Footballer from Bengal: ‘বাবাকে যেন আপসোস করতে হয়’, একরাশ অভিমান বুকে নিয়ে স্পেনের ক্লাবে ফুটবল খেলতে যাচ্ছে বাংলার প্রেমাংশু

Footballer from Bengal: বর্তমানে প্রেমাংশুর পাসপোর্ট তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। জোরকদমে চলছে প্র্যাকটিস। আর কয়েক মাস পরেই পাড়ি জমাবেন স্পেনে।

Footballer from Bengal: ‘বাবাকে যেন আপসোস করতে হয়’, একরাশ অভিমান বুকে নিয়ে স্পেনের ক্লাবে ফুটবল খেলতে যাচ্ছে বাংলার প্রেমাংশু
মা দুর্গার সঙ্গে প্রেমাংশু
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 14, 2023 | 3:30 PM

নদিয়া: বাংলার ফুটবলাররা এবার ট্রায়াল দিতে যাচ্ছেন বিদেশের মাটিতে। খবরটা শোনা গিয়েছিল আগেই। একেবারে জেলার ফুটবল ক্লাপ থেকে স্পেনের ক্লাবে ট্রায়ালের জন্য যাচ্ছেন বাংলার ৬ ফুটবলার। এঁদের মধ্য়ে ৩ জন নদিয়ার (Nadia) ৷ বাকি ৩ জন পুরুলিয়া জেলা, বেঙ্গল ফুটবল অ‍্যাকাডেমি ও ইউক্সেল স্পোর্টস ভেনচারের। এই ৬ জনের মধ্যে রয়েছেন নদিয়ার (Nadia) প্রেমাংশু। ফুটবলের দৌলতে নদিয়ায় নতুন নায়ক হয়ে উঠেছেন প্রেমাংশু। ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (Indian Football Association) উদ্যোগে স্পেনের মট্রিল ফুটবল ক্লাবে খেলতে যাচ্ছেন নদিয়ার নাজিরপুর বিদ্যাপীঠের দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া প্রেমাংশু ঠাকুর। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে আন্দ্রে ইনিয়েস্তার দেশে পাড়ি জমাবেন নাজিরপুরের প্রেমাংশু।

বাংলার প্রত্যন্ত জেলা থেকে ফুটবল প্রতিভা তুলে আনার লক্ষ্যে আইএফএ-এর সঙ্গে যৌথ স্পোর্টস ভেনচারে যোগ দেয় স্পেনের মোট্রিল ফুটবল ক্লাব। আগামী সেপ্টেম্বরে স্পেনের এই ক্লাবের অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন প্রেমাংশু ঠাকুর। মাঠে তিনি মূলত ডিফেন্ডার হিসাবেই খেলে থাকেন। স্পেনের মোট্রিল অ্যাকাডেমির প্রশিক্ষক ফেরেন্দ তোরেস ও বাংলার প্রথম প্রো লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রশিক্ষক শঙ্কর লাল চক্রবর্তী এই বাছাইয়ের দায়িত্বে ছিলেন।

শুক্রবার কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবের তাঁবুতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই ঘোষণা করা হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আইএফএ চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত, সচিব অনির্বাণ দত্ত, কোষাধক্ষ্য দেবাশিস সরকার, সহ-সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস। ছেলের সাফল্যেও কষ্টের স্মৃতি ভুলতে পারেননি মা দুর্গা সরকার। বিতাড়িত হয়েছিলেন শ্বশুরবাড়ি থেকে। বাবার বাড়িতে ফিরে ছোট্ট প্রেমাংশুকে বুকে আগলে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তখন থেকেই দাঁতে দাঁত চেপে শুরু হয়েছিল লড়াই। 

চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না মা দুর্গা

ছেলের পড়াশোনার জন্য নিয়েছিলেন অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ। পরিচারিকার কাজ করে ছেলের খাওয়া-দাওয়া ও পড়াশোনার খরচ সামলেছেন। বড় হয়ে সরকারি চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে ছেলে, এমনটাই ছিল স্বপ্ন। কিন্তু ছেলের স্বপ্ন ফুটবল। হাজার বকাবকি ও শাসনেও প্রেমাংশুর পা থেকে ফুটবল ছাড়াতে পারেনি মা। টিফিনের পয়সা জমিয়ে জুতো কিনে খেলা শুরু। দিদির জমানো টিউশনে টাকা চুরি করে প্রথম ফুটবল কেনা। স্কুল পালিয়ে ফুটবল প্র্যাকটিস। ফুটবলের প্রতি অমোঘ ভালোবাসা আজ সাফল্য এনে দিয়েছে প্রেমাংশুকে। আজ ছেলে যাচ্ছে বিদেশ। চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না মা দুর্গা। 

‘সারাদিন ফুটবল নিয়ে পাগলামি করত’

খানিক আবেগতাড়িত হয়েই দুর্গা দেবী বললেন, “নিজে না খেয়েও ছেলেকে বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করেছিলাম। সারাদিন অন্যের বাড়ি কাজ করতাম, রাতে বিড়ি বাধতাম। কিন্তু ছেলের পড়াশোনায় একটুও মন ছিল না। সারাদিন ফুটবল নিয়ে পাগলামি করত। কষ্ট হতো, ভয়ও পেতাম। কি করে খাবে? কি হবে ওর ভবিষ্যৎ? আজ ওর সাফল্যে আমি শুধু গর্বিত।”

বুকে জমা একরাশ অভিমান

বর্তমানে প্রেমাংশুর পাসপোর্ট তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। জোরকদমে চলছে প্র্যাকটিস। আর কয়েক মাস পরেই পাড়ি জমাবেন স্পেনে। বল পায়েই দাগ কাটতে চান স্পেনীয় কোচদের মনে। বিশ্ব শিখড়ে তুলে ধরতে চান ভারতীয় ফুটবলকে। এই ফুটবল পাগল প্রেমাংশু বললেন, “আমার জন্মের পর মাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল বাবা। আমি এমন সাফল্য অর্জন করতে চাই যাতে আমাদের ছেড়ে দেওয়া নিয়ে বাবাকে আফসোস করতে হয়। এই প্রতিশোধের অস্ত্র একমাত্র ফুটবল। ভাল করে ফুটবল খেলে দেশ ও রাজ্যের নাম উজ্জ্বল করতে চাই।”