Anubrata Mondal in Jail Custody: বীরভূমে যাব না, চাইলে নিজাম প্যালেসের আশপাশে থাকতে রাজি: অনুব্রত
Anubrata Mondal in Jail Custody: বুধবার সকালে নিজাম প্যালেস থেকে বের করার সময় বেশ ফুরফুরে মেজাজেই দেখা যায় বীরভূমের 'বেতাজ বাদশা' অনুব্রতকে। কিন্তু দিনের শেষে বদলে যায় ছবিটা।
আসানসোল : ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি পরে এ দিন নিজাম প্যালেস থেকে আসানসোলে পৌঁছন অনুব্রত। মাঝে শক্তিগড়ে পুরি-তরকারির ‘ব্রেক’। ফাঁকে ফাঁকে সাংবাদিকদের উত্তরও দেন চেনা মেজাজে। আদালত কক্ষে প্রবেশ করার পরও তাঁর ‘মুড’ বলে দিচ্ছিল, এক আত্মবিশ্বাস কাজ করছে বীরভূমের তৃণমূল নেতার মধ্যে। এদিক-ওদিক দেখছিলেন, কারও কারও সঙ্গে ইশারায় কথাও বলছিলেন তিনি। তারপর বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীর এজলাসে টানা ১ ঘণ্টার টানটান সওয়াল-জবাব চলে আসানসোল সিবিআই আদালতের কক্ষে। আর রায় দেওয়ার পরই উধাও সেই চনমনে মেজাজ। বুধবার অনুব্রত মণ্ডলকে আদালত থেকে বের করে যখন আসানসোল জেলে নিয়ে যাওয়া হল, তখন মানসিক বিপর্যয়ের ছাপ তাঁর চোখে-মুখে স্পষ্ট।
মন দিয়ে সওয়াল-জবাব শুনলেন অনুব্রত
অনুব্রত বলতে এক দাপুটে চেহারাই চেনে বাংলার রাজনীতি। গরু পাচার-কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ার পরও তাঁর মেজাজে খুব বেশি বদল আসেনি। যখনই নিজাম প্যালেস থেকে বের করা হয়েছে, তখনই সাংবাদিকদের জবাব দিয়েছেন তিনি। এ দিন সকালেও তেমনটাই দেখা যায়। আদালত কক্ষে একটি বেঞ্চে তাঁর বসার ব্যবস্থা ছিল এ দিন।
প্রথমে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন ও পরে বিচারকের সামনে গিয়ে হুমকি চিঠির ঘটনায় তদন্তের আর্জি জানান অনুব্রত। তাঁর জন্য় আদালতে আসে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, ইনহেলার। সে সবের অবশ্য প্রয়োজন পড়েনি। দু’পক্ষের সওয়াল জবাব মন দিয়ে শোনেন তিনি। কোথাও বুঝতে না পারলে আশপাশে কাউকে জিজ্ঞাসাও করে নিতে দেখা যায় তাঁকে। তবে তাঁর মেজাজ বলে দিচ্ছিল, এ দিন অব্যাহতি পাওয়ার আশা করেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর জামিনের আর্জি খারিজ হয়ে যায়। এরপর জেলে নিয়ে যাওয়ার সময় অনুব্রত আর কোনও কথা বলেননি। উধাও হয়ে যায় সকালের সেই মেজাজ।
টার্গেটেট ইনভেস্টিগেশন…
যে কোনও শর্তে এ দিন জামিনের আবেদন করেছিলেন অনুব্রত। তাঁর আইনজীবীরা আদালতে এ দিন বলেন, ‘এখনও তদন্তে বিশেষ কিছু পাওয়া যায়নি। এটা একটা টার্গেটেট ইনভেস্টিগেশন। একটা রাজনৈতিক দল, যারা কেন্দ্রে ক্ষমতায় আছে তারাই এটা করাচ্ছে। রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই তদন্ত করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়। এটা ষড়যন্ত্র।’
জবাবে সিবিআই সাফ জানায়, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, এমন কোনও প্রমাণ দেখানো যাবে না।
সীমান্তে থাকে বিএসএফ
অনুব্রতর আইনজীবী আরও দাবি করেন, এখনও কোনও তথ্য পায়নি সিবিআই। তাঁরা উল্লেখ করেন, গরু পাচার হত মুর্শিদাবাদ সীমান্ত থেকে। আর সীমান্তে থাকে বিএসএসফ। এর সঙ্গে তাঁর মক্কেল অর্থাৎ অনুব্রতর কোনও যোগ নেই। বিপুল সম্পত্তি পাওয়া মানেই যে সেটা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, এমনটা নয় বলেই মন্তব্য করেন আইনজীবী।
অন্যদিকে, সিবিআই উল্লেখ করে, গরু সীমান্ত পার করা হয়েছে। সেই তথ্য আছে। এর সঙ্গে বিএসএফের যোগ ছিল বলেও উল্লেখ করে সিবিআই। পাচারের ঘটনাকে ন্যাশনাল ক্রাইম বলে উল্লেখ করে সিবিআই। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, পুরনো তারিখ দিয়ে নথি তৈরি করা হয়। গরু সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দিতে সহযোগিতাও করা হত।
বীরভূমে যাবেন না… এমন শর্তও মানতে রাজি ছিলেন অনুব্রত
অনুব্রতর আইনজীবী দাবি করেন, রাজনৈতিক নেতা হিসেবে পরিচিতি আছে অনুব্রতর। কিন্তু সঙ্গে তিন জন লোক থাকলেই কেউ প্রভাবশালী হয়ে যায় না। অনুব্রতর বয়স ৬৪ বছর ৮ মাস। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ, এমন তথ্যও পেশ করা হয় এ দিন।
সব শেষে অনুব্রতর আইনজীবী সওয়াল করেন, যে কোনও শর্তে জামিন দেওয়া হোক। প্রয়োজনে অনুব্রত বীরভূমে প্রবেশ করবেন না, চাইলে নিজাম প্যালেসের আশপাশে গিয়ে থাকবেন বলেও উল্লেখ করেন আইনজীবী। কার্যত জামিন পাওয়ার মরিয়া চেষ্টা করা হয়।
সিবিআই-ও এ দিন মরিয়া ছিলেন অনুব্রতর জামিন আটকাতে। তারা সাফ জানায়, ষড়যন্ত্র করেছেন অনুব্রত, পাচারে যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে তাঁর। এই সওয়াল-জবাব শেষে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।