Ram Mandir: জানেন এই বাংলায় ২৫৬ বছর আগেই তৈরি হয়েছিল রাম মন্দির?

Ram Mandir: তৎকালীন সময়ে এই শিবনিবাস 'কাশীতুল্য' বলে পরিগণিত হত। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র একটি বড় ৯ ফুট কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত করে নিত্যপূজো শুরু করেন। পাশেই 'রাজ্ঞীশ্বর'নামে দ্বিতীয় মন্দির এবং রাম মন্দির প্রতিষ্ঠিত করেন।

Ram Mandir: জানেন এই বাংলায় ২৫৬ বছর আগেই তৈরি হয়েছিল রাম মন্দির?
কষ্টি পাথরের তৈরি রাম-সীতার প্রতিমাImage Credit source: Tv9 Bangla
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 16, 2024 | 3:42 PM

নদিয়া: আগামী ২২ তারিখ অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন। তার জন্য চলছে জোর প্রস্তুতি। উন্মাদনাও চরমে। তবে জানেন কি এই বাংলায় ২৫৬ বছর আগেই প্রতিষ্ঠিত রাম মন্দির? আসুন জেনে নেওয়া যাক ইতিহাস।

তখন ব্রিটিশ শাসনকাল। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় সর্বপ্রথম এই রাম মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন। তবে এই মন্দির সম্বন্ধে অনেকেই হয়ত জানেন না। গুটি কয়েক মানুষের হাতে এখনও এখানে পুজিত হন কষ্ঠী পাথরের ভগবান রাম এবং সীতা।

নদিয়া জেলার মাজদিয়ার থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শিবনিবাস গ্রাম। তৎকালীন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র বাংলায় বর্গী আক্রমণের হাত থেকে রাজধানীকে রক্ষা করতে নদিয়ার সদর শহর কৃষ্ণনগর থেকে সরিয়ে শিবনিবাসে চালু করেছিলেন। সেখানেই শিবের নামে নামকরণ করেন শিবনিবাস। এখানে তিনি এক সুন্দর রাজপ্রাসাদ ও কয়েকটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখন আপাতত জীবিত অবস্থায় তিনটি মন্দির রয়েছে। এর মধ্যে দুটি শিব মন্দির ও একটি রাম মন্দির। প্রতিটি মন্দিরের উচ্চতা ৬০ফুট। এই শিবনিবাসে রাজার রাজধানী প্রতিষ্ঠার একটি কাহিনী আছে।

কথায় বলে, মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র নসরত খাঁ নামক এক দুর্ধর্ষ ডাকাতকে দমন করতে মাজদিয়ার কাছে এক গভীর অরণ্যে উপস্থিত হন। এরপর ডাকাত দমন করে সেখানে তিনি একরাত থাকেন। পরদিন সকালবেলায় তিনি যখন নদীতীরে মুখ ধুচ্ছিলেন। তখন একটি রুইমাছ জল থেকে লাফিয়ে মহারাজের সামনে এসে পড়ে। সেই সময় কৃষ্ণচন্দ্রের এক আত্মীয় তাঁকে বলেছিলেন, এইস্থান অতি রমণীয়। তাই এই স্থানে মহারাজ বাস করলে তাঁর নিশ্চয়ই ভাল হবে। মহারাজও তখন বর্গীর অত্যাচার থেকে বাঁচতে এই রকমই একটা নিরাপদ জায়গা খুঁজছিলেন। এই শিবনিবাসেই মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র মহাসমারোহে অগ্নিহোত্র ‘বাজপেয় যজ্ঞ ‘ সম্পন্ন করেন। কাশী,কাঞ্চি প্রভৃতি স্থান থেকে সেই সময় অনেক পণ্ডিত তাঁকে ‘অগ্নিহোত্রীয় বাজপেয়ী’ নাম দেন।

তৎকালীন সময়ে এই শিবনিবাস ‘কাশীতুল্য’ বলে পরিগণিত হত। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র একটি বড় ৯ ফুট কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত করে নিত্যপুজো শুরু করেন। এর পাশেই ‘রাজ্ঞীশ্বর’ নামে দ্বিতীয় মন্দির এবং রাম মন্দির প্রতিষ্ঠিত করেন।

কেমন দেখতে রাম মন্দির?

ঐতিহাসিকরা মনে করেন, মন্দিরের প্রতিষ্ঠাকাল ১৬৮৪ শকাব্দ অর্থাৎ ১৭৬২ খ্রিষ্টাব্দ। এখানে একটি প্রতিষ্ঠাফলক আছে। সেখান থেকে পাওয়া অনুযায়ী জানা গিয়েছে, মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র তাঁর দ্বিতীয়া পত্নীর জন্য  নির্মাণ করেছিলেন দ্বিতীয় মন্দির। এবং প্রথম স্ত্রী-র জন্য তৈরি করেন প্রথম মন্দিরটি।

এই মন্দিরের শিবলিঙ্গ প্রথম মন্দিরের চেয়ে কিছুটা ছোট। উচ্চতা সাড়ে সাত ফুট। এর পাশেই রয়েছে রাম-সীতার মন্দির। মন্দিরটি উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত। আংশিক দালান আকারের কোঠার উপর একটি শিখর স্থাপিত। যা অনেকটা বর্গক্ষেত্রাকার। দালানের প্রতিটি ছাদ সমদ্বিবাহু ট্রাপিজিয়াম আকৃতির। এবং গর্ভগৃহের প্রতিটি ছাদের আকৃতিও বিরল। দালান ও শিখরের খিলানগুলি গথিক রীতি অনুযায়ী নির্মিত।

বলা বাহুল্য, শিবনিবাসের এই মন্দিরগুলিতে ‘টেরাকোটা’র কোনও কাজ নেই। ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে বিশপ হেয়ার নৌকা করে ঢাকা যাওয়ার পথে এখানে নামেন। মন্দিরগুলি দেখেন। এবং মুগ্ধ হন। এই মন্দিরগুলির বিবরণ ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন থেকে প্রকাশিত জার্নালে প্রকাশ করেন।