পদে না থেকেও পুরসভা চালাচ্ছেন বিধায়ক, মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ হলেন কাউন্সিলররা
সম্প্রতি, স্বামীর মৃত্য়ুর জন্য তৃণমূল বিধায়ককেই দায়ী করেছেন কালনা পুরসভার তৃণমূলেরই প্রাক্তন কাউন্সিলর কণিকা রাজবংশী। তাঁর অভিযোগ, বিধানসভা ভোটে কালনা পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে তৃণমূলের পিছিয়ে থাকার জন্য কণিকার স্বামী সোমনাথ রাজবংশীকে অভিযুক্ত করেন বিধায়ক।
পূর্ব বর্ধমান: বিধায়ক হয়েও পৌরসভা নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগে কালনার বিধায়ক দেব প্রসাদ বাগের বিরুদ্ধে জেলা মহকুমা শাসকের কাছে লিখিত দিলেন পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলররা। টিকা দেওয়ার নামে স্বজনপোষণ, কালনা পুরসভার কাজে অনৈতিক হস্তক্ষেপ-সহ একাধিক অভিযোগ জানানো হয়েছে।
পুর কাউন্সিলরদের অভিযোগ, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের তরফে প্রার্থী হন দেব প্রসাদ। নিয়মাফিক, কালনা পুরপ্রশাসকের পদ থেরকে ইস্তফা দিয়েছিলেন দেবপ্রসাদ। বিজেপির বিশ্বজিৎ কুণ্ডুকে হারালেও কালনা পৌরসভা এলাকায় তিনি প্রায় তিন হাজার ভোটে পিছিয়ে যান। ফলে, তাঁর বদলে নতুন কাউকে পুরপ্রশাসক পদে বহাল করা হবে কি না তা নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়। পরে, যদিও দেবপ্রসাদের বদলে অংশুমান বসুকে নতুন পুর প্রশাসক পদে বহাল করা হয়। কিন্তু,তারপরেও নিজের আসন ছাড়তে নারাজ বিধায়ক। প্রাক্তন কাউন্সিলরদের অভিযোগ, দেবপ্রসাদবাবু রোজই পুরসভায় এসে পৌরপিতার চেয়ার দখল করে বসে থাকেন। নতুন পুরপ্রশাসক থাকলেও তাঁকে কাজ করতে দেওয়া হয় না। এমনকী, টিকাকরণের কাজেও স্বজনপোষণ করেন বিধায়ক এমনটাই অভিযোগ। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে নাগরিক পরিষেবা। এছাড়াও, আশঙ্কা করা হচ্ছে, বিধায়ক হওয়ার সুবাদে তিনি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথি লোপাট করতে পারেন। এই পরিস্থিতিতে মহকুমাশাসকের কাছেই লিখিত অভিযোগ জমা দেন কাউন্সিলররা।
কালনা পুরসভার এক কাউন্সিলর বলেন, “বিধায়ক হওয়ার পরেও ওঁ রোজ পুরসভায় আসছেন। এখানেই বসে থাকেন। নিজের লোকেদের ভ্য়াকসিন দেন। বাকিরা আর ভ্যাকসিন পান না। তাঁরা আমাদের কাছে এসে অভিযোগ করেন। বিধায়ক নিজেকে ভগবান ভাবেন। আমরা কাজ করতে না পেরে বাধ্য হয়ে মহকুমাশাসককে জানিয়েছি। আমরা শীঘ্রই রাজ্য নেতৃত্বকে এ বিষয়ে জানাব।” জয় হিন্দ বাহিনীর চেয়ারম্যান অনিল বসু বলেন, “পদত্যাগ করার পরেও দেবপ্রসাদ বেআইনিভাবে পুরসভায় যাচ্ছেন ও কর্তৃত্ব করছেন। এটি সম্পূর্ণ দলবিরোধী কাজ।”
সম্প্রতি, স্বামীর মৃত্য়ুর জন্য তৃণমূল বিধায়ককেই দায়ী করেছেন কালনা পুরসভার তৃণমূলেরই প্রাক্তন কাউন্সিলর কণিকা রাজবংশী। তাঁর অভিযোগ, বিধানসভা ভোটে কালনা পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে তৃণমূলের পিছিয়ে থাকার জন্য কণিকার স্বামী সোমনাথ রাজবংশীকে অভিযুক্ত করেন বিধায়ক। এমনকী, বাড়ি গিয়ে হুমকিও দেন বলে অভিযোগ। বিধায়ক দেবপ্রসাদের এই হুমকির জেরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সোমনাথ এমনটাই অভিযোগ কণিকার। সেই মর্মে থানাতে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন কণিকা।
যদিও, সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছেন তৃণমূল বিধায়ক দেব প্রসাদ বাগ। তিনি বলেন, “আমায় অত্য়ন্ত বাজেভাবে অপমান করা হচ্ছে। খারাপ কথা বলা হচ্ছে। আমার পরিবারকেও বাদ রাখছে না। যা ইচ্ছে তাই বলছে।” তাঁর অনুযোগ, কাউন্সিলরদের সমস্ত অভিযোগই ভিত্তিহীন। বিধানসভা ভোটের আগে যে কয়েকজন প্রাক্তন কাউন্সিলর বিজেপির হয়ে ভোটে কাজ করেছেন তারাই দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এই সমস্থ মিথ্য়া ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন। যদিও, এই ঘটনায় বিজেপির তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার বিজেপি নেতা খোকন সেন