উদ্বেগ বাড়িয়ে ‘অজানা জ্বরে’ প্রথম শিশু মৃত্যু! বুকে জল, নিউমোনিয়া, এ কোন বিপদে ক্ষুদেরা

Mystery fever: ইতিমধ্যেই এই জ্বরের কারণ জানতে রক্তের নমুনা ও নাজাল সোয়্যাবের নমুনা পাঠানো হচ্ছে কলকাতায়।

উদ্বেগ বাড়িয়ে 'অজানা জ্বরে' প্রথম শিশু মৃত্যু! বুকে জল, নিউমোনিয়া, এ কোন বিপদে ক্ষুদেরা
গত কয়েকদিনে অজানা জ্বরের প্রকোপে উদ্বেগ বেড়েছে জলপাইগুড়িতে।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 14, 2021 | 12:50 PM

জলপাইগুড়ি: গত কয়েকদিনে অজানা জ্বরের প্রকোপে উদ্বেগ বেড়েছে জলপাইগুড়িতে। সেই আতঙ্ক আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিল মঙ্গলবার এক শিশুর মৃত্যু। ছ’ বছরের ওই শিশুকে সোমবার ভোরে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই সময় প্রবল জ্বর এবং অন্যান্য উপসর্গ ছিল। মঙ্গলবার সেখানে মৃত্যু হয় তার।

হাসপাতালের সুপারের রাহুল ভৌমিকের বক্তব্য, বাচ্চাটি এসেছিল ভোরের দিকে। তার বুকে জল জমে গিয়েছিল। নিউমোনিয়ার উপসর্গ ছিল সেই ছোট্ট শরীরে। হাসপাতালের বক্তব্য, পরিবার শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে অনেকটাই দেরী করে। যার ফলে ওই শিশুর জন্য যে চিকিৎসার দরকার ছিল, তা দেওয়ার মতো সময় পাওয়া যায়নি।

হাসপাতালের চিকিৎসকরা বার বারই বলছেন, শিশুর সামান্য কোনও উপসর্গ দেখা দিলে বাড়িতে না রেখে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে দেরী করা হচ্ছে বলেও হাসপাতাল সূত্রে খবর। যদিও এই শিশু মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনই স্পষ্ট নয়।

গত কয়েকদিন ধরে এই অজানা জ্বর নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে জলপাইগুড়িতে। স্বাস্থ্য ভবনও এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। শিশুদের কোভিড টেস্ট করানো হলেও রিপোর্ট নেগেটিভ। অথচ প্রবল জ্বর, খিচুনি, অচেতন হয়ে পড়ে থাকার উপসর্গ দেখা দিচ্ছে শরীরে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ, কিছুদিন ধরেই এই জ্বরের প্রবণতা দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু গত দু’ তিনদিনে সেই জ্বর তীব্র আকার নিয়েছে। এক সঙ্গে বহু শিশু আক্রান্ত হচ্ছে তাতে। হাসপাতালে ভর্তি করাতে হচ্ছে।

ইতিমধ্যেই এই জ্বরের কারণ জানতে রক্তের নমুনা ও নাজাল সোয়্যাবের নমুনা পাঠানো হচ্ছে কলকাতায়। তবে মঙ্গলবারের এই শিশু মৃত্যু ঘিরে একাধিক প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে। প্রথমেই জানা দরকার, এদিন ভোরে শিশুটিকে জলপাইগুলি সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে, তার আগে পরিবারের লোকেরা তাকে কি অন্য কোথাও নিয়ে গিয়েছিলেন? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন, কেন অন্যত্র বাচ্চাটিকে পাঠিয়ে দেওয়া হল। তা হলে কি পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে ছিল বলে রেফার করা হয়েছে? একই সঙ্গে ডাক্তারদের কেউ কেউ মনে করছেন, এই জ্বর জাপানি এনকেফেলাইটিস। কিন্তু সেখানেও প্রশ্ন থাকছে, তা হলে শুধু বাচ্চাদেরই কেন এই জ্বর হচ্ছে।

অজানা অসুখ…

* ২০১৭ সালে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ দিনাজপুরে জ্বর ও শিশুমৃত্যু হয়। সেই সময়ও অজানা জ্বর বলেই ছড়িয়েছিল। এমনও বলা হচ্ছিল লিচু থেকে সংক্রমণের জের। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অরুণ সিং বিহারের মুজফফরপুরে গিয়ে জ্বরের কারণও অনুসন্ধান করেন।

* ২০০১ সালে শিলিগুড়িতে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়। তোলপাড় হয় গোটা রাজ্য। আমেরিকা থেকে বিশেষজ্ঞদের টিম আসে। জানা যায়, মৃত্যুর কারণ নিপা ভাইরাস।

* ২০০৩ সালে মিরিকে ১১ থেকে ১৫ জনের মৃত্যু হয়। ১৪০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

* ২০০৮ সালে রায়গঞ্জে ১৪ জন শিশুর মৃত্যু হয়। তাদের বয়স ছিল চার মাস থেকে ৮ বছর পর্যন্ত।

* ২০০৮ সালেই করণদিঘিতে ১৯ জন শিশুর মৃত্যু হয়। সকলের বয়স ছিল ১ থেকে ৬ বছরের মধ্যে।

* ২০১৭ সালে জলপাইগুড়িতে ২ জনের মৃত্যু হয়।

* ২০০৪-২০০৫ সালেও উত্তরবঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে অজানা জ্বর। মৃত্যু ও অসুস্থতার ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ে। পরীক্ষার পর উত্তরবঙ্গে প্রথম ডেঙ্গুর উপস্থিতি সামনে আসে।

* ২০০৫ সালে শিলিগুড়িতে ফের অজানা জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। পরীক্ষায় মেলে জ্বরের কারণ, নিপা ভাইরাস।

আরও পড়ুন: TET উত্তীর্ণদের জন্য সুখবর! নিয়োগ নিয়ে বড় ঘোষণা পর্ষদের, জারি হল বিজ্ঞপ্তি