Madhyamik Exam: এবারেও কি প্রচুর ড্রপ আউট? কমতে চলেছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা?
Madhyamik Exam: কেবল পাড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ গুহ জানালেন, তাঁর স্কুলে মূলত চা বাগানের শ্রমিক পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়ে। এদের বেশিরভাগ পরিবারের প্রথম শিক্ষিত প্রজন্ম। এবারে দশম শ্রেনিতে ভর্তি হয়েছিল ১৩১ জন। কিন্তু টেস্ট পরীক্ষায় অনুপস্থিত ২৩ জন। এর মূল কারণ, হিসাবে আর্থসামাজিক পরিস্থিতিকে দায়ী করছেন তিনি।
জলপাইগুড়ি: জলপাইগুড়ি জেলার স্কুলগুলিতেই ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হবে তারাই ফর্ম ফিলাপ করে আগামী বছরের মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে। কিন্তু, উল্লেখযোগ্য ভাবে দেখা যাচ্ছে জলপাইগুড়ি জেলার প্রচুর স্কুলে যে সংখ্যক পড়ুয়ার দশম শ্রেনিতে নাম আছে তার চেয়ে কম সংখ্যক ছাত্রছাত্রী টেস্ট পরীক্ষায় বসেছে। এর পেছনে আর্থসামাজিক কারণকেই দায়ী করছে শিক্ষানুরাগী মহল।
বিশেষত ডুয়ার্সের চা বলয়ের বেশ কিছু স্কুলে এই ড্রপ আউট এর সংখ্যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। শুধু ডুয়ার্সেই নয় জলপাইগুড়ি পৌর এলাকায় থাকা স্কুলেও একই ছবি। নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া এই জাতীয় তথ্য সামনে আসতেই সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছে সমস্ত স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষক সহ ডান-বাম সমস্ত শিক্ষক সংগঠনের নেতৃত্বরা। পরিস্থিতি রীতিমতো উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন ABTA এর জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক। বোর্ডের কাছে রাজ্যের সমস্ত শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক ডাকার দাবিও জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, জলপাইগুড়ি জেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মিলিয়ে মোট স্কুলের সংখ্যা ১৬০টি। ২০২৩ সালে জলপাইগুড়ি জেলায় মাধ্যমিক পরীক্ষায় ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের সংখ্য়া ছিল বেশি। ২০২৩ সালে মোট মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিল ২৪,৬০০ জন। এরমধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ১০,২০০ জন। ছাত্রীর সংখ্যা ১৪,৪০০ জন।
কী পরিস্থিতি এবার? নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে ..
১) জলপাইগুড়ি পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে জলপাইগুড়ি হাইস্কুল। এই স্কুলে ২৩ জন দশম শ্রেনিতে পড়ে। কিন্তু টেস্ট পরীক্ষায় বসেছে ১৮ জন। অর্থাৎ ২০ শতাংশের বেশি ড্রপ আউট।
২) রাজগঞ্জে রয়েছে MN হাইস্কুল। ২২১ জনের মধ্যে উপস্থিত ২০৫ জন। ড্রপ আউট ১৬ জন।
৩) কেবল পাড়া হাইস্কুল। ১৩১ জনের মধ্যে ২৩ জন ড্রপ আউট।
৪) বেলাকোবা হাইস্কুল। ২১৪ জনের মধ্যে ১২ জন ড্রপ আউট।
৫) বানারহাট বলকা পরিমল হিন্দি হাইস্কুল।এই স্কুলের ৪৬০ জনের মধ্যে ৯৬ জন ড্রপ আউট।
৬) চামূর্চী ভারতীয় পাঠশালা। ৩০২ জনের মধ্যে ৬৩ জন ড্রপ আউট।
৭) ক্রান্তি ব্লকের রাজাডাঙা P M স্কুল। ৪২৩ জনের মধ্যে ১১২ জন ড্রপ আউট।
৮) লাটাগুড়ি গার্লস স্কুল। ১৫৫ জনের মধ্যে ১৮ জন ড্রপ আউট।
৯) ওদলাবাড়ি হাইস্কুল। ৬৬ জনের মধ্যে ৮ জন অনুপস্থিত।
১০) বানারহাট আদর্শ বিদ্যালয় হিন্দি হাইস্কুল। ২৫০ জনের মধ্যে ৩৫ জন অনুপস্থিত।
আমরা কথা বলেছিলাম জলপাইগুড়ি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ গুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তার স্কুলে ২০ শতাংশের বেশি পড়ুয়া মাধ্যমিকের টেস্টে বসেনি। সবাই স্কুলছুট। তিনি আরও বলেন, তাঁর ভাবতেই লজ্জা হচ্ছে যে তাঁর স্কুলে এত ভাল পরিকাঠামো থাকার পরেও মাত্র ২৩ জন ছাত্র দশম শ্রেনিতে পড়ছে। যারমধ্যে মাত্র ১৮ জন ছাত্র মাধ্যমিক টেস্ট পরীক্ষায় বসেছে। তাঁর কথায়, অন্যান্যবারের তুলনায় গতবার ৪ লক্ষ কম পরিক্ষার্থী মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। এবারেও এর কোনও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে না। পরিস্থিতি ভয়াবহ। এখনই হাল না ধরলে সরকারি শিক্ষা ব্যাবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে।
কেবল পাড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ গুহ জানালেন, তাঁর স্কুলে মূলত চা বাগানের শ্রমিক পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়ে। এদের বেশিরভাগ পরিবারের প্রথম শিক্ষিত প্রজন্ম। এবারে দশম শ্রেনিতে ভর্তি হয়েছিল ১৩১ জন। কিন্তু টেস্ট পরীক্ষায় অনুপস্থিত ২৩ জন। এর মূল কারণ, হিসাবে আর্থসামাজিক পরিস্থিতিকে দায়ী করছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, গ্রামেগঞ্জে প্রচুর শিক্ষিত বেকার। শত চেষ্টা করেও চাকরি পাচ্ছে না। তাই পড়াশোনা করে কী হবে! তার চেয়ে অল্প বয় থেকে কাজ করা ভাল, এমন একটা ধারনা একাংশ পড়ুয়ার মনে গেঁথে বসেছে। যা পড়াশুনার অগ্রগতির ক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষতির কারণ।
বেলাকোবা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কৌশিক ঘোষ বলেন, তাঁর স্কুলে ২১৪ জনের মধ্যে ১২ জন মাধ্যমিক টেস্ট পরীক্ষায় অনুপস্থিত। এদের মধ্যে কয়েকজন অসুস্থ থাকলেও বাকিরা পরিবারের হাল ধরতে কাজে চলে গিয়েছে। বিষয়টি খুব উদ্বেগের বলে মনে করেছেন তিনিও।
বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন ABTA জেলা সম্পাদক প্রসেনজিৎ রায় বলেন, আজ থেকে কয়েক বছর আগেও আমরা ভাবতেই পারতাম না টেস্ট পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকবে পড়ুয়ারা। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে এই সমস্যা শুরু হয়েছিল, যা আজও বহাল রয়েছে। এবারেও মাধ্যমিকে জলপাইগুড়ি জেলায় ২০ থেকে ২৩ শতাংশ ড্রপ আউট হতে চলেছে। সরকার ড্রপ আউট হয়ে যাওয়া পড়ুয়াদের ফিরিয়ে আনতে তেমন উদ্যোগ নিচ্ছে না। ড্রপ আউট এর হার ছেলেদের মধ্যে বেশি। এর মূল কারণ অবশ্যই আর্থ-সামাজিক। চা বাগান ঘেরা অঞ্চলে ড্রপ আউট সমস্যা তো রয়েছে। এছাড়া শহরাঞ্চলের স্কুলগুলিতেও কমবেশি এই সমস্যা দেখা গিয়েছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ। আমরাও গ্রাউন্ড সার্ভে করে রিপোর্ট তুলে এনেছি। সেগুলি আমরা শেয়ার করতে চাই। তাই অবিলম্বে বোর্ড সমস্ত শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনায় বসুক। নিশ্চয়ই কিছু একটা সমাধান পথ বের হয়ে আসবে।
পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠনের জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সদস্য তথা জলপাইগুড়ি হাইস্কুলের সহকারি শিক্ষক বাবলু রায় এই সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলছেন, শিক্ষার হাল ফেরাতে বেসরকারি স্কুল গুলির সঙ্গে পাল্লা দিতে শিক্ষা সংক্রান্ত পরিকাঠামোর প্রচুর উন্নতি করা হয়েছে। নিয়ে আসা হয়েছে ডিজিটাল পদ্ধতি। কিন্তু তার পরেও জেলাজুড়ে মাধ্যমিক টেস্ট পরীক্ষায় এই পরিস্থিতি কখনওই কাম্য নয়। আমাদের স্কুলে প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া বেশি। তাই আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির কারণে এই সমস্ত পরিবারগুলি থেকে ড্রপ আউট বেশি হচ্ছে। সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা রাখছেন তিনি।
উপরিউক্ত পরিস্থিতি নিয়ে আমরা কথা বলতে গিয়েছিলাম জলপাইগুড়ির ডিআই বালিকা গোলের সঙ্গে। তিনি জানান, এখন টেস্ট পরীক্ষা চলছে। তবে এই জাতীয় কোনও তথ্য এখোনও তার হাতে আসেনি।