গাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত প্রৌঢ়, হাঁটুজল রাস্তায় বিকল অ্যাম্বুল্যান্স ঠেলতে ঠেলতে হাসপাতালে পৌঁছলেন চালক!

Ambulance: ড্রেনেজ ক্যানেল রোডে এসে তাঁরা দেখেন প্রায় হাঁটুর ওপর জল। গাড়ি যাওয়ার মতো অবস্থাই নেই। এই অবস্থায় রোগীকে বাঁচানোর তাগিদে জলমগ্ন রাস্তাতেই অ্যাম্বুল্যান্স ছোটান চালক রঞ্জিৎ।

গাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত প্রৌঢ়, হাঁটুজল রাস্তায় বিকল অ্যাম্বুল্যান্স ঠেলতে ঠেলতে হাসপাতালে পৌঁছলেন চালক!
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 30, 2021 | 6:33 PM

হাওড়া: শিয়রে নিম্নচাপ। প্রবল বৃষ্টিতে জলমগ্ন সারা হাওড়া শহর। এদিকে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার সময় জলভাসি রাস্তায় আটকে গেল অ্যাম্বুল্যান্স! কী হবে এবার? কৌতূহলী রোগীর পরিজনরা প্রায় কেঁদে ফেলার জোগাড়। তখনই রাস্তায় নামলেন অ্যাম্বুল্যান্স চালক রঞ্জিৎ। হাঁটুজলে নেমে অ্যাম্বুল্যান্স ঠেলতে ঠেলতে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন তিনি। সময় মতো চিকিৎসা পেয়ে রক্ষা পেলেন রোগীর জীবন!

শুক্রবার সকালে হাওড়ার ড্রেনেজ ক্যানাল রোডে ইঞ্জিনে জল ঢুকে বন্ধ হয়ে যায় অ্যাম্বুল্যান্স। তবে হাল ছাড়েননি অ্যাম্বুল্যান্স চালক রঞ্জিৎ চট্টোপাধ্যায়। প্রায় হাঁটু সমান জলে নেমে অ্যাম্বুল্যান্স ঠেলে নার্সিংহোমে নিয়ে যান তিনি। তাঁরই অদম্য তৎপরতায় অবশেষে বেসরকারি নার্সিংহোমে পৌঁছে চিকিৎসা করাতে পারলেন রোগী। চালককে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ আত্মীয়দের।

এদিন সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হন কোনা অঞ্চলের বাসিন্দা অশোক ঘোরুই। এনিয়ে দ্বিতীয়বার। তাই পরিবারের লোকজন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। স্থানীয় চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। বাড়ির লোকেরা বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর কোনার একটি ক্লাবের অ্যাম্বুল্যান্স খুঁজে পান। সকাল ন’টা নাগাদ চালক রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় রোগী ও তাঁর স্ত্রী এবং মেয়েকে নিয়ে হাওড়ার ড্রেনেজ ক্যানেল রোড সংলগ্ন একটি বেসরকারি নার্সিংহোমের উদ্দেশে রওনা দেন।

কিন্তু যে রাস্তা দিয়ে গেলে তাড়াতাড়ি হত সেই রাস্তায় জল জমে থাকায় অনেকটা ঘুরপথে যেতে হয় তাঁদের। ছয় নম্বর জাতীয় সড়ক হয়ে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ধরেন চালক। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। ড্রেনেজ ক্যানেল রোডে এসে তাঁরা দেখেন প্রায় হাঁটুর ওপর জল। গাড়ি যাওয়ার মতো অবস্থাই নেই। এই অবস্থায় রোগীকে বাঁচানোর তাগিদে জলমগ্ন রাস্তাতেই অ্যাম্বুল্যান্স ছোটান চালক রঞ্জিৎ। কিছুটা গিয়েই হল বিপত্তি। বন্ধ হয়ে যায় গাড়ির স্টার্ট। এই অবস্থায় সহযোগীকে স্টিয়ারিংয়ে বসিয়ে নিজে জলে নেমে গাড়ি ঠেলতে থাকেন রঞ্জিৎ। অবস্থা দেখে এগিয়ে এসেছিলেন একজন সাইকেল আরোহী। কিছুটা এগিয়ে দিয়ে তিনি ফিরে যান।

এদিকে অ্যাম্বুল্যান্স ঠেলতে ঠেলতে হাঁপিয়ে গেলেও থেমে যাননি রঞ্জিৎ। এভাবে অ্যাম্বুল্যান্স ঠেলতে ঠেলতেই পৌঁছন নার্সিংহোমে। সেখানে গিয়ে হাসপাতালের সিঁড়িতে বসে পড়েন হাঁফ ধরে যাওয়া মানুষটি। অন্যদিকে চিকিৎসক জানিয়েছেন, আর একটু দেরি হলেই বিপত্তি ঘটতে পারত রোগীর।

রঞ্জিতবাবু জানান, রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছনই তো তাঁর কাজ। সেটাই করেছেন। তবে প্রশাসনের উচিত নিকাশি ব্যবস্থার এবার একটু উন্নতি করা। এভাবে আর কতদিন! বললেন হাঁফিয়ে পড়া অ্যাম্বুল্যান্স চালক। আরও পড়ুন: ‘গাড়ি থেকে টান দিয়ে ফেলে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ওরা’, বাড়ি ফিরতে গিয়ে মর্মান্তিক পরিণতি নার্সের!