বিক্রি হয়ে গিয়েছিল বাড়ির ‘ছেলে’, বর্ধমান থেকে উদ্ধার করল বালির পুলিশ

বাবার সঙ্গে বেলুড়ের রাজ কৃষ্ণ কুমার স্ট্রিটের বাড়িতে ফেরার পরই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল ১ বছর ৪ মাস বয়সের ছেলে রিও।

বিক্রি হয়ে গিয়েছিল বাড়ির ‘ছেলে’, বর্ধমান থেকে উদ্ধার করল বালির পুলিশ
উদ্ধার হওয়ার পর রিও
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 21, 2022 | 12:15 AM

হাওড়া: গত ৭ আগস্ট দুপুরবেলা বাবার সঙ্গে বেলুড়ের রাজকৃষ্ণ কুমার স্ট্রিটের বাড়িতে ফেরার পরই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল ১ বছর ৪ মাস বয়সের রিও। বাড়ির বারান্দায় বসে খেলছিল সে। তার পরই হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায়। সেদিন আশপাশের বাড়ি ও গোটা পাড়ায় তন্ন তন্ন করে খুঁজে না পেয়ে পরেরদিন অর্থাৎ ৮ আগস্ট বালি থানায় গিয়ে নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন রিও-র বাবা তপন কুমার সরকার। এর পরই রিও-কে খুঁজে বার করতে তদন্তে নামে পুলিশ।

তদন্তে নেমে সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যে পুলিশ জানতে পারে রিও-কে তুলে নিয়ে গিয়েছিল তিন যুবক। তার পর বর্ধমানের মহম্মদ মুসতফা নামে এক যুবকের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। অবশেষে অভিযুক্তদের ২ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে বর্ধমান থেকে পুলিশ রিও-কে উদ্ধার করে। প্রায় ২ সপ্তাহ পর শনিবার থানায় রিও-র বাবা, মা-কে ডেকে তাঁদের হাতে ‘ছেলে’কে তুলে দেয় পুলিশ। রিও-কে না পেয়ে কার্যত নাওয়া-খাওয়া ভুলে গিয়েছিলেন রিও-র বাবা, মা ও দিদি। এদিন বাড়ির ছোট ‘ছেলে’কে পেয়ে খুশি তাঁরা।

তবে রিও কোনও মানুষ নয়। ধূসর রঙের একটি আফ্রিকান টিয়া পাখি। তপনবাবুর বাড়ির পোষ্য। পাখিটি উড়তে পারে না। বালি থানায় দাঁড়িয়ে তপনবাবুর স্ত্রী স্বপ্না সরকার বলেন, ‘‘আমাদের একটি মেয়ে আছে। রিও পাখি হলেও ও আমার ছোট ছেলে। আমার মেয়ে ওকে ভাইফোঁটা দেয়।’’ তাঁর কথায়, উড়তে পারে না বলে গত ৭ আগস্ট অন্যান্যদিনের মতোই দুপুরে ওর বাবা তপনবাবুর হাতে চেপে পাড়া বেড়াতে গিয়েছিল। বাড়িতে এসে যখন ওর বাবা মায়ের কাছে যা বলে হাত থেকে বারান্দায় নামিয়ে দেয় তার পর থেকেই নিখোঁজ হয় রিও। স্বপ্না দেবী আরও বলেন, ‘‘সেদিন খুঁজে না পেয়ে কিউট রিও, কিউট রিও বলে অনেক ডেকেছি। দেখা পায়নি। কয়েকদিন নাওয়া খাওয়া ভুলে শুধু কেঁদেছি। ওর দিদিও পড়াশোনা বন্ধ করে শুধু কেঁদেছে। পুলিশের সাহায্যে ওকে ফিরে পেয়ে আমরা খুশি।’’ মাস চারেক আগে রিও-র ঘটা করে জন্মদিনও পালন করেছিল পরিবারটি। রিও-র বাবা তপনবাবু এদিন বলেন,‘‘আমাদের বাড়ির বারান্দা থেকে কেউ একটা ওকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তার পর চার হাত ঘুরে আমার ছেলে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। পুলিশের সাহায্যে ফিরে পেলাম।’’

কিন্তু কীভাবে পাওয়া গেল রিওকে? পুলিশ সূত্রে খবর, পাখির খোঁজে ফেসবুকেও  আবেদন জানান মালিক। এরপর বেলুড়মঠের কাছে কেউ পাখিটি উদ্ধার করেছে বলে আর একটি ফেসবুক পোস্ট করে। কিন্তু পাখির  হদিশ মেলেনি। পুলিশ তদন্তে নেমে দুই ব্যক্তিকে আটক করে। অবশেষে শনিবার বালি থানার পুলিশ বর্ধমান থেকে পাখির খোঁজ পায়। সেটিকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকেই পাখিটিকে ফেরত  আনা হয় বালি থানায়।