Durga Puja 2021: ৬০০ বছর ধরে উমারাই ব্রাত্য পুজোয়, এই রাজবাড়িতে ছড়িয়েছিটিয়ে নানা গল্পকথা…

Daspur: কথিত রয়েছে, ৮২০ বঙ্গাব্দে তৎকালীন রাজার নায়েব উদয়নারায়ণ ঘোষ পুজো শুরু করেন।

Durga Puja 2021: ৬০০ বছর ধরে উমারাই ব্রাত্য পুজোয়, এই রাজবাড়িতে ছড়িয়েছিটিয়ে নানা গল্পকথা...
নাড়াজোল রাজবাড়ি, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 09, 2021 | 12:25 AM

পশ্চিম মেদিনীপুর: পুজো হয় দেবী দুর্গার। কিন্তু, এই পুজোতে থাকতে পারেন না খোদ উমারা। তাঁরা ব্রাত্য। পুজোর দিনগুলোতে মণ্ডপ চত্বরে পা দেওয়ারও অনুমতি নেই তাঁদের। তাঁরা রাজবাড়ির রমণী।  অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন, মায়ের পুুজোয় মেয়েদের হাত থাকবে না কেন? কিন্তু, এটাই সত্যি। মায়ের পুজো, কিন্তু ব্রাত্য  মেয়েরাই। ৬০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই নিয়ম ভেঙে আসতে পারেননি কেউ। চৌকাঠে দেখানোর সাহসটুকু করেনি কোনও আলতা পরা পা। হ্যাঁ, এই একবিংশ শতকেও। দাসপুরের নাড়াজোল রাজবাড়ির কাহিনী খানিক এমনই।

কথিত রয়েছে, ৮২০ বঙ্গাব্দে তৎকালীন রাজার নায়েব উদয়নারায়ণ ঘোষ পুজো শুরু করেন। তাঁর আদি বাড়ি ছিল বর্ধমানে। নাড়াজোলের জঙ্গলে শিকারে এসে অষ্টধাতুর মূর্তি পেয়ে পুজো শুরু করেন। পরে খান উপাধি পান রাজবংশের সদস্যরা। দুর্গামন্দির প্রতিষ্ঠা করেন রাজবাড়ির ১৩তম রাজা চুনিলাল খান। রাজ পরিবারের এই অষ্টধাতুর মূর্তি আজও আছে। সঙ্গে লক্ষ্মী-স্বরস্বতী, গণেশ-কার্তিক নেই। এও শোনা যায়, দুষ্কৃতীরা তিনবার চুরির চেষ্টা করেছিল এই মূর্তি। কিন্তু সেই মূর্তি নাকি পড়েছিল জঙ্গলেই। দুষ্কৃতীরা তা আর নিয়ে যতে পারেনি।

ঘোষ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান রাজার নায়েব ছিলেন উদয়নারায়ন ঘোষ। তিনি রাজার অনুমতি নিয়ে মেদিনীপুর জেলায় স্বীকার করতে এসেছিলেন। দাসপুরের নাড়াজোল জঙ্গলে শিকার করে ফেরার পথে হঠাৎই দেখেন একটি বক তাড়া করছে রাজার সাথে থাকা বাজপাখি কে। এই দৃশ্য দেখে চমকে গিয়েছিলেন নায়েব মশাই। স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন উদয়নারায়ণ। দেবী তাঁর স্বপ্নে আবির্ভূতা হয়ে জঙ্গলে একটি অষ্টধাতুর মূর্তির কথা বলেন। সেইমতোই নাকি মূর্তি খুঁজে পান উদয়নারায়ণ। তারপর গোটা নাড়াজোল এলাকার জঙ্গল সাফাই করে বাড়ি তৈরি করেন উদয়নারায়ণ। সেখানেই প্রথম পুজোর সূত্রপাত।

পরবর্তীকালে উদয় নারায়ণ ঘোষ নাড়াজোল রাজ বাড়ির প্রতিষ্ঠা করেন। দুর্গাপুজোর যাবতীয় বিধি নিষেধ তিনি চালু করেন। আজ নাড়াজোল রাজবাড়ি ধ্বংসের পথে। কিন্তু প্রথা মেনে আজও রাজবাড়ীতে অষ্টধাতুর দুর্গা মূর্তি পূজিত হন। রাজবাড়ীতে বৈষ্ণব মতে পূজিত হন মা দুর্গা তাই নেই বলি প্রথা । আজও রাজবাড়ির মহিলারা পুষ্পাঞ্জলি দিতে পারেন না। নিতে পারেন না প্রসাদ ও বেলপাতাও। রাজবাড়ীর অষ্টধাতুর মূর্তিতে মা একাই পূজিত হন।

নাড়াজোল রাজ পরিবারের নাম জড়িয়ে দেশস্বাধীনের ইতিহাসেও। সতেরোতম রাজপুরুষ নরেন্দ্রলাল খান ছিলেন দেশপ্রেমিক। জওহরলাল নেহেরু, মহাত্মা গান্ধি, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু অনেকেই আসতেন। এমনকী আলিপুর বোমা মামলায় ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আঠেরো দিন জেলে ছিলেন নরেন্দ্রলাল খান।

রাজবাড়ির সেসব গৌরবগাঁথা এখন অতীত। কিছু স্মৃতিকথা, কিছু জনশ্রুতি, কিছু ইতিহাসের গন্ধে মাখামাখি এই প্রাচীন পল্লিনিবিড় রাজাবাড়িতে এখনও পুজো হয়। এখানের অন্দরমহলেও শরতের মেঘ উঁকি দেয়। কেবল থাকে না সিংহদুয়ার পেরনোর চাবিকাঠি।

আরও পড়ুন: Crime: সমকামিত্বের জেরেই খুন, হনুমান-হত্যাকাণ্ডে ধৃতদের যাবজ্জীবনের ঘোষণা