে আমরা খুব খুশি। কিন্তু গত বছর থেকে আমার কারখানাটা বন্ধ হয়ে গেছে। আর্থিকভাবে এখন খুবই চাপে। আমার বাবা খুব সহযোগিতা করেছে। আমার মেয়ের বড় মাসি খুব সাহায্য করেছে। এখন আমি একরকম বেকার বলতে পারেন। চাকরির জন্য যেখানেই গেছি, বলেছে বয়স হয়ে গেছে। সরকার যে স্টুডেন্ট লোন দেয়, তার চেষ্টা করেছি। মেয়ে ডাক্তারিতে যাবে জানতাম। আর্থিক প্রতিবন্ধকতা তো আছেই। তবে ওটা কাটিয়েই ওকে যেতে হবে।” মেহেলি জানায়, তার পড়াশোনার জন্য সবসময় মা-বাবা নিজেদের সমস্ত সাধ আহ্লাদ ত্যাগ করেছে। বাবার কারখানা বন্ধ। কিন্তু তার পড়াশোনায় কোনও ছাপ পড়তে দেননি। মেহেলিও চায় বাবার এই কষ্ট কাটিয়ে সুদিন ফেরাতে।