Seikh Sufiyan: গুরুতর অসুস্থ সুফিয়ান, ‘সিবিআইয়ের থেকে বাঁচার নাটক’, কটাক্ষ বিজেপির
Post Poll Violence: অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সম্পূর্ণ একমাসের বিশ্রামের আর্জি জানিয়েছিলেন সুফিয়ানের আইনজীবী। কিন্তু, ঠিক তার ৮ দিন পরে ১০ নভেম্বর সুফিয়ানকে দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের শহিদ সভার মঞ্চে।
পূর্ব মেদিনীপুর: ভোট পরবর্তী হিংসা তদন্তে নন্দীগ্রামে বিজেপি নেতা দেবব্রত মাইতি খুনের ঘটনায় তিন তৃণমূল নেতাকে বৃহস্পতিবারই হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। কিন্তু ওই তিন নেতা হাজিরা দেননি। এরপর আচমকা, এদিন সন্ধেবেলাতেই প্রবল বুকে ব্যথা নিয়ে নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি হলেন তৃণমূল নেতা তথা নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ান (Seikh Sufiyan)। তাঁর অসুস্থতার ঘটনাকে কটাক্ষ করল পদ্ম শিবির।
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধেতেই আচমকা প্রবল বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন সুফিয়ান। তাঁকে অক্সিজেন নল পরানো হয়। গুরুতর অসুস্থ সুফিয়ানকে সন্ধে ৬টা নাগাদ হাসপাতালে ভর্তি করার পর দ্রুত গতিতে চলে চিকিত্সা। প্রায় টানা সাড়ে ঘণ্টা পর চিকিত্সকেরা জানান, আপাতত সুফিয়ানের পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল।
এদিকে, সুফিয়ানের হাসপাতালে ভর্তি হওয়াকে কেন্দ্র করে কটাক্ষ হেনেছে পদ্ম শিবির। বিজেপি নেতা প্রলয় পালের মন্তব্য, “সিবিআইয়ের হাত থেকে বাঁচতে এখন নাটক করছেন মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী এজেন্ট।” অপরদিকে, পাল্টা, তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, সুফিয়ান বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ। তাঁর চিকিত্সার জন্য প্রয়োজনে কলকাতায় নিয়ে যেতেও প্রস্তুত দল। সুফিয়ান সিবিআইকে ভয় করেন না বলেই দাবি ঘাসফুল শিবিরের।
প্রসঙ্গত, গত ২ সেপ্টেম্বর সুফিয়ানকে সিবিআই জেরা করতে চাইলে তিনি আসেননি। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সম্পূর্ণ একমাসের বিশ্রামের আর্জি জানিয়েছিলেন সুফিয়ানের আইনজীবী। কিন্তু, ঠিক তার ৮ দিন পরে ১০ নভেম্বর সুফিয়ানকে দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের শহিদ সভার মঞ্চে। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের অন্যান্য দাপুটে নেতাও। ফলে, সিবিআই দফতরে জমা দেওয়া ডাক্তারি নির্দেশ উপেক্ষা করে কী করে তিনি শহিদ সভার মঞ্চে যেতে পারলেন এবং আচমকাই কী করে বুকে ব্যথা নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেন তা নিয়ে সরব বিরোধীরা। বিশেষ করেই আজই যখন, তিন তৃণমূল নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিবিআই দফতরে ডাকা হয়েছিল।
সিবিআই সূত্রে খবর, বুধবারই মেইল মারফত নন্দীগ্রামের তিন তৃণমূল নেতা আবু তাহের, কালিচরণপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান শেখ সাইয়ুম কাজি ও নন্দীগ্রামের ১ নম্বর ব্লকের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ শেখ খুশনবীকে-সহ আরও কয়েকজনকে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু, বৃহস্পতিবার সকালে কার্যত দেখা যায় দশটা বাজলেও সিবিআই ক্যাম্পে হাজিরা দেননি ওই তৃণমূল নেতা। কিন্তু, কেন তাঁরা আসতে পারবেন না তা স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে ওই তৃণমূল নেতাদের বারবার ফোন করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি।
আগে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সিবিআই দফতরে হাজিরা এড়িয়েছিলেন তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ান। ফের তৃণমূল নেতাদের হাজিরা না দেওয়ায় প্রশ্ন উঠছে। এর আগে দেবব্রত মাইতি খুনের ঘটনায় শেখ সুফিয়ানের জামাই-সহ মোট ১১ জন তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। সেকারণেই কি এ বার হাজিরা এড়াচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব?
যদিও তৃণমূল নেতা আবু তাহের বলেন, “নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দুর চক্রান্তে সিবিআইয়ের জালে পড়তে হচ্ছে নন্দীগ্রামের একাধিক তৃণমূল নেতাকে। তবে কী কারণে সিবিআই তলব করেছে জানা নেই। তাই কারণ জানতে চেয়ে আমি চিঠি পাঠিয়েছি। এ নিয়ে আমার মুখ্য়মন্ত্রী ও ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে কথাও হয়েছে।”
আগেই নন্দীগ্রামে ভোট পরবর্তী হিংসা তদন্তে বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতি খুনের ঘটনায় আগেই সুফিয়ানের জামাই-সহ ১১ জন তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। আগেই ওই মামলায় চার্জশিট পেশ করেছিল সিবিআই। সেই চার্জশিটে নাম ছিল শেখ ফতেনুর, শেখ মিজানুর ও শেখ ইমদুলাল ইসলাম। জিজ্ঞাসাবাদের পরেই তৃণমূল নেতার জামাইকে গ্রেফতার করা হয়।
জানা যায়, তৃণমূল নেতা সুফিয়ানের জামাই শেখ বায়তুল ইসলাম নন্দীগ্রামের দুই নম্বর অঞ্চলের প্রধান। বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতি খুনে বায়তুল ইসলামের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। তিনি ছাড়াও আরও ৯জন তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করা হলে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
ভোট পরবরর্তী হিংসা (Post Poll Violence) তদন্তে শুক্রবারই আরও একটি চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। নন্দীগ্রামে বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতি হত্যা মামলায় তিন জনের বিরুদ্ধে সেই চার্জশিটে নাম ছিল। লক্ষ্যণীয়ভাবে, এই মামলা থেকে কার্যত একরকম মুছে যায় তৃণমূল নেতা তথা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য় এজেন্ট শেখ সুফিয়ানের (Seikh Sufiyan) নাম। এই ‘বাদটুকু’ নজর এড়ায়নি রাজনৈতিক মহলের। উঠেছে নানা প্রশ্নও।
কিন্তু, সব ছাপিয়ে ফের তৃণমূল নেতাকে তলবের ঘটনায় কপালে ভাঁজ রাজনৈতিক মহলের একাংশের। একইসঙ্গে সুফিয়ানের হাজিরা না দেওয়ায় আরও জটিল হয় পরিস্থিতি। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের অনুমান, জিজ্ঞাসাবাদের দায় এড়াতেই অসুস্থতার সার্টিফিকেট জমা দেওয়া হয়েছে তৃণমূল নেতার পক্ষ থেকে।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর নন্দীগ্রামের চিল্লোগ্রামের বাসিন্দা তথা বিজেপি সমর্থক দেবব্রত মাইতিকে খুনের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সেই খুনের কাণ্ডে নাম জড়ায় সুফিয়ানেরও। নিহত দেবব্রতের পরিবার মানবাধিকার কমিশনের কাছে তৃণমূল নেতার নামে অভিযোগও দায়ের করেন।
খোদ নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্য জনসভায় স্পষ্টতই হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘অপরাধীদের প্রত্যককে খুঁজে বের করা হবে।’ এমনকী, বিজেপির তরফে অভিযোগ করে বলা হয়েছিল, দেবব্রত মাইতি খুনের ঘটনায় তৃণমূলেরই প্রভাবশালী নেতার হাত রয়েছে। এরপর সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার যাওয়ার পর তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে সিবিআই। এমনকী সুফিয়ান-সহ আরও দুই তৃণমূল নেতাকে তলব করা হয়।
টানা সাড়ে চারঘণ্টার ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর সুফিয়ান নিজেই জানান, তিনি সবরকমভাবে তদন্তকারীদের সাহায্য করবেন। একইসঙ্গে এও অভিযোগ তোলেন যে বিজেপি বিধায়কের অঙ্গুলিহেলনেই সুফিয়ানকে তলব করা হয়েছে। এমনকী, নিহত দেবব্রত মাইতি তৃণমূলের সমর্থক বলেও দাবি করেন এই দুঁদে তৃণমূল নেতা।
এরপর, তদন্ত এগোলেও যখন কার্যত চার্জশিট পেশ হয় তখন দেখা যায় সেখানে অভিযুক্তের তালিকায় তো বটেই এমনকী সন্দেহভাজনের তালিকা থেকেও বাদ গিয়েছেন সুফিয়ান। শুধু সুফিয়ান নন, বাদ গিয়েছেন অন্য দুই তৃণমূল নেতাও যাঁদের সুফিয়ানের সঙ্গে একই দিনে তলব করা হয়েছিল। বদলে প্রকাশ্যে এসেছে তিনটি নতুন নাম। শেখ ফতেনুর, শেখ মিজানুর ও শেখ ইমদুলাল ইসলাম। যদিও এখনও এদের রাজনৈতিক কোনও পরিচয় সামনে আসেনি। কিন্তু, পরে সম্পূর্ণ বদলে যায় ছবিটা। খোদ তৃণমূল নেতার জামাইকে গ্রেফতার করায় কার্যত রাজনৈতিক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
আরও পড়ুন: BSF: ‘মহিলাদের শ্লীলতাহানি করা হয় না, সবটাই ভিত্তিহীন অভিযোগ’