আতঙ্ক ছড়াচ্ছে কৃষ্ণ ছত্রাক, উত্তরবঙ্গে প্রথম মাঝবয়সী মহিলার দেহে মিলল উপসর্গ

হাসপাতালের ইএনটি বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, যদি ওই আক্রান্ত মহিলা মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে অপারেশন করে আক্রান্ত অংশ কেটে বাদ দেওয়া হতে পারে। কিন্তু, চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, ওই মহিলা যেভাবে সংক্রামিত তাতে তাঁর সংক্রমণ মস্তিষ্কেও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। 

আতঙ্ক ছড়াচ্ছে কৃষ্ণ ছত্রাক, উত্তরবঙ্গে প্রথম মাঝবয়সী মহিলার দেহে মিলল উপসর্গ
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: May 23, 2021 | 2:46 PM

শিলিগুড়ি: করোনার দোসররূপে বাংলাতেও এ বার ধীরে ধীরে জাল বিস্তার করছে কৃষ্ণ ছত্রাক (Black Fungus) বা মিউকরমাইকোসিস (Mucormycosis)। উত্তরবঙ্গে প্রথম মাঝবয়সী এক মহিলার দেহে মিলল এই ছত্রাকের উপসর্গ। আক্রান্ত ওই মহিলা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন।

মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, মাঝবয়সী ওই মহিলার মুখে  মিউকরমাইকোসিসের (Mucormycosis) নানা চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। তাঁর নাক, চোখ, মুখ ফুলে গিয়েছে। মুখে কালো ছোপ পড়েছে। শনিবার রাতে, ওই মহিলাকে চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল কলেজে আনা হলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ইএনটি বিভাগে ভর্তি করা হয়। তাঁর নমুনা পরীক্ষার জন্য ভিআরডিএল ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ওই মহিলা কিছুদিন আগে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। সুস্থ হওয়ার পরেই তাঁর শরীরে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। আক্রান্তের চিকিৎসার জন্য ইতিমধ্যেই মেডিক্যাল কলেজে একটি চিকিৎসকদের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই টিমটিই ওই আক্রান্ত মহিলার চিকিৎসা করছে বলে জানা গিয়েছে।

হাসপাতালের ইএনটি বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, যদি ওই আক্রান্ত মহিলা মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে অপারেশন করে আক্রান্ত অংশ কেটে বাদ দেওয়া হতে পারে। কিন্তু, চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, ওই মহিলা যেভাবে সংক্রামিত তাতে তাঁর সংক্রমণ মস্তিষ্কেও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত মহিলা শিলিগুড়ির প্রধান নগরের বাসিন্দা। উত্তরবঙ্গে তিনিই প্রথম আক্রান্ত যাঁর শরীরে মিউকরমাইকোসিসের উপসর্গ দেখা গিয়েছে। পরে, এই সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে  কি না তা নিয়ে ইতিমধ্যেই তৎপর জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

কী এই মিউকরমাইকোসিস?

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, মিউকরমাইকোসিস এক বিশেষ ধরনের বিরল প্রজাতির ছত্রাক সংক্রমণ যা মূলত দূর্বল অনাক্রম্য ব্যক্তির দেহে বাসা বাঁধে। অর্থাৎ, যে ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাঁর দেহেই বাসা বাঁধতে পারে এই মারণ ছত্রাক। মূলত কোভিডজয়ী রোগীদের দেহে প্রতিরোধক ক্ষমতা কম থাকে। যার ফলে, করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরেই তাঁদের শরীরে দেখা মিলছে এই ছত্রাক সংক্রমণের। রোগীকে দীর্ঘদিন আইসিইউ-তে রেখে চিকিৎসা করানো, লাগামহীন ডায়াবেটিস, স্টেরয়েডের ব্যবহার ও কোমরবিডিটি এই ছত্রাক সংক্রমণের কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে, এই ছত্রাক ছোঁয়াচে নয় বলেই দাবি করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। ফলে এটি সরাসরি একজনের দেহ থেকে অন্যের দেহে যেতে পারে না। এই ছত্রাক সংক্রমণ হলে, ক্ষতি হতে পারে ফুসফুস ও সাইনাসের। ত্বকের সমস্যা থেকে শুরু করে চোখের সমস্যা, সবটাই ঘটতে পারে। রোগীর শরীরের অবস্থা, ছত্রাকের জোরাল সংক্রমণ এই সবকিছুর উপরেই নির্ভর করে মৃত্যুর হার।

বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, মূলত জা়ইগোমাইকোটা (Zygomycota Fungus)  নামে একধরনের বিরল প্রজাতির ছত্রাক থেকে এর উৎপত্তি। তবে, মানুষের শরীরে, সংক্রমণের জন্য যে ছত্রাক প্রজাতি দায়ী, তার মধ্যে জা়ইগোমাইকোটা পড়ে না। সিডিসি বলছে, মূলত, মিউকর ও রাইজোপাস জাতীয় ছত্রাক প্রজাতি এই সংক্রমণের জন্য দায়ী। মৃত প্রাণীর দেহ, পচে যাওয়া উদ্ভিজ্জ থেকে মূলত এই ছত্রাক জন্ম নেয়। সাধারণভাবে এই ছত্রাক আপাত ক্ষতিকারক না হলেও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে এলে এই ছত্রাক ভয়াবহ ক্ষতি করতে পারে।

প্রসঙ্গত, উল্লেখ্য, বঙ্গে মিউকরমাইকোসিসে গত শুক্রবার  শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে মারা যান হরিদেবপুরের শম্পা চক্রবর্তী। তিনি করোনার পাশাপাশি মিউকরমাইকোসিসের শিকার ছিলেন। তাঁকে নিয়ে রাজ্যে মোট পাঁচ জন দুরারোগ্য এই সংক্রমণে আক্রান্ত বলে চিহ্নিত হয়েছিলেন। এ বার সেই সংখ্যা বেড়ে হল ছয়। ফলে করোনাকালে মিউকরমাইকোসিসের মোকাবিলাতেও তৈরি হচ্ছে স্বাস্থ্যদফতর। শনিবার, স্বাস্থ্যভবনের বৈঠকে মিউকরমাইকোসিসের চিকিৎসার পাশাপাশি প্রতিরোধেও জোর দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের পাশাপাশি বৈঠকে ছিলেন জনস্বাস্থ্য শাখার আধিকারিকরা। বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বিভূতি সাহা, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ জ্যোতির্ময় পাল, ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজি বিশেষজ্ঞ শান্তনু মুন্সি, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দলুই এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি প্রীতম রায়।

রাজস্থান ও তেলঙ্গানা সরকার ইতিমধ্যেই মিউকরমাইকোসিসকে মহামারী ঘোষণা করেছে। মহারাষ্ট্র ও গুজরাটেও ক্রমাগত থাবা চওড়া করে চলেছে এই ছত্রাক সংক্রমণ। অবস্থা দেখে সব রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক বৃহস্পতিবার নির্দেশ দেয়, মিউকরমাইকোসিসকে মহামারী আইনের আওতায় এনে ‘নোটিফায়েবল ডিজ়িজ়’ বলে ঘোষণা করা হোক। এর মধ্যে গত ১৩ মে রাজ্যে চার জন মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছিল। তাঁরা বিহার, ছত্তিসগড় ও ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা ছিলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে এই ছত্রাকের আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২৫০ জনের এমনটাই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক।

আরও পড়ুন:  বিজেপি বিধায়ক শীতল কাপাটকে দেখতে হাসপাতালে হাজির শুভেন্দু, কথা বললেন থানাতেও