আসছে জোড়া কোটাল! ভাঙা গোসাবা বাঁধের ম্যারাথন মেরামতিতে সেচ দফতর

গোসাবা ব্লক আধিকারিক সৌরভ মিত্র বলেন, "আমরা জানি, ভরা কোটাল আসছে। তাই তার আগেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। যাতে কোনওভাবেই জল না ঢুকতে পারে। আমি নিজে আম পরিদর্শনে এসেছি। আমাদের অভিজ্ঞ বাঁধ বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন।"

আসছে জোড়া কোটাল! ভাঙা গোসাবা বাঁধের ম্যারাথন মেরামতিতে সেচ দফতর
চলছে বাঁধ মেরামতির কাজ, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jun 09, 2021 | 2:13 PM

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: সদ্যই গিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। তার দাপটে বিধ্বস্ত বঙ্গ উপকূল। ইয়াসের দাপটে সুন্দরবনের সুন্দরবনের গোসাবা-সহ (Gosaba) উপকূলবর্তী বাসন্তী, কুলতলি, রায়দিঘি, পাথর প্রতিমা, নামখানায় নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। সেই ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই শিয়রে বিপদ এনেছে জোড়া কোটাল। আগামী ১১জুন ও ২৬জুন পরপর দুটি ভরা কোটালের সম্ভাবনা আছে বলেই আগাম আভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। পাশাপাশি, আগামী ১০ ও ১১ জুন বঙ্গোপসাগরে তৈরি হতে পারে নিম্নচাপ। ১১জুনের ভরা কোটালের জেরে সেই নিম্নচাপ গভীর নিম্নচাপে (Depression) পরিণত হতে পারে বলেই আশঙ্কা মৌসম ভবনের (IMD)। এই পরিস্থিতিতে, ম্যানগ্রোভবাসীদের কথা চিন্তা করেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নদীবাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করল জেলা প্রশাসন। বুধবার, বাঁধ মেরামতির শুরু হতেই খোদ পর্যবেক্ষণে এলেন গোসাবার ব্লক আধিকারিক সৌরভ মিত্র।

এ যেন মরার উপরে খাঁড়ার ঘা। গত ২৬ জুন ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের (Cyclone Yaas) দাপটে সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ-সহ একাধিক এলাকা পুরোপুরি ভেসে যায়। সে বার, ইয়াসের দোসর ছিল পূর্ণিমার ভরা কোটাল। সেই ঘা এখনও শুকোয়নি। সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও বানভাসি। ত্রাণশিবির, স্কুলবাড়ি কিংবা বাঁধের উপরে প্লাস্টিকের তাঁবু খাটিয়েই দিন গুজরান এলাকাবাসীর। এরমধ্য়ে অমাবস্যার ভরা কোটালের ভ্রুকুটি ভয় ধরিয়েছে সাধারণের।

শুধুমাত্র সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকেই (Gosaba) মোট ৯ টি দ্বীপের মধ্যেই রয়েছে ১৪ টি গ্রাম পঞ্চায়েত। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যেতে এখানে নদীপথই একমাত্র ভরসা। এই গোসাবাতেই রয়েছে ৩৮৪ কিলোমিটার দীর্ঘ নদী বাঁধ। আয়লার পরে, খানে কুমিরমারি, রাঙাবেলিয়া, লাহিড়িপুর,ছোট মোল্লাখালি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মোট ১৮ কিলোমিটার কংক্রিটের নদীবাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু, কোনও বড় ঝড়ঝাপটা এলেই সেই বাঁধ ভেঙে ফের বানভাসি হয় গ্রামের পর গ্রাম। এলাকাবাসীর অভিযোগ, একশো দিনের কাজের মাধ্যমেই চলে বাঁধ মেরামতি। কিন্তু, সেই বাঁধ টেকে না।

অনুপ পানিগ্রাহী নামে স্থানীয় এক গ্রামবাসী বলেন, “প্রতিবারই দেখি বাঁধ তৈরি হয়। আর প্রতিবার সব ভেসে যায়। নদীর জল আটকাতে পারে না। এ বারে আমরা বিডিওকে জানিয়েছি। ইয়াসের পর থেকে এমনিতেই সকলে প্রায় ঘরছাড়া। এখনও অনেক জায়গা জলের তলায়। আবার ভরা কোটালের জেরে এ বার তো আর প্রাণে বাঁচতে পারব না।”

এই পরিস্থিতিতে কার্যত যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজে নেমেছে জেলা প্রশাসন। সেচ দফতর সূত্রে খবর, আসন্ন দুই কোটালের আগেই সমস্ত ভাঙা বাঁধ মেরামত করা হবে। বিশেষ নজর দেওয়া হবে উপকূলবর্তী এলাকায়। সেইজন্য সেচ দফতরের গোসাবা ডিভিশনের এসডিও মিহির দাসের সাথে বাসন্তী ডিভিশনের অভিজ্ঞ এসডিও মনোজিত চক্রবর্তীকে বাড়তি দায়িত্ব দিয়ে বাঁধ মেরামতির দায়িত্বে নিয়োগ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে চারজন জুনিয়ার ইঞ্জিনিয়র ও দু’জন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র একযোগে কাজ করছেন। গোসাবার দুলকি ও কুমিরমারি এলাকায়, নদী বাঁধ ভেঙে খালের চেহারা নেওয়ায় গঙ্গার ড্রেজিং করার ৭ টি বৃহৎ লং বুম মেশিন ও ২৫ টি আর্থ এসকাভেটর মেশিন আনা হয়েছে। যাতে নদীগর্ভ থেকে মাটি তুলে বাঁধের মেরামতিতে ব্যবহার করা যায়। গোসাবা ব্লক আধিকারিক সৌরভ মিত্র বলেন, “আমরা জানি, ভরা কোটাল আসছে। তাই তার আগেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। যাতে কোনওভাবেই জল না ঢুকতে পারে। আমি নিজে আম পরিদর্শনে এসেছি। আমাদের অভিজ্ঞ বাঁধ বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। আশা করি আমরা এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারব।”

উল্লেখ্য, ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতির জেরে রাজ্যের সেচ দফতরের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন একের পর এক এ ভাবে বাঁধ ভেঙেছে তার খতিয়ানও চান মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata Banerjee)। শুধু তাই নয়, দ্রুত বাঁধ মেরামতির পাশাপাশি কেন বাঁধ ভেঙেছে তার জন্য তদন্ত কমিটির নির্দেশও দিয়েছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর উষ্মা প্রকাশের পরেই জলসম্পদ ভবনে নিজের আধিকারিকদের সঙ্গে দ্রুত বৈঠক করেন সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র (Soumen Mahapatra)। তারপর থেকেই, দ্রুত মেরামতির কাজ শুরু করে সেচ দফতর। বর্ষার আগেই যাতে মেরামতির কাজ শেষ হয় সেদিকেও বিশেষ নজর রয়েছে সেচ দফতরের।

আরও পড়ুন: ‘মুখ্যমন্ত্রীর কথামতোই মানুষ ক্ষতিপূরণ পাবেন’, মায়াচরে ত্রাণ নিয়ে হাজির সেচমন্ত্রী, ঘুরে দেখলেন ইয়াস বিধ্বস্ত এলাকা