বাড়ি বসে মাইনে নিতে ‘লজ্জা’, করোনা আবহে অ্যাম্বুল্যান্স দান শিক্ষিকার

"প্রায় পুরো মাস আমি বসে বসেই মাইনে পাচ্ছি। কিন্তু এটা তো হওয়ার কথা ছিল না। মাসে অন্তত ২৬ দিন আমাদের স্কুলে যাওয়ার কথা। এভাবে মাইনে নিতে আমার লজ্জা লাগছিল।''

বাড়ি বসে মাইনে নিতে 'লজ্জা', করোনা আবহে অ্যাম্বুল্যান্স দান শিক্ষিকার
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jun 08, 2021 | 6:35 PM

জলপাইগুড়ি: করোনা (Corona) আবহে প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ স্কুল। তাই কার্যত বাড়িতে বসেই মাইনে পাচ্ছিলেন শিক্ষিকা কেয়া সেন। বিষয়টি মোটেই তাঁর ভাল লাগছিল না। করোনার দাপটে যখন ত্রস্ত সারা দেশ তথা তাঁর নিজের জেলা তখন শিক্ষিকা কোনওভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। অবশেষে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে করোনা রোগীর ব্যবহারের জন্য অ্যাম্বুল্যান্স দান করলেন এক স্কুল শিক্ষিকা।

জলপাইগুড়ি ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কেয়া দেবী রাজগঞ্জ ব্লকের মান্তাদারি বিএফপি স্কুলের শিক্ষিকা। স্বামী প্রবীর সেন ব্যাবসায়ী। এর আগেও বিভন্ন সমাজসেবা কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। এবার করোনা আক্রান্তদের পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে অ্যাম্বুল্যান্স দান করে জলপাইগুড়িতে নজির সৃষ্টি করলেন শিক্ষিকা। কেয়া দেবী জানান, এই অ্যাম্বুল্যান্স দানের পরিকল্পনা তাঁর বড় ছেলে স্পন্দনের। তিনিই মাকে প্রস্তাব দেন অ্যাম্বুল্যান্স কিনে কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে তুলে দিতে। কারণ, জলপাইগুড়ি শহরে এই মুহূর্তে খুব প্রয়োজন অ্যাম্বুল্যান্সের।

ছেলের প্রস্তাবে এক কথায় রাজি হয়ে যান মা। কিন্তু একটা অ্যাম্বুল্যান্স কিনতে তো ৭ লক্ষের বেশি টাকা লাগবে। একসঙ্গে এত পরিমাণ টাকা একসাথে পাবেন কোথায়? স্বামী প্রবীর সেনের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন মাসিক কিস্তিতে অ্যাম্বুল্যান্স কিনে সেটি জলপাইগুড়ি জেলাপরিষদের মাধ্যমে জলপাইগুড়ি শহরের শ্রদ্ধা নামে একটি সেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে তুলে দেবেন।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। এক ফিনান্স কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে অ্যাম্বুল্যান্স কিনে ফেলেন। অবশেষে মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি জেলাপরিষদ হলে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সভাধিপতি উত্তরা বর্মনের মাধ্যমে অ্যাম্বুল্যান্সের চাবি সেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে তুলে দেন শিক্ষিকা।

কেয়া সেনের কথায়, “প্রায় পুরো মাস আমি বসে বসেই মাইনে পাচ্ছি। কিন্তু এটা তো হওয়ার কথা ছিল না। মাসে অন্তত ২৬ দিন আমাদের স্কুলে যাওয়ার কথা। এভাবে মাইনে নিতে আমার লজ্জা লাগছিল। তাই আমি একটি অ্যাম্বুল্যান্স কিনে তা জেলাপরিষদের মাধ্যমে একটি এনজিও-কে দান করলাম। আমি চাই এই মহামারি পরিস্থিতিতে সবাই এগিয়ে আসুন। নিজের সাধ্য অনুযায়ী করুন। বিন্দু বিন্দুতেই তো সিন্ধু হয়। আর এভাবে সবাই এগিয়ে এলে অবশ্যই আমরা করোনাকে হারাতে পারব।”

আরও পড়ুন: কেন বাড়ছে বজ্রপাত? ওই সময় কী করবেন আর কী করবেন না 

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক সুমন বসু রায় বলেন,“উনি আজ বিশাল মনের পরিচয় দিলেন। আমাদের হাতে অ্যাম্বুল্যান্স তুলে দিলেন। আমরা উনার এই দান সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাজে ব্যবহার করব।”